প্রথমে নিজের পারিবারিক কথা বলি। আমার বাবা ছিলেন বিবিসি বাংলার ভক্ত। তিনি শর্টওয়েভে বিবিসি বাংলার অনুষ্ঠান শোনার সময় হঠাৎ হঠাৎ শব্দ কমে যেতো। তখন দেখতাম তিনি রেডিও সেটটি বাঁকা তেরা করে শব্দ স্পষ্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন।রেডিওর ছোটো অ্যান্টিনা বারবার এদিক সেদিক ঘোরাচ্ছেন।
প্রশ্ন হলো বাবা কেন বিবিসি বাংলার ভক্ত ছিলেন? তিনি বলতেন, পূর্ব পাকিস্তানের মিডিয়া একচোখা। তখন তার কথা অত বুঝতাম না। কলকাতার কাচরাপাড়ায় অবিভক্ত বাংলায় বাবার কর্মজীবন শুরু। তারপরই দেশভাগ। নিজেদের প্রান্তে ফিরে আসা এবং পাকিস্তান রেলওয়েতে পুনর্বাসন। বলা ভালো আমাদের গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ি জেলার কালুখালি। অবিভক্ত বাংলায় শিয়ালদা থেকে গোয়ালন্দ সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ ছিল। আমাদের এলাকায় সকালের ট্রেনে কলকাতার আনন্দবাজার, অমৃতবাজার,বসুমতী ও যুগান্তর চলে আসতো।
আমি বড় হওয়ার পর বাবার বিদেশী রেডিও শোনার রোগ আমার উপরেও ভর করলো। শর্টওয়েভে বিবিসি বাংলা শুনি, ভয়েস অফ আমেরিকা শুনি। আকাশবাণী কলকাতার সংবাদ পরিক্রমা তখন একটি প্রিয় অনুষ্ঠান। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় এক প্রিয় ব্যক্তিত্ত্ব। ১৯৭১ সালে কত কষ্ট করে স্বাধীন বাংলা বেতার শুনতাম আর উদ্দীপ্ত হতাম- সে ছিল আরেক ইতিহাস। কষ্ট বলছি এজন্য, শব্দ ছিল ক্ষীণ। অথচ আমার শুনতেই হবে। পারলে রেডিও সেট ভেঙ্গে তার ভিতর ঢুকে যাই।
বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। আমি পুরোদস্তর গণমাধ্যম কর্মী। লবণ নিয়ে রিপোর্ট
করায় আমাদের পূর্বদেশ পত্রিকা থেকে দুই সিনিয়র সহকর্মী বার্তা সম্পাদক মীর নুরুল ইসলাম ও সিনিয়র রিপোর্টার হোসেন তওফিক চৌধুরীর চাকরি চলে গেল। আমরা ভীত সন্ত্রস্ত। তখন ফুঁসে উঠেছে ইউনিয়ন। কেননা ওই ইউনিয়ন এখনকার মতো বিভক্ত নয়। নেতাদের ফেসভ্যালু অনেক। তাদের মেরুদন্ড ছিল শক্ত। নির্মল সেন,কামাল লোহানী, আহমদ হুমায়ুন, আনোয়ার জাহিদ।ইকবাল সোবহান চৌধুরী, রিয়াজউদ্দিন আহমদ, সৈয়দ জাফর তখন পরের কাতারে। শক্ত ইউনিয়নের নেতারা সদস্যদের চাকরির নিশ্চয়তা বিধানে ছিলেন আপসহীন। তাদের কারণেই মীরভাই ও তওফিক ভাই পুনর্বহাল হলেন।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা থেকে আমাদের নয়জনকে একদিনে বাদ দিয়ে দেওয়া হলো। আমরা গেলাম সাংবাদিকদের ‘অভিভাবক’ ইকবাল সোবহান চৌধুরীর কাছে। তিনি বললেন, আপনাদের বাদ দেওয়ার পর বাসস ইউনিট একটি নিন্দা প্রস্তাব নিয়েছে-এমন একটি কপি আমাকে দিন। আমি কীসের ভিত্তিতে কথা বলব? আমরা নয়জনই ইউনিটের সদস্য। অথচ অবাক কান্ড সেদিন ইউনিট এঘটনার প্রতিবাদকরে নি। আমাদের কিছুদিন নাকে মুলো ঝুলিয়ে রাখা হয়। তারপর বিষয়টি তামাদি হয়ে যায়। বিভক্ত ইউনিয়ন নেতৃত্বের এই হলো চরিত্র।
বলছিলাম,বাংলাদেশে বিদেশী গণমাধ্যমের জনপ্রিয়তার কথা। খবরের পেছনের খবর ভাল করে জানার জন্য বিবিসি বাংলার খবর আগাগোড়াই শুনতাম। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে ওআইসি সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন-সেসময় এ খবরটা লোকাল মিডিয়া ব্রেক করতে পারেনি। ব্রেক করেছিল। বিবিসিই। অনেক পরে তৎকালীন প্রেস সেক্রেটারি ্আমিনুল হক বাদশা ভাইর কাছে শুনেছিলাম: খবরটা বিবিসিকে কীভাবে দেয়া হয়েছিল। তাই ভাবি, বিবিসির ক্রেডিবিলিটি বাড়বে না কেন?
বাংলাদেশ টেলিভিশনের খবর কখনোই আমাকে টানতো না। তবে যখন একুশে টিভি চালু হলো-অন্য অনেকের মতো আমিও এই বেসরকারী টিভির ভক্ত হয়ে গেলাম।তাদের নিউজ উপস্থাপনা নি:সন্দেহে ভাল ছিল। বিটিভি ততদিনে সাহেব বিবি গোলামের বাক্স হিসেবে কুখ্যাত। এটা দেশের জন্য ভাল কথা নয়।
এখন দেশে ৩০টি বেসরকারী টিভি। কিন্তু একটি টিভিও আমাকে টানে না। তাই বলে কি আমি খবর দেখি না। খুব দেখি। প্রথম প্রথম টকশো দেখতাম। যারা অংশ নিতেন সমাজে তাদের ক্রেডিবিলিটি ছিল। আমিতো তার কথাই শুনবো যার কাছে শেখার আছে। যেমন সাবেক সচিব মহিউদ্দিন আহমদ। তার কথা শুনলে আমি সমৃদ্ধ হই।কিন্তু আজকাল যারা টকশোতে আসেন-তাদের কাছে আমার কিছু শেখার নাই। তারা আপ্রাসঙ্গিক কথা বেশী বলেন। বরং আমাকে টানে, শুধু টানে না-ভীষণ ভাবে টানে কলকাতার আনন্দ নিউজ লাইভ বাংলা । তাতে সুমনের‘ ঘন্টাখানেক’ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখি।সুমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় মমতা ক্ষেপে গেলেন এক পর্যায়ে। কারণ তার উত্থাপিত প্রশ্নে তোষণ বা চাটুকারিতা ছিল না। সোজাসাপ্টা কঠিন প্রশ্ন। বাংলাদেশী সাংবাদিকরা প্রশ্ন করার আগে একপ্রস্থ তোষণ করেন। তেমন নয়। ধারালো প্রশ্ন অথচ কত সহজভাবে করা যায় শিখতে হলে সুমন আনন্দ টিভিতে শোভন ও বৈশাখীর যে সাক্ষাৎকার নেন তা দেখতে হবে।। শেখার জন্য হলেও ঢাকার সাংবাদিকদের দেখা উচিত। ‘হঠাৎ যদি উঠলো কথা’ নামের কলকাতার এক অনলাইন অনুষ্ঠান আমার অত্যন্ত প্রিয় এপিসোড।কলকাতার টিভি অনুষ্ঠান ও টকশো ভাল লাগে অথচ ঢাকার টকশো হলে আজকাল আমি কেন রিমোট টিপে টিভি বন্ধ করে দিই, এ উত্তর কি আমার কাছে নেই? অবশ্যই আছে।কিন্তু প্রকাশ করি না। প্রকাশ করি না টাইমস অফ ইন্ডিয়া ও দি ডন–এই দুই পত্রিকার অনলাইন এডিশন না পড়ে আমি সকালে নাস্তার টেবিলে যেতে পারি না। বাংলাদেশের ডেইলি স্টারও আমার প্রিয় পত্রিকা। যদিও পত্রিকাটি টাইমস অফ ইন্ডিয়া বা ডনের সমকক্ষ নয়।তবে বাংলাদেশে এটা যে এক নম্বর পত্রিকা তাতে আমার কোনো দ্বিমত নাই। বাংলাদেশের অনেক পত্রিকাই আবার এর সমকক্ষ নয়।
আমাদের চোখের সামনেই চলে এলো রেডিওর এফএম সার্ভিস। রেডিওর মিডিয়াম ওয়েভের চেয়েও স্পষ্ট এই এফএম সার্ভিস।শটওয়েভ ওয়ান ও শটওয়েভ টু এর দিন অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এফএম সার্ভিস আসার পর বিবিসি বাংলার জনপ্রিয়তা আরো বাড়লো। কিন্তু অনলাইন সার্ভিস চলে আসার পর বিবিসি প্রথম এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতার মুখে পড়ে। তারা অনুষ্ঠান সম্প্রচার সময় কমিয়ে ফেলে। তবে বিবিসির অনলাইন বাংলা সার্ভিস আগের মতো ক্ষিপ্র নয় বলেই আমার ধারণা।
দেশে এখন ২৬টি বেসরকারী রেডিও। অথচ রেডিও সেট যাদুঘরে রাখার মতো সময় চলে এসেছে। ২৬টি বেসরকারী রেডিওর মধ্যে একটিও জনপ্রিয় নয়।
এতো গুলি কথা বলার কারণ আজ বিবিসি বাংলা অনলাইনের একটি খবর। খবরটি নিচে দিয়ে দিচ্ছি।
বাং লাদেশের গণমাধ্যমে গভীর সংকট: কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর ভয় তৈরি হয়েছে
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে সংকট গভীর হচ্ছে বলে এই মাধ্যমের কর্মীদের অনেকে বলছেন।
এই সংকট যখন গভীর হচ্ছে, সেই প্রেক্ষাপটে তাদের মাঝে চাকরি হারানোর একটা ভীতিও তৈরি হয়েছে।
কিন্তু কেন এই সংকট-তা নিয়ে চলছে নানা বিশ্লেষণ।
তনুশ্রী রায় একটি বেসরকারি টেলিভিশনে সংবাদ বিভাগ থেকে চাকরি হারিয়েছেন ছয় মাস আগে। এখনও তিনি চাকরি পাননি।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সংবাদপত্র বা অনলাইন-এসব বিভিন্ন শাখায় চাকরি খুঁজতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর অর্থনৈতিক সংকটের কথা তাকে শুনতে হচ্ছে।
মিজ রায় যে টেলিভিশনে কাজ করতেন, সেই বেসরকারি চ্যানেলের সংবাদ বিভাগেই বেশি ছাঁটাই করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে তিনি সহ ৩২ জনকে বিদায় করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
তনুশ্রী রায় জানিয়েছেন, টিভি চ্যানেলটির পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক সমস্যার জানিয়ে তাদেরকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিল এবং সেটা করতে তারা বাধ্য হয়েছেন।
কারণ, চ্যানেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের ঘাড়ে দায় রাখেননি।
আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল তাদের বার্তা বিভাগই বন্ধ করে দিয়েছে কয়েকমাস আগে।
বেসরকারি রেডিওগুলোরও একই অবস্থা দাঁড়িয়েছে।
বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে সংবাদসহ বিভিন্ন বিভাগে কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে।
বিভিন্ন সংবাদপত্রেও অনেকে চাকরি হারিয়েছেন গত কয়েক মাসে।
বেশিরভাগ বেসরকারি টেলিভিশনে নিয়মিত বেতনও হচ্ছে না।
বিভিন্ন টেলিভিশনের কয়েকজন কর্মীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে, নিয়মিত বেতন না পাওয়া, চাকরি হারানোর ভয়সহ চরম সংকটে তারা রয়েছেন।
তারা বলছেন, শুধু সাংবাদিকরাই নন, গণমাধ্যমে কর্মরত সবার একই অবস্থা।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় বিকাশ বেশি হলেও সেখানে সংকট কেন?
গত দুই দশকে গণমাধ্যমে পরিবর্তন যা হয়েছে, তার বড় দিক হচ্ছে বেসরকারি টেলিভিশন-রেডিও’র সংখ্যা অনেক বেড়েছে।
এখন ৩০টি বেসরকারি টেলিভিশন চালু রয়েছে। আরও ১৫টি সম্প্রচারে আসার অপেক্ষায় আছে।
২৬টি বেসরকারি রেডিও চালু রয়েছে। প্রত্যেক জেলায় কমিউনিটি রেডিও তো আছেই।
কিন্তু টেলিভিশন রেডিও’র লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক পরিচয়কেই মুল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এমন অভিযোগ বেশ জোরালো।
বাংলাভিশনের বার্তা বিভাগের প্রধান মোস্তফা ফিরোজ বলেছেন, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার মালিকদের রাজনৈতিক পরিচয় এবং সরকারি চাপের কারণে এই মাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। ফলে মানুষ একেবারে আস্থা হারিয়ে ফেলেছে বলা যায়।
তিনি আরও বলেছেন, “সরকারের চাপ দেখা যায় না। কিন্তু সেটা দৈত্য বা ভূতের মতো এই মাধ্যমের সবকিছুতেই খড়গ হস্ত চালাচ্ছে। সেজন্য বেসরকারি সব টেলিভিশনের নিউজ, টকশো বা অন্য অনুষ্ঠান – সব একই রকম।কোন টেলিভিশনকে আলাদা করে তার বৈশিষ্ট্য বের করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষ চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে।”
মোস্তফা ফিরোজের বক্তব্য হচ্ছে, ভাল বা ভিন্ন কিছু না পেয়ে মানুষ ভারতের টেলিভিশনগুলোর প্রতি ঝুঁকেছে এবং ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যম এখানে জনপ্রিয় হয়েছে।
ফলে বিজ্ঞাপনদাতারা ভারতীয় চ্যানেল বা সামাজিক মাধ্যমে যাচ্ছে। আর এ কারণে বাংলাদেশের মিডিয়া অর্থ সংকটে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।
আরেকটি বেসরকারি টেলিভিশনের ঊর্ধ্বতন একজন নারী কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মালিকদের রাজনৈতিক পরিচয়ই যেহেতু মুল বিষয় হিসেবে বিবেচনা করা হয়, সেটা সংকটের একটা বড় কারণ বলে তিনি মনে করেন।
এমন বক্তব্যের ক্ষেত্রে এই টিভি কর্মকর্তার যুক্তি হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিচয়ে লাইসেন্স নেয়ার পর সেই ব্যক্তি অন্য ব্যবসার ঢাল হিসেবে তার মিডিয়া চালু করছেন। কিন্তু তাতে বড় বিনিয়োগ না করে এখন কোনভাবে একটা প্রতিষ্ঠান চালু রাখছেন।
মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকেও এখনকার সংকটকে স্বীকার করে এর জন্য বিজ্ঞাপনের ছোট বাজারকে দায়ী করা হচ্ছে।
ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কর্মীদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা না থাকা এবং সরকারের চাপের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারে ইলেকট্রনিক মিডিয়া মানুষের আস্থা হারিয়েছে। এছাড়া অর্থ সংকটসহ সব মিলিয়ে ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সংকট দিনে দিনে বেশি গভীর হচ্ছে বলে এর সাথে জড়িতরা বলছেন।
সরকার এসব বক্তব্য মানতে রাজি নয়। সরকারের পক্ষ থেকে টেলিভিশন রেডিও’র সংখ্যা বৃদ্ধিকেই ইতিবাচক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।
একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক বলেছেন, নানামুখী চাপের কাছে এখন অনেক ক্ষেত্রেই সমঝোতা করে চলতে হচ্ছে। ফলে সংবাদপত্রের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস কমছে।
প্রিন্ট মিডিয়া কি শক্ত অবস্থান নিয়ে টিকে থাকতে পারবে?
একটি দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক বলেছেন, নানামুখী চাপের কাছে এখন অনেক ক্ষেত্রেই সমঝোতা করে চলতে হচ্ছে। ফলে সংবাদপত্রের প্রতিও মানুষের বিশ্বাস কমছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই সম্পাদক তাদের মাধ্যমে সংকটের বড় কারণ হিসেবে দেখেন সরকারের চাপকে।
সংবাদপত্রে জড়িতদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, সংবাদপত্রে এখনও সরকারি বিজ্ঞাপনকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া এখন সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দিয়ে কোন-কোন পত্রিকায় বড়-বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বন্ধ করার অভিযোগও রয়েছে।
সংবাদপত্রের সাথে জড়িত ঊর্ধ্বতন এবং এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের রাজনৈতিক পরিচয়ও একটি বিষয় হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সংবাদকর্মীদের অনেকের বক্তব্য হচ্ছে, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ভিড়ের মাঝেও সংবাদপত্র কিছু আস্থা নিয়ে টিকে ছিল। এখন সামাজিক মাধ্যমের কারণেও সংবাদপত্র শিল্প বড় সংকটের মুখে পড়েছে।
কোন ঘটনা ঘটলে মুহূর্তেই মানুষ এখন ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে তা পাচ্ছে। ফলে ২৪ঘন্টা অপেক্ষা করে পরদিন গিয়ে সেই সংবাদ দেখার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিকেও সংবাদমাধ্যমের সংকটের একটা অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা হয়।
ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোর মধ্যে কয়টি পত্রিকার কর্মীরা ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতন পান-সেই প্রশ্ন অনেকে তোলেন। সেই সংখ্যা নগণ্যই বলা হয়।
তবে এবার কয়েকমাস আগেও প্রথম আলো’র মতো অর্থনৈতিকভাবে ভাল অবস্থান থাকা পত্রিকা থেকেও সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শাখার বেশ কয়েকজনকে ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অনেক পত্রিকা থেকেই লোকবল ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। সংবাদপত্রেও একটা চরম সংকট দৃশ্যমান হচ্ছে।
অনলাইনের বিকাশের যুগে এই মাধ্যমও সংকটে পড়েছে
বাংলাদেশের অনলাইনের সঠিক কোন সংখ্যা নেই। প্রথমবারের মতো এগুলোর নিবন্ধনের জন্য সরকার আবেদনপত্র নিয়েছে।
তাতে আড়াই হাজারের বেশি আবেদন জমা পড়েছে বলে জানা গেছে।
এই মাধ্যমের সাথে জড়িতদের অনেকে বলেছেন, হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইন পোর্টাল মানুষের আস্থা পেয়েছে। ফলে তারা ভাল বিজ্ঞাপন পেয়ে লাভবানও হচ্ছে। কিন্তু বেশিরভাগ অনলাইনই এখনও সেভাবে আস্থা অর্জন করতে পারেনি এবং সেটাই এই মাধ্যমের সংকটের একটা বড় কারণ।
একটি অনলাইন পোর্টালের একজন সম্পাদক বলেছেন,অনলাইনেও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ বা কাজ করার ক্ষেত্রে তাদের হিমশিম খেতে হয়। ফলে তারাও আস্থার সংকটে পড়ছেন এবং সেজন্য বিজ্ঞাপন যাচ্ছে হাতেগোনা কয়েকটি অনলাইনের কাছে।
ফলে বেশিরভাগ অনলাইন পোর্টাল অর্থ সংকটে রয়েছে। এই মাধ্যমেও বড় কয়েকটি অনলাইন থেকে কর্মী ছাঁটাই হয়েছে।
বিজ্ঞাপনের বাজার
টেলিভিশন, রেডিও, পত্রিকা এবং অনলাইন-পুরো গণমাধ্যমই তাদের আয়ের মুল উৎস বিজ্ঞাপন নিয়ে নানা অভিযোগ তুলছে।
তাদের ছোট এই বাজারে এখন অনেক মিডিয়া ভাগ বসাচ্ছে। তাছাড়া বিজ্ঞাপন এখন ভারতেও চলে যাচ্ছে।
টেলিভিশনগুলো সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিজ্ঞাপনের বাজার। এর মাঝে ৫০০ কোটি টাকার বেশি অর্থে বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেল এবং ইউটিউব, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমে চলে যাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিই তাদের সংকট গভীর করে তুলছে।
বিশ্লেষকরা কি বলছেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ এবং সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক কাবেরী গায়েন বলছিলেন, বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনের বাজার খুবই ছোট। আর গণমাধ্যম বিশ্বাসযোগ্যতার সংকটে পড়ছে-এই দু’টি বিষয়ই সত্য।
তিনি আরও বলেছেন, সরকারের সাথে সমঝোতার বিষয় যেমন রয়েছে, একইসাথে গণমাধ্যমকে এখন কর্পোরেট হাউজের সাথেও সমঝোতা করে চলতে হচ্ছে।
তবে তিনি মনে করেন, সামাজিক মাধ্যমের কারণে সারাবিশ্বেই আনুষ্ঠানিক গণমাধ্যমে একটা অস্থিরতা চলছে।
সরকারি কর্মকর্তারা মিডিয়ায় কোন সংকট হচ্ছে, সেটা মানতেই রাজি নন।
এদিকে সাংবাদিকদের অনেকে বলছেন, বেতন না বাড়া, নিয়মিত বেতন না পাওয়া এবং চাকরি হারানোর ভয়-এসব সংকট অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা হচ্ছে কিনা- এই প্রশ্নও তাদের মাঝে রয়েছে।
কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ে কোন প্রশ্নেরই জবাব তারা পাচ্ছেন না।