বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভের পর সরকারের বর্তমান মেয়াদের তিন বছর পূর্তিতে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে রাখা ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে ও যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে করোনা মহামারি মোকাবিলায় ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ানসহ সম্মুখসারির যারা মারা গেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোক-সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে এক গভীর সংকটের মধ্য দিয়ে আমাদের বিগত ২০২০ এবং ২০২১ সাল অতিক্রম করতে হয়েছে। সেই সংকট এখনো কাটেনি। এর মধ্যেই আবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নতুন করে করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। আমাদের এখনই সাবধান হতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। যারা টিকা নেননি তাদের দ্রুত টিকা নেওয়ার অনুরোধ জানাই।
দেশে এখন পূর্ণোদ্যমে কোভিড-১৯ টিকাকরণের কাজ চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি মাস থেকে গণটিকা প্রদানের মাধ্যমে প্রতিমাসে ১ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৯৫ লাখ ৮০ হাজার ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম ডোজ পেয়েছেন প্রায় ৭ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আর দুই ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার। গতমাস থেকে বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। বর্তমানে আমাদের হাতে সাড়ে ৯ কোটিরও বেশি ডোজ টিকা মজুত আছে।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি বিশ্ব অর্থনীতিতে এক গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করেছে। অনেক দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। আমাদের অর্থনীতিও ক্ষতির মুখে পড়েছে। নেমে এসেছিল স্থবিরতা। তবে, আপনাদের সহায়তায় আমরা তা অনেকটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন নীতি-সহায়তা এবং বিভিন্ন উদার-নৈতিক আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ প্রদানের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছি। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে অক্টোবর পর্যন্ত ১ লাখ ৬ হাজার ৫২২ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। যা মোট বরাদ্দের ৫৬.৭৬ শতাংশ। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিতে এসে শুরুতে বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের তৃতীয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আমি দেশবাসীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনাদের খ্রিষ্টীয় নতুন বছর ২০২২-এর শুভেচ্ছা।
প্রধানমন্ত্রী ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং ২ লাখ নির্যাতিত মা-বোনের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম জানান।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে নিহত পরিবারের সদস্যদের কথাও প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করেন। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে হত্যাকাণ্ডের শিকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের কথা স্মরণ করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা।
এছাড়া, উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক ও গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান শেখ হাসিনা।
২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের ‘অগ্নি সন্ত্রাসে’ যাদের প্রাণ গেছে, তাদের স্মরণ করার পাশাপাশি আহত ও স্বজনহারা পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানান তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিসহ যারা মারা গেছেন, তাদের সবার আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পাওয়ার পর টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশে টানা এত দিন ক্ষমতায় থাকার রেকর্ড কারও নেই।