Home First Lead এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়

এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়

গোলাম রহমান

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা:কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, এখন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির সময় নয়। জনজীবন যখন দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বোগতিতে জড়জড়িত, সে সময় জ্বালানি তেল, গ্যাস অথবা বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি আগুনে ঘি ঢালা হবে । ক্যাবের হিসাব মতে এক শতাংশ মূল্য বৃদ্ধিরও প্রয়োজন নেই।

আজ বুধবার  ক্যাব-এর উদ্যোগে ‘ন্যায্যতা উপেক্ষা করে গ্যাস বাণিজ্য কার স্বার্থে’ শীর্ষক একটি অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে

তিনি সভাপতিত্ব করেন। তিনি বলেন, সরকার যদি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতে না চায় তাহলে সরকারের যে সংস্থাগুলো গ্যাসের দাম বৃদ্ধির জন্য বিইআরসিতে প্রস্তাব দিয়েছে তা যদি আলোচনা না করে, যৌক্তিকতা বিচার না করেই একটি আদেশ দিয়ে দেয় তাহলে সেটি জনগণের কাজে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভাবমুর্তি খুন্ন হবে।

তিনি বলেন, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে জনগণের উপর বোঝা চাপিয়ে দিয়ে সবাই লাভবান হতে যাচ্ছে। গ্যাসের দাম বাড়ানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থ্যা প্রস্তাব করেছে। তবে ক্যাবের হিসাব মতে এক শতাংশ মূল্য বৃদ্ধিরও প্রয়োজন নেই। বরং দাম কমানোর সুযোগ রয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিনটি কুপ খনন করলে একটিতে গ্যাস পাওয়া যায়। অর্থাৎ এখানের প্রটেনশিয়ালিটি অনেক বেশি।  আমরা এই প্রটেনশিয়াল শক্তিকে কেন ব্যবহার করছি না। এর সদুউত্তর সরকারের কর্তাব্যক্তিরা দিতে পারে। আমাদের কাছে এটিকে গোলকধাদা মনে হয়।

তিনি বলেন, সমুদ্র থেকে আমাদের পাশের দেশ ভারত, মিয়ানমার গ্যাস উত্তোলন করছে। আমরা সমুদ্র জয় করলাম কিন্তু সমুদ্রের যে সম্পদ তা আহরণ করে জনগণের সেবায় ব্যহারের যে প্রচেষ্টা আমরা তা দেখছি না।

গ্যাস উন্নয়নের তহবিল নিয়ে ক্যাবের সভাপতি বলেন, যে উদ্দেশ্যে গ্যাস উন্নয়ন তহবিল গঠন করা হয়েছে, গ্যাস উন্নয়নের তহবিল যেন সেই উদ্দেশ্যে ব্যয় করা হয়। তাতে জ্বালানি নিরাপত্তা বাড়বে। ভোক্তা স্বস্তিতে থাকবে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাস সরবারহ এবং উৎপাদনে বাংলাদেশ একটি মাত্র পায়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে। কোন কারণে সেটি অকেজো বা সমস্যা হলে কি হবে তা কল্পনা করা যায় না। সেভরনের বিবিয়ানা গ্যাস প্ল্যান্টে সমস্যা হলে সারাদেশেই গ্যাস সংকট দেখা দিবে।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন ক্যাবের সাংগঠনিক সম্পাদক ড. সৈয়দ মিজানুর রহমান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এম শামসুল আলম।

তিনি বলেন, বিগত ২১-২৪শে মার্চ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবসমূহের ওপর বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক আয়োজিত গণশুনানি হলো। তাতে ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার পেট্রোবাংলা ভারিত গড়ে ১১৭ শতাংশ  বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। বিইআরসি’র কারিগরি কমিটি ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। ক্যাব ১ দশমিক ৬৫ শতাংশ (প্রতি ঘনমিটারে ০.১৭ টাকা) কমানোর প্রস্তাব করেছে এবং সকল শ্রেণির ভোক্তাদের জন্য বিদ্যমান মূল্যহার ৯ দশমিক ৬৯ টাকা বহাল রাখতে বলেছে। তবে গ্যাস তছরুপ প্রতিরোধে মাসিক ৭৭ ঘনমিটারের পরিবর্তে ৪০ ঘনমিটার ব্যবহার ধরে মিটারবিহীন আবাসিক গ্রাহকদের চুলাপ্রতি গ্যাসের মূল্যহার কমানোর এবং কস্ট প্লাস-এর পরিবর্তে আগামী শুনানি না হওয়া পর্যন্ত জিটিসিএল-এর সঞ্চালন চার্জ ও তিতাসের বিতরণ চার্জ মুনাফা ব্যতীত শুধুমাত্র কস্ট-এর ভিত্তিতে নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে ক্যাব।

‘পেট্রোবাংলার প্রস্তাবে এসওসি’র (দেশি কোম্পানি) গ্যাস ক্রয় মূল্যহার ৬০ শতাংশ এর অধিক এবং লাইসেন্সিগণের প্রস্তাবে সঞ্চালন ও বিতরণ চার্জহারযথাক্রমে ১২৯ শতাংশ ও ১২০-৪০০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। গণশুনানিতে পেট্রোবাংলাসহ কোনো লাইসেন্সিই তাদের কোনো প্রস্তাব ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ করতে পারেনি। ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যহার ২০ শতাংশ বৃদ্ধির ব্যাপারে কারিগরি কমিটির প্রস্তাবও ন্যায্য ও যৌক্তিক বলে প্রমাণ হয়নি

এরপরও ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ হবে। বিইআরসি’তে সেই প্রস্তুতি চলছে। ভোক্তারা আশঙ্কা করে, বরাবরের মতো মূল্যবৃদ্ধির আদেশে গণশুনানি ‘প্রহসনে’ পরিণত হবে।’

তিনি বলেন, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পের পণ্য আমদানিতে ১,১৯,৩৮,৪৮৫ ডলার পরিমাণ অর্থের কাস্টমস সার্টিফাইড বিল অব এন্ট্রি জমা হয়নি বিধায় ওই পরিমান অর্থ রি-গ্যাসিফিকেশন চার্জহার নির্ধারণে সমন্বয় না করা এবং শেয়ারহোল্ডারদের বিনিয়োগের ওপর ১৮ শতাংশ সুদ প্রদানের পরিবর্তে অন্যান্য ক্ষেত্রের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ৭ শতাংশ এর বেশি সুদ গ্যাসের মূল্যহারে সমন্বয় না করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ২০২১ সালে এলএনজি রি-গ্যাসিফিকেশন এবং পেট্রোবাংলার এলএনজি অপারেশনাল চার্জহার ছিল যথাক্রমে ১.২৭ টাকা ও ০.১৬ টাকা। কারিগরি কমিটি প্রস্তাব করে যথাক্রমে ২.১৭ ও ০.২৯ টাকা। উভয় ক্ষেত্রেই চার্জবৃদ্ধির এমন অসামঞ্জস্য প্রস্তাব ন্যায্য ও যৌক্তিক নয় বিধায় তাতে ক্যাবের আপত্তি রয়েছে। এই আপত্তি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত উভয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমানচার্জহার বলবৎ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এসময় জ্বালানি অধিকার সুরক্ষায় অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ক্যাবের ২৫ দফা গ্যাস খাত সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি রোধে যদি আমরা প্রশাসনিক সমাধান না পাই তাহলে আদালতের মাধ্যমে সমাধান চাইবো।

ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া বলেন, এমনিতেই করোনা মহামারিতে আমরা ভোক্তারা নিষ্পেশিত। এই মুহূর্তে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি কোনভাবেই কাম্য নয়। গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পেলে সকল কিছুর মূল্য বৃদ্ধি পাবে। আমরা আশা করবো প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি রোধে ভূমিকা নিবেন।

এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাবের যুগ্ম সম্পাদক ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরী, ক্যাবের কোষাধ্যক্ষ ড. মো: মুঞ্জুর-ই- খোদা তরফদার।