Home Second Lead সার্জারিতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ‘এমআইসিএস’ পদ্ধতির

সার্জারিতে জনপ্রিয়তা বাড়ছে ‘এমআইসিএস’ পদ্ধতির

  • কলকাতা এ্যাপোলোতে ৪হাজার সার্জারি সম্পন্ন
  • দেড় থেকে তিন ইঞ্চি কেটেই করা হয় হার্ট সার্জারি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কলকাতা: প্রচলিত ওপেন হার্ট সার্জারিতে বুকের ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি কেটে সার্জারি করা হয়। আর এই সার্জারির পর ক্ষত শুকানোর পাশাপাশি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে। এর পরিবর্তে মাত্র দেড় থেকে তিন ইঞ্চি কেটে করা হয় মিনিম্যালি ইনভেসিভ কার্ডিয়াক সার্জারি (এমআইসিএস)। এ পদ্ধতিতে অপারেশনের পর দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা যায়। কলকাতার এ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালে গত এক দশকে এ পদ্ধতিতে চার হাজার অপারেশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, বাইপাস, ভাল্ব প্রতিস্থাপন, হার্টের ছিদ্র বন্ধ করা, কার্ডিয়াক টিউমার অপারেশন, পেসমেকার ইমপ্লান্টেশনসহ সব ধরণের কার্ডিয়াক সার্জারির ৯৫শতাংশ এমআইসিএস এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। এমনকি ৮০-৯০ বছর বয়সী রোগীদের জন্যও এ পদ্ধতি পুরোপুরি নিরাপদ। যে কারণে এই পদ্ধতির ওপর রোগীদের আস্থা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কলকাতা: বাংলাদেশের সাংবাদিক দলের সাথে কথা বলছেন এ্যাপোলো হাসপাতালের ডিরেক্টর, কার্ডিও থোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. সুশান মুখোপাধ্যায়

গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক দল কলকাতা এ্যাপোলো স্পেশালিটি হসপিটাল পরিদর্শন করেন। এসময় হাসপাতালের কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা সহ বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
হাসপাতালের ডিরেক্টর, কার্ডিও থোরাসিক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. সুশান মুখোপাধ্যায় এসময় জানান, সাম্প্রতিক সময়ে এমআইসিএস এর প্রতি রোগীদের আগ্রহ বাড়ছে। কলকাতা এ্যাপোলো হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৩৫ থেকে ৪০ জন রোগীকে এমআইসিএস পদ্ধতিতে সার্জারি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, এমআইসিএস এর একাধিক ইতিবাচক দিক রয়েছে। এটি প্রচলিত ওপেন হার্ট সার্জারি থেকে অনেক বেশি নিরাপদ, কার্যকর এবং তা রোগীকে অসামাস্য স্বস্তি দিয়ে থাকে। কম ক্ষত হবার কারণে কষ্ট ও রক্তক্ষরণ কম হয়। সেই সঙ্গে অপারেশনের স্থানে দাগ থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম থাকে।
আগামীতে কলকাতা এ্যাপোলো হাসপাতালে হার্টের রোবট সার্জারির প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ডা. সুশান বলেন, আমাদের পরের টার্গেট রোবটিক হার্ট সার্জারি। রোবটিক আর্ম কম্পিউটার ব্যবহার করে সার্জন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এটি। কারণ, এখন নতুন নতুন যন্ত্রপাতির উদ্ভব হচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানও এগিয়ে যাচ্ছে। আমারও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, রোবোটিক সার্জারি অধিক ঝুঁকিমুক্ত, জটিলতাও অনেক কম। আমাদের চিকিৎসকরা আগামীতে এ পদ্ধতিতে হার্ট সার্জারি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আশা করছি কিছুদিনের মধ্যে এখানে হার্টের রোবোটিক সার্জারি শুরু হবে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রানা দাশ গুপ্ত জানান, বিশ্বের খ্যাতনামা হাসপাতালগুলো কোন চিকিৎসায় কী ধরণের আধুনিক প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে, তা নজরে রেখেই আমরা বার্ষিক পরিকল্পনা সাজাই। বছর শেষে কোনটা বাদ দিতে হবে আবার কোনটা নতুন আনতে হবে- তা মাথায় রেখেই বাজেট তৈরি করি। সে অনুযায়ী ডাক্তার, যন্ত্রপাতি, জনবল, প্রশিক্ষণ সবদিক বিবেচনায় রেখে আমরা আমাদের টিমকে শক্তিশালী করি। যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার চুলচেরা বিচার বিবেচনা করেই এখানে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি জানান, এটি এ্যাপোলো গ্রæপের সবচেয়ে বড় হাসপাতাল। তিনটি বøকে বিভক্ত এই হাসপাতারের ৭৪৪টি বেডের মধ্যে ৮৭ শতাংশই এখন রোগীতে পূর্ণ। এছাড়া ডে-কেয়ারে প্রতিদিন গড়ে ১৬০০ রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেয়া হয়।
তিনি জানান, বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি ও চিকিৎসকদের পেশাগত দক্ষতা অর্জনে সবসময় সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এ্যপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল। বাংলাদেশ থেকে কোন ডাক্তার যদি এখানে কাজ শিখতে চায়, কিংবা কেউ যদি নার্সিং এর ওপর কাজ করতে চায় আমরা তাদের সেই সুযোগ দেবো।
প্রসঙ্গত, কলকাতার শীর্ষস্থানীয় হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম এ্যাপোলো মাল্টি স্পেশালিটি হসপিটাল। অবকাঠামো, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা ও চিকিৎসা সেবার জন্য ২০০৯ সালে জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) স্বীকৃতি পায় এই হাসপাতাল। বাংলাদেশে চট্টগ্রামসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় ইনফরমেশন এন্ড টেলিমেডিসিন সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে দেশে বসে ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের চিকিৎসা সেবা পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে এ প্রতিষ্ঠানটি।