Home কলকাতা ঐতিহ্য ও স্থাপত্য রেখে সংস্কার হচ্ছে কলকাতা নিউমার্কেট

ঐতিহ্য ও স্থাপত্য রেখে সংস্কার হচ্ছে কলকাতা নিউমার্কেট

কলকাতা নিউমার্কেট। ছবি সংগৃহীত

১৪৮ বছর অতিক্রান্ত হগ মার্কেটের। স্যার স্টুয়ার্ট হগের নাম অনুসারে ১৯০৩ সালে এই মার্কেটের নাম হয় হগ মার্কেট। সেই সময় শুধুমাত্র ঘোড়ায় চড়ে এসে সাহেবরা ঢুকতেন এই বাজারে।

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন হগ মার্কেট-এর সংস্কারের কাজ শুরু হবে চলতি বছরেই। আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত সমীক্ষা-রিপোর্ট দেবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। তার পরই সংস্কারের কাজে হাত লাগাবে কলকাতা পুরসভা। দেড়শো বছরের জরাজীর্ণ শরীর নিয়ে ধুঁকছে হগ মার্কেট। ব্রিটিশ স্থাপত্য বজায় রেখেই সংস্কারের কাজ করবে পুরসভা।

নেটিভদের সঙ্গে একসঙ্গে বাজার নয়। এই ভাবনা থেকেই ক্যালকাটা কর্পোরেশন-এর চেয়ারম্যান স্যার স্টুয়ার্ট হগ তৎপর হয়েছিলেন। ১৮৭১ সালের সেই ভাবনা রূপ পায় ১৮৭৪ সালে। ২০০০ দোকান নিয়ে তৈরি হয় এক তলার এই বাজার। ভিক্টোরিয়ান গোথিক স্থাপত্য এই মার্কেট নির্মাণ করে ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কোম্পানি।

সেই জন্য এই মার্কেটের স্থাপত্যের সঙ্গে হাওড়া স্টেশনের স্থাপত্যের অনেক মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এই স্থাপত্যকে বজায় রেখেই মার্কেটের সংস্কারের কাজ করতে চায় কলকাতা পুরসভা। কলকাতা পুরসভার হেরিটেজ কমিটির সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনাও হয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।

কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ হেরিটেজ স্বপন সমাদ্দার বলেন, ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে হেরিটেজ কমিটির আলোচনা হয়েছে। ঐতিহ্য ও স্থাপত্য কীর্তি বজায় রেখে সংস্কার করা হবে দেড়শো বছরের প্রাচীন হেরিটেজ মার্কেটের।

১৪৮ বছর অতিক্রান্ত হগ মার্কেটের। স্যার স্টুয়ার্ট হগের নাম অনুসারে ১৯০৩ সালে এই মার্কেটের নাম হয় হগ মার্কেট। সেই সময় শুধুমাত্র ঘোড়ায় চড়ে এসে সাহেবরা ঢুকতেন এই বাজারে। কালের পরিবর্তনে হগ মার্কেট নিউ মার্কেটের রূপ নেয়। তৈরি হয় নতুন বিল্ডিং। পুরনো হগ মার্কেটের রিচার্ড রস্কেল বাইন-এর আর্কিটেকচার অনুযায়ী ভিক্টোরিয়ান গোথিক স্থাপত্যে এসেছে জরাজীর্ণ ভাব।

কলকাতা পুরসভা বারকয়েক এই ঐতিহ্যের মার্কেটের সংস্কার করেছে। তবে তা জোড়া-তাপ্পির বেশি আর কিছু নয়। এবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে সংস্কার করা হবে হগ মার্কেট-এর। প্রাথমিকভাবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হক মার্কেট পরিদর্শন করেছেন এবং কীভাবে এই বাজারের ঐতিহ্য রেখে সংস্কার করা যায়, তার সমীক্ষার রিপোর্ট চূড়ান্ত করছেন।

এই সমীক্ষার রিপোর্ট ফেব্রুয়ারি মাসেই হাতে আসবে কলকাতা পুরসভার। এরপরই দ্রুত সংস্কারের কাজে এগোবে কলকাতা পুরসভা।কলকাতা পুরসভার বাজার বিভাগের ইউনিয়ন পারিষদ আমিরউদ্দিন ববি বলেন, ইতিমধ্যেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রাথমিক রিপোর্ট দিয়েছেন এবং চূড়ান্ত রিপোর্ট ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই তারা কলকাতা পৌরসভার হাতে তুলে দেবেন।

হগ মার্কেট-এর পরিধি বেড়েছে। বর্তমান নিউমার্কেটে পাঁচ হাজারের বেশি দোকানদার রয়েছে। এর মধ্যে পুরনো বাজারের বেশিরভাগ অংশই ছাদের অবস্থা জরাজীর্ণ। অবশেষে ঐতিহ্যকে রেখে আমূল সংস্কারের পথে কলকাতা পুরসভার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।নিউমার্কেট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক উদয় সাহু বলেন আমরা বারবার কলকাতা পৌরসভার মেয়রের কাছে দরবার করেছি বিভিন্ন জায়গায় মার্কেটের অবস্থা খুবই সংকটজনক এই ছাদের তলায় প্রায় পাঁচ হাজার ব্যবসায়ী ব্যবসা করেন তাদের নিরাপত্তার জন্যই অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজন।

হগ মার্কেটের ঐতিহ্যের ছাদেই বসবাস করেন বেশ কিছু পৌরসভার কর্মী। ঐতিহ্যের ভবনে হেরিটেজের নিয়মের তোয়াক্কা না করেই সেখানে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী স্টাফ কোয়ার্টার। ভবনের সংস্কারে প্রথম বাধা এই কর্মীদের পুনর্বাসন। নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী উদয় সাহু অভিযোগ করেন হেরিটেজ এই মার্কেটের উপরের দিকে সমতল অংশের পুরসভার কর্মীরাই বসবাস করেন। আর সেখানে হেরিটেজ মার্কেটকে রক্ষণাবেক্ষণের যে নিয়মকানুন তা কার্যত লংঘন করা হচ্ছে। তার ফলে এই মার্কেটের অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে অনতিবিলম্বে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় পরামর্শ মেনে সেই ব্যবস্থা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মেয়র পরিষদ বাজার আমির উদ্দিন ববি। হেরিটেজ এই মার্কেটের ছাদের উপরে আর কোনো কর্মী আবাস থাকবে না। তাদেরকে সরিয়ে বালিগঞ্জ স্থানান্তরিত করা হবে বলে জানান মেয়র পরিষদ।

কলকাতা পুরসভা সূত্রে খবর প্রাথমিক রিপোর্টে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ কমিটি মার্কেটের ছাদের উপর লোড কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। এই রুফ ট্রিটমেন্টকেই সবথেকে বেশি জোর দিচ্ছে বিশেষজ্ঞ কমিটি। ব্রিটিশ আমলে তৈরি সিলিন্ড্রিক্যাল সেল রুফ বা নলাকৃতি ছাদের কাঠামো অবিকৃত রেখেই চলবে সংস্কারের কাজ এই সংস্কারে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হবে বলে জানানো হয়েছে। এই কাজের জন্য পর্যায়ক্রমে মার্কেটের কিছু অংশ বন্ধ রাখা হতে পারে। পুরনো স্থাপত্য কে রেখে তার সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করতে শেষ পর্যায়ে রয়েছে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরীর কাজ।