প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপে চা
ওয়ানটাইম প্লাস্টিকে ক্যান্সারের ঝুঁকি
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবেঃ পরিবেশ অধিদপ্তর
জুলহাজ ইব্রাহিম
চট্টগ্রাম: নগরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে ব্যবহৃত ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের নানান উপকরণ। এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিকে মানব স্বাস্থ্যসহ পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতির আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা। ওয়ান টাইম এসব প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে জানায় পরিবেশ অধিদপ্তর।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাজীর দেউড়ি, সিআরবি, জামাল খান, ডিসি হিল পার্ক, অভয়মিত্র ঘাট, নতুন ব্রিজ, জাম্বুরি পার্ক, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ নগরীর প্রায় সকল পর্যটন স্পটে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম জিনিসপত্রের ছড়াছড়ি। এসব জায়গায় ঘুরতে আসা অধিকাংশ মানুষ কাচের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপে চা খাচ্ছে। খাওয়া শেষে নালা-নর্দমাসহ যেখানে সেখানেই ফেলছে এসব প্লাস্টিকের কাপ। এসব বর্জ্য ফেলার জন্য অধিকাংশ দোকানের আশেপাশে নেই কোন নির্দিষ্ট জায়গা বা ডাস্টবিন।
অভয়মিত্র ঘাটে ঘুরতে আসা আব্দুল্লাহ আল নোমান বিজনেসটুডে২৪-কে বলেন, মানুষজন করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে বহুজনের ব্যবহৃত কাচের কাপের পরিবর্তে প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম কাপে চা খায়, তবে ব্যবহৃত কাপ ফেলার জন্য কোন ডাস্টবিন না থাকায় যেখানে সেখানেই ফেলছে। এ কারণে একদিকে পরিবেশের ক্ষতি, অন্যদিকে সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।
শুধুমাত্র চায়ের কাপের ক্ষেত্রে নয়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে অন্যান্য খাবারের ক্ষেত্রেও প্লাস্টিকের ওয়ান টাইম চামচ, প্লেট বা প্যাকেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে নগরজুড়ে।
সিআরবি এলাকার চায়ের দোকানদার সালাহউদ্দিন বলেন, ঘুরতে আসা মানুষের অনেকেই ওয়ান টাইম কাপ ছাড়া চা খায় না। আবার খাওয়ার পর দোকানের পাশে রাখা ঝুড়িতে না ফেলে যেখানে সেখানে ছুড়ে ফেলে। প্লাস্টিকের তুলনায় কাগজের ওয়ান টাইম কাপের দাম বেশি তাই প্লাস্টিকেরটাই রাখি।
তবে করোনামুক্ত থাকার উপায় হিসেবে ব্যবহৃত এসব বিকল্প উপকরণে যুক্ত হচ্ছে নানা রোগ। এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিকে থাকা টক্সিক পদার্থ মানুষের লিভার, মুখ ও স্তন ক্যান্সার, হার্ট, মস্তিষ্ক ও ত্বকের ক্ষতি করে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
এছাড়া এসব ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহৃত উপকরণ প্রতিনিয়ত নালা-নর্দমায় ফেলার কারনে বর্ষার মৌসুমে নগরের জলাবদ্ধতা ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে মনে করছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা।
এ ব্যাপারে নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বলেন, প্লাস্টিক জলাবদ্ধতাসহ পরিবেশ ধ্বংসের অন্যতম কারন। ওয়ান টাইম প্লাস্টিক আমাদের এখনই নিষিদ্ধ করতে হবে। যদিও দেশে পলিথিনের উৎপাদন ও সরবরাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবে এর কার্যকারিতা নেই। এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। সবখানে প্লাস্টিক-পলিথিনের ছড়াছড়ি। কানাডাসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই ইতোমধ্যে এসব ডিসপোজেবল প্লাস্টিকের উপকরণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে হয়তো প্রায় সব দেশেই নিষিদ্ধ করা হবে। জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হলো চট্টগ্রাম। সমুদ্র পৃষ্টের উচ্চতার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের প্রায় ৭০ শতাংশ নিমজ্জিত হয়ে যায়। এ জন্য আমাদেরকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নালা-নর্দমা পরিষ্কারের পনের দিনের মধ্যেই প্লাস্টিকের এসব উপকরণে আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তো আনলিমিটেড পিরিয়ড চলা যাবে না। বিশ্বের অনেক দেশই এখন প্লাস্টিকের বোতলের পরিবর্তে আবারো কাঁচের বোতলে ফিরে যাচ্ছে। যেহেতু মানুষজন খুব একটা সচেতন না, নালা-নর্দমাসহ যেখানে সেখানে এসব ডিস্পোজেবল প্লাস্টিকের উপকরণ ফেলছে, সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও যথেষ্ট দুর্বল তাই পরিবেশ রক্ষার্থে এসব প্লাস্টিকের উপকরণ উৎপাদন, ব্যবহার ও সরবরাহ কার্যকারভাবে নিষিদ্ধ করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম মহানগর কার্যালয়ের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে এ প্রসঙ্গে বলেন, যদি ওয়ান টাইম ব্যবহার করতে হয় তাহলে কাগজেরটাই করুক, তাতে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে ক্ষতিকর প্লাস্টিকেরটা না, এর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে মহামান্য হাইকোর্ট ও বলেছে, এটা নিষিদ্ধের আইনও রয়েছে। তবুও এর ব্যবহার বেড়ে গেছে। এর ব্যবহার বন্ধে অনেক রেস্টুরেন্টে আমরা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়েছি। এমনিতে পলিথিনের বিরুদ্ধে আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম মোবাইল কোর্ট অব্যাহত রয়েছে। এর আগে আমরা এসব প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট করিনি, যদি ব্যবহার বন্ধ করা না হয় তাহলে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।