Home First Lead কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনে মুক্তিপণ আদায়ে টর্চার সেল

কক্সবাজার হোটেল মোটেল জোনে মুক্তিপণ আদায়ে টর্চার সেল

আটক সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য ১১ জন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কক্সবাজার: কক্সবাজার শহরের হোটেল-মোটেল জোন অপরাধের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। অপহরণ, জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায়ে রয়েছে কয়েকটি টর্চার সেল। আর এমন একটি টর্চার সেল থেকে আটকে রাখা চারজনকে উদ্ধার করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের দালাল সদস্য ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হয়েছে দেশীয় অস্ত্রসহ অপকর্মে ব্যবহৃত নানা উপকরণ।

উদ্ধার হওয়া ৪ জনের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকার ইফাজ উদ্দিন ইমন (১৭), একই এলাকার আব্দুল্লাহ আল মামুন (১৫) এবং টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ এলাকার দীল মোহাম্মদ (১৭) ও চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলার মো. ইমরান (১৯) রয়েছে।

ট্যুরিষ্ট পুলিশ জানিয়েছে, এদের মধ্যে দীল মোহাম্মদ ও ইমরান উখিয়া উপজেলার পালংখালী স্টেশনের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারি। তারা রোববার (৭ আগষ্ট) সকালে কক্সবাজার বেড়াতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য শিউলি নামের একটি আবাসিক কটেজে অবস্থান করছিলেন।

এছাড়া উদ্ধার হওয়া অপর দুইজন কক্সবাজার শহরে মায়ের চিকিৎসা করতে এসে রাত্রিযাপনের জন্য ওই কটেজে উঠে।

আটক দালালরা হলো, মো. আলমগীর (৪৫), মো. সেলিম (২০), আকাশ দাস (২৩), মো. জোবায়ের (২৮), মো. মামুন (২২), নাজির হোসেন (২৮), সেকান্দর আলী (২৮), মো. সোহেল (৩০), মো. জাহাঙ্গীর আলম (৩৩), মো. জসিম (২৭) ও মো. পারভেজ (২৫)।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম জানান, রোববার মধ্যরাত থেকে সোমবার (৮ আগষ্ট) ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকা সংলগ্ন আবাসিক কটেজ জোন এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, রোববার মধ্যরাতে কক্সবাজার শহরের লাইট হাউজ এলাকা সংলগ্ন আবাসিক কটেজ জোন কথিত টর্চার সেলে কয়েকজন পর্যটককে দূর্বৃত্তরা জিম্মি রেখেছে খবরে ট্যুরিস্ট পুলিশের একটি দল অভিযান চালায়। এতে সাইনবোর্ড বিহীন সন্দেহজনক শিউলি নামের কটেজ হিসেবে পরিচিত একটি প্রতিষ্ঠানে গেলে তালাবদ্ধ অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়।

https://sangbad.net.bd/images/2022/August/08Aug22/news/%E0%A6%9F%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B7%E0%A7%8D%E0%A6%9F%20%E0%A6%AA%E0%A7%81%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%B6%E0%A7%87%E0%A6%B0%20%E0%A6%85%E0%A6%AD%E0%A6%BF%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%A8.jpg

নানাভাবে তালা খুলতে বলার পরও তালা খুলে না দেওয়ায় সেই তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করা হয়। ভেতরে প্রবেশ করে দেখা যায়, সংঘবদ্ধ অপরাধীরা বিকল্প একটি পথে পালিয়ে যায়। এসময় একটি কক্ষে জিন্মিদশা থেকে উদ্ধার করা হয় চার জনকে। একই সাথে ওই কক্ষ থেকে নির্যাতন করার নানা উপকরণও জব্দ করা হয়।

উদ্ধারকৃতদের তথ্যমতে, সেখানে ৫/৬ জন ছেলে ও ৩ জন নারী ছিল। দালালের মাধমে প্রলোভন দেখিয়ে পৃথকভাবে তাদের ওই কটেজে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে প্রবেশ করার পর সাথে থাকা নারীদের সাথে নানা আপত্তিকর ছবি তুলে মোটা অংকের টাকা দাবি করা হয়। হাতিয়ে নেয়া হয় সব টাকা পয়সা। আরও টাকার জন্য পরিবারকে জানাতে তাদের উপর নির্যাতন চালানো হয়।

তিনি জানান, এরকম আরও কয়েকটি কটেজে জিন্মি করে নির্যাতনের তথ্য রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে। পরে কটেজ জোনে অভিযান চালিয়ে সংঘবদ্ধ চক্রের দালাল সদস্য ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলমান।

পুলিশের এই কর্মকর্তা আরও জানান, আবদুর রহিম নামের উখিয়ার এক ব্যক্তি এবং লোকমান নামের মহেশখালীর এক ব্যক্তির নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে শিউলী কটেজের এই টর্চার সেল। যাদের ধরতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আটক ১১ দালাল ছাড়াও এ চক্রের কিশোর গ্যাং এর শতাধিক সদস্য রয়েছে। যারা মাদক সরবরাহসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার তথ্য পুলিশের কাছে রয়েছে। একটি নিরাপদ পর্যটন জোন করতে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।