Home First Lead কন্টেইনার জটের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

কন্টেইনার জটের মুখে চট্টগ্রাম বন্দর

শামসুল ইসলাম

চট্টগ্রাম বন্দর ইয়ার্ডে দ্রুত বাড়ছে কন্টেইনারের পরিমাণ। এক সপ্তাহ আগে সেখানে ৩৬ হাজার ৪৪১ টিইইউস কন্টেইনার থাকলেও শনিবার তা দাঁড়ায় ৪২ হাজার ৫৭৩ টিইইউসে।

বন্দর কর্মকর্তারা বলছেন, ঈদের ছুটি ও লকডাউনে পণ্য ডেলিভারি কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে। কিন্তু জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়মিত নামছে ইয়ার্ডে। ফলে প্রতিনিয়তই বাড়ছে কন্টেইনারের পরিমাণ। এ পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে গত বছরের মতো আবারও বড় ধরনের কন্টেইনার জটের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জট এড়াতে দ্রুত পণ্য ডেলিভারি নেওয়ার জন্য চেম্বার, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্টদের চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দ্রুত পণ্য খালাস না নিলে ‘দন্ড ভাড়া’ (পেনাল রেন্ট) আরোপ করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত রয়েছে চিঠিতে।

করোনা পরিস্থিতির কারণে ঈদের ছুটির পরপরই ২৩ জুলাই থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে সরকারি কঠোর বিধিনিষেধ। এ সময় বন্ধ রয়েছে সব সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকারের জারি করা এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত জরুরি পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত ট্রাক, লরি, কাভার্ড ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল ও ফেরি নিষেধাজ্ঞার আওতাবহির্ভূত রাখা হলেও সব শিল্প কারখানা বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্র জানায়, ঈদের ছুটি ও কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও পুরোপুরি চালু রয়েছে বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম। নিয়মিতভাবেই চলছে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং। প্রতিদিন একাধিক জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নামানো হচ্ছে বন্দর ইয়ার্ডে। জেটি খালি হলেই ভিড়ছে নতুন কন্টেইনার জাহাজ। ঈদের আগে লকডাউন না থাকায় কন্টেইনার ডেলিভারি স্বাভাবিক থাকলেও ঈদের দিন থেকে তা মারাত্মক হারে কমে যায়। এর সঙ্গে যোগ হয় ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন। আর ঈদের ছুটি ও লকডাউনের প্রভাব পড়েছে বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারিতে।

বন্দরের পরিসংখ্যান বিভাগের তথ্য মতে, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন গড়ে ৪ হাজার থেকে সাড়ে ৪ হাজার টিইইউস কন্টেইনার ডেলিভারি হয়। কিন্তু ২১-২৩ জুলাই এই তিন দিনে ডেলিভারি হয়েছে ১ হাজার ৭২০ টিইইউস কন্টেইনার।

ডেলিভারি কমে যাওয়ায় বন্দরে কন্টেইনারের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (ট্রাফিক) এনামুল করিম। তিনি বলেন, এক সপ্তাহ আগে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনার ছিল ৩৬ হাজার ৪৪১ টিইইউস। গতকাল এখানে কন্টেইনারের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৫৭৩ টিইইউস। তিনি জানান, দেশের অর্থনীতির বিষয়টি মাথায় রেখে ঈদুল আজহার ছুটির সময়ও চট্টগ্রাম বন্দর সার্বক্ষণিক চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু আমদানিকারকরা বন্দর থেকে আশানুরূপ পণ্য ডেলিভারি নিচ্ছেন না। ফলে কন্টেইনারের জট সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ পরিস্থিতিতে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনসহ সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের চিঠি দিয়ে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। এরপরও ডেলিভারি পরিস্থিতির উন্নতি না হলে গত বছরের মতো কন্টেইনারগুলো অফডকে পাঠিয়ে দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে।

এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের পক্ষ থেকে শনিবার বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি ও শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠানো চিঠিতে দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি না নিলে জমে থাকা কন্টেইনারের ওপর ‘দন্ড ভাড়া’ আরোপের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ঈদুল আজহার ছুটির সময় চট্টগ্রাম বন্দর ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু রাখা হলেও কন্টেইনার বা পণ্য খালাসে আপনাদের কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না, যা দুঃখজনক। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কন্টেইনার বা পণ্য খালাস নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ করা গেল। অন্যথায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জমে থাকা কন্টেইনারের ওপর ‘দ- ভাড়া’ আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ২৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সরকারি কঠোর বিধিনিষেধের কারণে দেশের সব পোশাক কারখানা বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পণ্য ডেলিভারি নিতে হলে আমাদের কারখানা, স্টোর বিভাগ, কমার্শিয়াল বিভাগ এগুলো তো খোলা থাকতে হবে। তা ছাড়া এর সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের আসা-যাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে তো সরকার সে সুযোগ রাখেনি। বন্দরকে কন্টেইনার জট সৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে আপাতত কারখানাগুলোর ফিনিশিং সেকশন খোলা রাখা এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনকে আনা-নেওয়ার সুযোগ দেওয়া এবং ১ আগস্ট থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে কারখানা চালুর অনুমতির জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

চট্টগ্রাম বন্দরে মোট কন্টেইনারের ধারণক্ষমতা রয়েছে ৪৯ হাজার ১৮ টিইইউস। বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে ধারণক্ষমতার ৩০ শতাংশ খালি রাখতে হয়। কিন্তু ইতিমধ্যে ধারণক্ষমতার প্রায় ৮৭ শতাংশ পূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্রুত কন্টেইনার ডেলিভারি না হলে ২০২০ সালের মতো বড় জটের কবলে পড়তে পারে বন্দর।-দেশ রূপান্তর