Home First Lead কন্টেইনার হ্যান্ডলিং রেট বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ

কন্টেইনার হ্যান্ডলিং রেট বাড়াতে মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ

ছবি সংগৃহীত

রেট নিয়ে বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টদের বিরোধে উৎপাদনশীলতা ক্ষুন্ন হওয়ার আশঙ্কা

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরে জিসিবিতে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং রেট বৃদ্ধি নিয়ে বার্থ অপারেটর এবং শিপিং এজেন্টদের বিরোধে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতির জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ দায়ি করেছে শিপিং এজেন্টদের অসহযোগিতাকে। দর বাড়ানোর জন্য বন্দর প্রশাসন জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের ।

অনুসন্ধানে জানা যায়,  জিসিবি এলাকায় কন্টেইনার জাহাজে অনবোর্ড হ্যান্ডলিংয়ের যে রেট বিদ্যমান সেটা প্রায় ১৫ বছর আগের।  ২০০৭ সাল থেকে সেটা চালু রয়েছে। এই রেট নিয়ে শিপিং এজেন্ট এবং বার্থ অপারেটরদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। দর বৃদ্ধির জন্য নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়ে সোমবার পত্র দিযেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে উৎপাদনশীলতা ক্ষুন্ন হওয়া এবং জাহাজের গড় অবস্থান সময় বৃদ্ধির আশঙ্কার কথা জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবরে সোমবার পত্রটি পাঠানো হয়েছে।

বিদ্যমান রেট প্রসঙ্গে শিপিং এজেন্টরা বলেছেন, ২০০৭ সালের রেট হলেও সেটা অনেক বেশি। সে সময়ে যে সংখ্যক কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হতো সেটার বিবেচনায় ওই হ্যান্ডলিং রেট নির্ধারণ করা হয়েছিল। এরপর বছরে বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। ২০০৭ সালের তুলনায় এত বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণে।  কিন্তু হ্যান্ডলিং রেট কমানো হয়নি। উল্টো দাবি করা হচ্ছে বাড়ানোর ।  শিপিং এজেন্টদের হিসেবে বর্তমান রেটে প্রতি কনটেইনারে বার্থ অপারেটররা ৬৬২ টাকা লাভ করছে। শিপিং কোম্পানির নির্বাহিরা বলেন, আমরা চাই আমাদের সুবিধা অনুসারে দক্ষ অপারেটরদের দিয়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের কাজ করাতে। কিন্তু সেই সুযোগ নেই। বার্থ অপারেটররা প্রতিবছর শ্রমিকদের জন্য ১০ শতাংশ হারে চার্জ নেয়।  এর সবটা শ্রমিকরা পায় কি না তা নিয়ে সংশয় আছে। তাই আমরা সরাসরি শ্রমিকদের এই অর্থ পরিশোধে আগ্রহ দেখিয়েছি।

অপরদিকে, বার্থ অপারেটররা বন্দরকে জানিয়েছে যে বর্তমান রেটে  কাজ করে তারা কন্টেইনার প্রতি ৩৫৩ টাকা লোকসানের সম্মুখীন। ২০০৭ সাল থেকে সংস্কারের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দরে বার্থ অপারেটিং সিস্টেম চালু হয়েছে। সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও শিপিং এজেন্টরা জাহাজের অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে অপারেটরদের ৬০ শতাংশ সার্ভিস চার্জের ওপর ১ শতাংশ সার্ভিস চার্জ বাড়ায়নি, যেখানে তারা ঐ অনবোর্ড অপারেশনে প্রতি কনটেইনারে শ্রমিকদের সার্ভিস চার্জ প্রতি বছরান্তে ১০ শতাংশ বাড়ায়। সময় হিসাবে অনেক কিছুর দাম বেড়েছে। তাই গত ২০০৭ সাল থেকে ২০২৫ সালের দীর্ঘ সময়ের বিবেচনায় আমরা কনটেইনার প্রতি চার্জ বাড়িয়ে দিতে বলেছি।

বন্দর সূত্রে জানা যায়, কন্টেইনার রেট বৃদ্ধির বিষয়ে গত ৯ মার্চ বন্দরের সদস্য ( হারবার ও মেরিন) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আলোচনা হয়। সভায় শিপিং এজেন্ট এবং বার্থ অপারেটররা যে দর প্রস্তাব করে তাতে বেশ পার্থক্য ছিল এবং  দরের ব্যাপারে তারা একমত হতে পারেনি। এ অবস্থায় বন্দর প্রশাসন বিদ্যমান দরের সাথে ২০৫ টাকা করে বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত দেন। অনবোর্ড লোড এবং খালি কন্টেইনারের বিদ্যমান দরের সাথে এই টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। বার্থ অপারেটররা তাৎক্ষণিকভাবে তাতে সম্মতি প্রকাশ করেন। কিন্তু শিপিং এজেন্টরা তা বাস্তবায়ন করেনি। প্রায় ৩ সপ্তাহ পর ২৭ মার্চ শিপিং এজেন্টস এসোসিয়েশন ৫০.৩৬ টাকা হারে বৃদ্ধিতে সম্মতি প্রকাশ করে বন্দর প্রশাসনকে অবহিত করে। এর প্রেক্ষিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়কে  বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে বন্দরের উদ্যোগে নির্ধারিত দরবৃদ্ধির সিদ্ধান্তের পর শিপিং  এজেন্ট এসোসিয়েশন যে দর প্রস্তাব করেছে তাতে বার্থ অপারেটররা একমত না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এতে জিসিবি এলাকায় কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ে উৎপাদনশীলতা ক্ষুন্ন হতে পারে এবং জাহাজের টার্ন  এরাউন্ড টাইম বেড়ে যেতে পারে। আর তাতে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ধীরগতি তৈরি হতে পারে।

২০৫ টাকা হারে বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে বন্দর কর্তৃপক্ষ যৌক্তিকও গ্রহণযোগ্য মনে করে এবং তা বাস্তবায়নে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের জরুরি হস্তক্ষেপ চেয়েছে।