বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: করোনাভা্ইরাসের অভিঘাত দুগ্ধ শিল্পেও। থমকে গেছে বিপণন। তাই এই শিল্পের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষদের মাথায় হাত।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক মালিক, হোমল্যান্ড ডেইরির স্বত্ত্বাধিকারী মো. ওমর বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধির সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বললেন, করোনাভাইরাসের কারণে বিরাজমান পরিস্থিতিতে কিছুদিন ধরে এমনিতে বেশ দুঃসময় যাচ্ছে খামারিদের। এখন তা আরও সংকটে।গাভিগুলোর খাবার, খামারের দৈনন্দিন অন্যান্য খরচ, কর্মচারি বেতন, ব্যাংকের ঋণের সুদ ইত্যাদি খাতে ব্যয় চলছে নিয়ম মাফিক। দুধ উৎপাদনও আছে। কিন্তু দুধ বিপণন নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ আয় কমে যাচ্ছে।
জানালেন, মিরেরসরাই থেকে লোহাগাড়া পর্যন্ত এলাকায় খামারগুলোতে প্রতিদিন সোয়া ৩লাখ লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। এরমধ্যে সোয়া ২ লাখ লিটার বাসাবাড়ি এবং দোকানসমূহে সরবরাহ করা হয়। এক লাখ লিটার সরবরাহ করা হয় মিষ্টির দোকানে। কোন কোন খামার তাদের দুধের সবটাই মিষ্টির দোকানে দেয়, কেউ কেউ অর্ধেক বা কিছু কম সরবরাহ করে মিষ্টির দোকানে। দেশে করোনাভাইরাসের আতঙ্ক শুরু হওয়ার পর থেকে সমস্যা তৈরি হয় বিক্রিতে। সাম্প্রতিককালে তা প্রকট হয়েছে।
মালিক ওমর বললেন, দুধ অন্যতম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। কিন্তু অন্যান্য চাল, ডালের মত মজুত রাখার কোন সুযোগ নেই। এটা পচনশীল। প্রতিদিন দু’বেলা তা সংগ্রহ করে মিষ্টির দোকান, মুদির দোকান, বাসাবাড়িতে পাঠানো হয়। দিনেরটা দিনেই ডেলিভারি দিতে হয়।
মিষ্টির দোকানসমুহ বন্ধ।মুদি দোকান, বাসাবাড়িতে সরবরাহও ব্যাহত হয়ে পড়েছে। ডেইরি শিল্পের ইতিহাসে এমন পরিস্থিতি আর তৈরি হয়নি বলে জানিয়ে মালিক ওমর বললেন, বিপণনে সংকট হলেও দুধ দোহন বন্ধ করার উপায় নেই। তাতে গাভি মারা যাবে। খাবার কমিয়ে দেয়াও যাবে না। প্রতিটি খামার মালিক এখন এই সমস্যায় দিশেহারা। হোম ডেইরির উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রতিদিন শুধু পশুর খাবার বাবৎ খরচ হয় ১৫ হাজার টাকা। বড় খামারগুলোর খরচ আরও বেশি। চলমান অবস্থায় পশুখাবারের সাপ্লাই চেইন যথারীতি থাকবে, না ব্যাহত হবে তা নিয়েও সবাই উদ্বিগ্ন। যেসব খামারি গরু মোটাতাজা করেন তাদের উদ্বেগ আরও বেশি। কারণ পশুকে খাবারের পরিমাণ হ্রাস করা যাবে না। লোকসানের আশংকায় চরম দুশ্চিন্তায় তারা।
বললেন, কেবল চট্টগ্রামে নয়, সারাদেশের খামারিরা সমস্যার সম্মুখিন। এমনও অনেক ক্ষুদ্র খামারি রয়েছে, যারা প্রতিদিনের দুধ বেচে সংসার চালায়, কি হবে ভেবে অস্থির তা
রা।
গত কয়েক বছরে দুধের দাম মোটামুটি ভাল পাওয়া এবং গরু মোটাতাজাকরণ কার্যক্রমে লাভবান হওয়ার কারণে দেশে ডেইরি শিল্পের আরও বিকাশ ঘটেছে। সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে ২০১৮ সালে সারা দেশে ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১ জন খামারি ছিল, সেখানে ২০১৯ সালে খামারির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৭৭ হাজার ৪১৬ জন। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খামারির সংখ্যা বেড়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪২৫ জন। বোঝা যায়, দেশে ডেইরি শিল্পের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। তিনি বলেন, এখন যেভাবে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে খামারিদের, তাতে খামারিরা নিরুৎসাহিত হবে আগামী দিনে।