বিজনেসটুডে ডেস্ক
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ এলোমেলো করে দিচ্ছে পোশাক খাত।
বাংলাদেশের পোশাক খাতের সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপ, আমেরিকায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ফের মানুষ ঘরবন্দী হচ্ছে। এতে সেসব অঞ্চলে পোশাক বিক্রি কমেছে। নতুন ক্রয়াদেশ কমেছে এবং আগের ক্রয়াদেশগুলোও স্থগিত হচ্ছে। আর পোশাক রপ্তানি হ্রাস পাওয়ায় বন্ধ হতে শুরু করেছে দেশের ছোট কারখানাগুলো। এসব সংকটের কারণে পোশাক খাত ফের সংকটে পড়তে যাচ্ছে ।
তৈরি পোশাক খাত নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৩৯ ভাগ তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন ব্যয়ের চেয়েও কম মূল্যে কার্যাদেশ গ্রহণ করতে হচ্ছে।আগের চেয়ে কম মূল্যে চুক্তিকৃত সময় ৯০ দিনের মধ্যে পাচ্ছেন না গার্মেন্ট ব্যবসায়ীরা। মূল্য পরিশোধে ২২০ দিন পর্যন্ত সময় চাচ্ছেন তৈরি পোশাকের বিদেশি ক্রেতারা। এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করা সম্ভব হয় যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৫ শতাংশ কম। তবে ইউরোপের পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি এবং দেশের পোশাক কারখানাগুলো খুলতে শুরু করার পর ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে এ খাত।
এনবিআর সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারি থেকে অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে যে তৈরি পোশাক শিপমেন্ট হয়েছে তার মূল্য ২ দশমিক ৪৩ শতাংশ পূর্বের তুলনায় কমেছে। এখন ক্রেতারা অস্বাভাবিকভাবে দাম কমিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করছে। বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে পোশাকের রপ্তানিমূল্য গত বছরের একেই সময়ের তুলনায় কমেছে ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। আর কেবল সেপ্টেম্বর মাসে রপ্তানিমূল্য কমেছে আগের বছরের সেপ্টেম্বরের তুলনায় ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন,মূলত কার্যাদেশকৃত পণ্য না নেয়া কিংবা দেরিতে নেয়ার উদ্দেশ্যেই অস্বাভাবিক কম মূল্য প্রস্তাব করছে। ক্রেতারা ২২০ দিন পর্যন্ত ডেফার্ড পেমেন্টের (একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর মূল্য পরিশোধ) প্রস্তাব করছে, যদিও গার্মেন্ট কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ক্রেতাদের কার্যাদেশের চুক্তিতে ৯০ দিনের মধ্যে মূল্য পরিশোধের শর্ত ছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৪ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছিল বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশের মতো। অর্থনীতিবিদ ও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের ঋণ সহায়তা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাহস করে কারখানা চালু করাসহ আরও কিছু কৌশল নিয়ে বাংলাদেশে অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল।
এব্যাপারে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্যে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম চার মাসে উভেন পোশাক রপ্তানি খুব ভালো করতে না পারলেও নিট পোশাকের রপ্তানি ছিল বেশ আশাব্যঞ্জক। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে পোশাক রপ্তানিতে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়, এরপর আগস্ট মাসে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সেপ্টেম্বর মাসে ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু অক্টোবর মাসে এসে আগের বছরের ওই মাসের চেয়ে রপ্তানি কমে গেছে ৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১৯ সালের প্রথম ১০ মাসে যেখানে ২৭ দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছিল, চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে হয়েছে ২২ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন ডলারের।
বর্তমানপরিস্থিতি নিয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান জানান, ‘আমরা আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। ক্রেতা দেশগুলো অর্ডার বাতিল বা নতুন অর্ডার না করলেও আগের অর্ডার স্থগিত করে রাখছে। একই সঙ্গে কি ঘটছে তা পর্যবেক্ষণ করছে। ডিসেম্বরে বড়দিনের উৎসবকে ঘিরে ক্রেতা দেশগুলোতে বিক্রি বাড়ার কথা ছিল। কিন্তু ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ আবার বেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে।’
তবে, বিজিএমইএ পর্ষদ সদস্যরা বলছেন, বড় আকারে ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে না। কিন্তু তিন লাখ পিসের ক্রয়াদেশ থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে এক থেকে দেড় লাখ পিস বাতিল করা হচ্ছে। বাকি দেড় বা দুই লাখ পিসের ক্রয়াদেশ সরবরাহের সময় পিছিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ছোট থেকে বড় সব ধরনের ক্রেতার ক্ষেত্রেই। তবে প্রথম ঢেউয়ের মতো বাতিল বা স্থগিত পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত সৃষ্টি হয়নি। এখন যেহেতু নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে, আগের পদক্ষেপগুলো মূল্যায়ন করে নতুন পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত বলে বিজিএমইএ পর্ষদ সদস্যরা মনে করেন।