ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিতের ধকল সামলাতে না পেরে করোনা মহামারীতে চট্টগ্রামে বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৪০টি পোশাক কারখানা। এসব কারখানার আবার চালু হওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, পোশাকশিল্প ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে। ইতিমধ্যে বাতিল ও স্থগিত ক্রয়াদেশের পণ্য পুনরায় নিতে শুরু করেছে ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো। নতুন অর্ডার অল্প হলেও আসছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে করোনায় পিছিয়ে পড়া তৈরি পোশাক খাত আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বৈশ্বিক মহামারী করোনায় ক্ষতির শিকার হয়েছে চট্টগ্রামের শতভাগ গার্মেন্টস কারখানা। করোনাকালের শুরুতে চীনসহ বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে অধিকাংশ কারখানা কাঁচামাল সংকটে পড়ে। পরে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার কারণে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হতে থাকে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হলেও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রামসহ সারা দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। কোনো কোনো কারখানা প্রাথমিকভাবে লে-অফ ঘোষণার মাধ্যমে বন্ধ রাখলেও পরে তা আর চালু হয়নি।
গার্মেন্টস মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির কারণে চট্টগ্রামে ইপিজেডের ভেতরে ও বাইরে প্রায় ৪০টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ইপিজেডের বাইরে বন্ধ কারখানাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এনেক্স ফ্যাশন লিমিটেড, ইএফএ অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন ওয়ালেস লিমিটেড, জেমিনি ফ্যাশন লিমিটেড, জিলানী ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড, খোকা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মোমিন অ্যাপারেলস লিমিটেড, মুন ফ্যাশন লিমিটেড, টি কে এম গার্মেন্টস লিমিটেড, ওয়াজিকো অ্যাপারেলস লিমিটেড, ফ্যাশন ক্রিয়েট লিমিটেড, গোল্ড মার্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড, শামীম ফ্যাশন লিমিটেড, প্রগ্রেসিভ নিটওয়্যার লিমিটেড, মীর ফ্যাশন লিমিটেড।
পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশনের সভাপতি ফজলুল কবির মিন্টু জানান, কারোনাকালে ইপিজেডের বাইরে অন্তত ২০টি গার্মেন্টস কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার হয়ে পড়েছেন এসব কারখানার ১০ হাজারের বেশি শ্রমিক। ইপিজেডের ভেতরেও বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়েছে। এর মধ্যে কিছু কিছু কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়।
বন্ধ হয়ে যাওয়া জিলানী ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক রাশেদ পাশার কাছে কারখানার ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বলেন, কারখানা বন্ধ এ অবস্থায় কোনো কিছু বলার মতো মানসিকতা আমাদের নেই। কবে নাগাদ আবার কারখানা চালু হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
প্রগ্রেসিভ নিটওয়্যার লিমিটেডের পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার রিয়াসাত হাসান বলেন, ক্রেতাদের অর্ডার বাতিল হয়ে যাওয়াসহ করোনাকালীন প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আমাদের কারখানা সাময়িক বন্ধ রয়েছে। ক্রেতাদের কাছ থেকে এখন নতুন করে ক্রয়াদেশ আসছে। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে কারখানা চালু করতে পারব বলে আশা করছি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি এ এম চৌধুরী সেলিম বলেন, করোনা বিপর্যয় কাটিয়ে তৈরি পোশাক খাত এখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুনভাবে কিছু কিছু ক্রয়াদেশ দিচ্ছে। তবে তা এখনো সীমিত। তবে আশার কথা হচ্ছে, করোনার শুরুতে বাতিল ও স্থগিত করা ক্রয়াদেশের পণ্যগুলো আবারও নেওয়া শুরু করেছে ক্রেতারা। তবে দাম নিয়ে চাপাচাপি করছে। লোকসান এড়াতে অনেকে বাধ্য হয়ে আগের চেয়ে কম দামে পণ্য পাঠাতে রাজি হচ্ছেন। তিনি বলেন, করোনাকালে যেসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে সেগুলোর অবস্থা ভালো নয়। এদের অনেকে চেষ্টা করছে পুনরায় চালু করার। পরিস্থিতি যদি অনুকূলে আসে তাহলে হয়তো অনেকে চালু করার উদ্যোগ নিতে পারে।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, তৈরি পোশাক রপ্তানির সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে চট্টগ্রামে একে একে বন্ধ হয়ে গেছে অনেক গার্মেন্টস কারখানা।
বিজিএমইএ’র তথ্য মতে, চট্টগ্রামে তাদের সদস্য সংখ্যা ৬৮৯টি। এর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ কারখানাই বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মাত্র ২৩২টি এখন চালু রয়েছে।-দেশ রূপান্তর