বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: সরকার, মালিক ও শ্রমিক ত্রিপক্ষীয় সভায় কলকারখানা চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
শনিবার শ্রম ভবনের সম্মেলন কক্ষে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তা পরে বিবেচনায় নেয়া হবে বলে জানানো হয়।
সভায় শ্রমিকদের করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয়।
সভায় বিকেএমইএ-এর সভাপতি একেএম সেলিম ওসমান এমপি, আবদুস সালাম মুর্শিদী এমপি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দিন, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব কে এম আলী আজম, শ্রম অধিদপ্তরের মহাপরিচালক একেএম মিজানুর রহমান, বিজিএমইএ-এর সভাপতি ড. রুবানা হক, এফবিসিসিআই এর সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সরকার মালিক-শ্রমিক সবাইকে বৈশ্বিক এই মহামারি মোকাবেলায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিশেষ করে কারখানায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবরাহ করার জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়।
সভায় মালিকপক্ষ থেকে জানানো হয় বৈশ্বিক অবস্থা বিবেচনায় ক্রেতারা ইতিমধ্যে অনেক ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন। এতে উৎপাদন এবং রপ্তানিতে বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকের আহ্বানের দাবি জানান।
বিজিএমইএর সভাপতি রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে কোনো কারখানা এখনও বন্ধ হয়নি। তবে পণ্যের শিপমেন্ট সব বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতারা বলছে, তারা পণ্য পরে নেবে।কবে নেবে তার কোনো দিনক্ষণ জানি না। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে কারও কোনো কাজ থাকবে না। কাজ না থাকা মানে কারখানা অনেকটাই বন্ধ হয়ে যাওয়া।
করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ইতোমধ্যে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে সকল কারখানায় পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। বিশেষত তৈরী পোশাক, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত ও প্লাষ্টিক পণ্য শ্রমঘন শিল্পখাতের সকল কর্মীকে দেহের তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মাল স্ক্যানার ব্যবহারের মাধ্যমে পরীক্ষা করে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিকপক্ষকে পত্রে অনুরোধ করা হয়। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের বেশি হলে এবং সর্দি, কাশি ও শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা থাকলে অর্থাৎ করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে উক্ত কর্মীকে বাধ্যতামূলক ছুটি প্রদান করে সংগনিরোধ (Quarantine) এর ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মালিকপক্ষকে অনুরোধ করা হয়।
বর্তমানে দেশে পোশাক কারখানা ৪ হাজার ৬২১টি। এগুলোর মধ্যে সরাসরি রপ্তানি প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত প্রায় আড়াই হাজার। প্রায় ৪৫ লাখ শ্রমিক পোশাক শিল্পে কাজ করে বলে দাবি সংশ্লিষ্টদের।
করোনা ভাইরাসের কারণে একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক শিল্পে। সবশেষ ১৭১ কারখানার ক্রয়াদেশ বাতিল হয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ৩৮ কোটি ডলারের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করা ক্রেতাদের মধ্যে প্রাইমার্কের মতো বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠানও আছে বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক প্রাইমার্কের পাশাপাশি ক্রয়াদেশ বাতিল বা স্থগিত করেছে ইউরোপের ছোট-মাঝারি-বড় ক্রেতারাও।