Home Second Lead কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যাদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ

কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যাদের ঘরে ঘরে ঈদের আনন্দ

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

শিরোপা জেতা দলে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরের আট জন মেয়ে রয়েছেন। এই মেয়েরা সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে কলসিন্দুরকে। নারী ফুটবল দলের কোনো খেলা থাকলে টিভি সেটের সামনে বসে পড়ে গ্রামবাসী। ব্যতিক্রম ঘটেনি ফাইনাল খেলার দিনেও। বিকাল থেকে শুরু হয় ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা। প্রথম দিকে কিছুক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল না। পরে বিদ্যুৎ আসায় ফিরে আসে স্বস্তি। খেলায় জয় পাওয়ায় কলসিন্দুর তথা ধোবাউড়া উপজেলায় আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এখন কলসিন্দুরের ফুটবল কন্যাদের ঘরে ঘরে যেন ঈদের আনন্দ।

জয়ে উচ্ছ্বসিত ফুটবল তারকা সানজিদার বাবা বলেন, বাংলাদেশ জয় লাভ করায় বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। মেয়েদের কোচ জুয়েল মিয়া বলেন, কলসিন্দুরের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে ক্ষুদে ফুটবলারদের নিয়মিত অনুশীলন চলছে। কলসিন্দুর নারী ফুটবল টিমের ম্যানেজার মালা রানী সরকার বলেন, জাতীয় নারী ফুটবল দলে কলসিন্দুররের মেয়েরা খেলছে এটা অত্যন্ত গর্বের। আশাকরি আগামী দিনে দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে আরো ভালো খেলা উপহার দেবে।

২০১১ সালে বঙ্গমাতা কাপ দিয়ে জয়যাত্রা শুরু কলসিন্দুরের মেয়েদের। এরপর একের পর এক ম্যাচ জিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করে অদম্য এই কিশোরীরা। তাদের বদৌলতে সরকারি করা হয়েছে কলসিন্দুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ। একাদশ শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে সানজিদা, মারিয়া, তহুরা, শামসুন্নাহার, শিউলি আজিম, নাজমা আক্তার, মার্জিয়া আক্তারদের জীবন কাহিনি। দ্য আনবিটেন গার্লস (অপরাজিত মেয়েরা) শিরোনামে বিশেষ পাঠটি রাখা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফৌজিয়া নাজনীন জানান, কলসিন্দুরের মেয়েদের সফলতার ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে। আমি তাদের মঙ্গল কামনা করি এবং খেলাধুলার পাশাপাশি পড়ালেখায় ভালো করুক সেই প্রত্যাশা রইল।

সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ নারী দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে সাবিনা-মাসুরার জেলা সাতক্ষীরায়। শহরে ও সবুজবাগে সাবিনাদের বাড়িতে বিকাল থেকে খেলা দেখেন সবাই। ফাইনালে গোল না পেলেও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার গৌরবে গৌরান্বিত সাবিনার পরিবারসহ ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাই।

সাবিনার সেঝ বোন শিরিনা খাতুন বলেন, বাংলাদেশের সাফল্যে তিনি খুবই উচ্ছ্বসিত। আট গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ায় তারা খুব খুশি।

অপর দিকে, সাতক্ষীরা সদরের বিনেরপোতায় নারী ফুটবল দলের অপর খেলোয়াড় মাসুরাদের বাড়িতেও চলছে জয়ের উত্সব। বাবা রজব আলী মাসুরাকে খেলতে দিতে চাইতেন না। কিন্তু স্থানীয় কোচ আকবার আলী ও মা ফাতেমা খাতুনের উত্সাহে নারী দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছেন মাসুরা। দুর্ভাগ্য এত বড় জয় আকবার আলী দেখে যেতে পারলেন না। দুই বছর আগে তিনি মারা গেছেন।

সাতক্ষীরা জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আরিফ হোসেন প্রিন্স জানান, সাবিনা ও মাসুরার মতো খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরার মাটি থেকে আজ জাতীয় দলে শক্ত জায়গা করে নিয়েছে। তাদের এ সফলতার ধারা অব্যাহত থাকুক।

সিরাত জাহান স্বপ্নার বাড়ি রংপুর সদরের সদ্যপুস্কুরিনী পালিচড়ার জয়রাম গ্রামে। তিনি টুর্নামেন্টে মোট চারটি গোল করেন। খেলা শেষ হওয়ার পরপরই এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিরাত জাহান স্বপ্নার ছবি দিয়ে পোস্ট দিয়েছেন রংপুরের ফুটবলপ্রেমীরা। দারিদ্র্য জয় করা রংপুরের পালিচড়ার এই মেয়ে আজ সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপের মুকুটটা অর্জনে ভূমিকা রাখল। স্বপ্নার বাবা একজন বর্গা চাষি। একসময় তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না। ভাঙাঘরে সে যেন এখন চাঁদের আলো।

স্বপ্নার পিতা মোকছার আলী, মা লিপি বেগম। সিরাত জাহান স্বপ্না ২০১৩ সালে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পান, সেই থেকে এখন পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলছেন। স্বপ্নার কোচ মিলন খান জানান, সিরাত জাহান স্বপ্না অত্যন্ত মেধাবী খেলোয়াড়। এই সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে ৪ গোল করে দেশের জয়ে ভূমিকা রেখেছে। আমি কোচ হিসেবে গর্বিত এবং আনন্দিত।

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মফিজার রহমান রাজু বলেন, আমার নিজ এলাকা রংপুরের পালিচড়ার একটি মেয়ে সাফ ফুটবলের চ্যাম্পিয়নশিপ মুকুটটা এনে দিতে অবদান রাখল। রংপুর জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, আমরা রংপুরবাসী সিরাত জাহান স্বপ্নার জন্য গর্ববোধ করছি।