শামসুল ইসলাম: কভিড-১৯ বিপর্যয়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম থেকে সিঙ্গাপুর ও কলম্বোগামী জাহাজের ফিডার অপারেটর আরোপিত ‘ইমারজেন্সি কস্ট রিকভারি সারচার্জ’ (ইসিআরএস) দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পে বড় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতে তৈরি পোশাক রপ্তানি ও এই শিল্পে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে। এই ব্যয়ভার বহন করতে হবে দেশের ব্যবসায়ীদের। বিদেশি ক্রেতারা এর দায় নেবেন না। এ পরিস্থিতিতে আরোপিত ‘ইসিআরএস’ রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের জন্য ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্র জানায়, গত ১৫ নভেম্বর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কলম্বো ও সিঙ্গাপুর সমুদ্রবন্দরগামী ফিডার জাহাজ অপারেটররা পণ্যভর্তি ও খালি কন্টেইনারের ওপর ইসিআরএস নামে অতিরিক্ত চার্জ আদায় শুরু করেছে। প্রতি টিইইউস পণ্যভর্তি কন্টেইনারে ৭৫ ডলার এবং খালি কন্টেইনারে ৩৭ দশমিক ৫ ডলার সারচার্জ আরোপ করছে তারা।
বিভিন্ন শিপিং লাইনের কর্মকর্তারা জানান, বৈশ্বিক মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলার অংশ হিসেবে কড়াকড়ি আরোপ করা হচ্ছে সিঙ্গাপুর ও কলম্বো বন্দরে। বন্দরের আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় লকডাউন দেওয়ার কারণে দেখা দিয়েছে শ্রমিকসংকট। বন্দরে আসা জাহাজের নাবিকদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনের পাশাপাশি কভিড পরীক্ষার সার্টিফিকেটও দিতে হচ্ছে। এতে বন্দরে উৎপাদনশীলতা কমেছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পণ্য ওঠানামা ও ডেলিভারিতে। বন্দরে জাহাজ বার্থিংয়ের ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগছে। এতে একটি জাহাজকে তিন থেকে সাত দিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। অপেক্ষমাণ সময় বেড়ে যাওয়ায় জাহাজ পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। আর তাই ফিডার অপারেটররা অনেক আগেই মেইন লাইন অপারেটরে (এমএলও) চিঠি দিয়ে ‘ইসিআরএস’ আরোপের কথা জানিয়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে একতরফাভাবে ফিডার অপারেটরদের এ ধরনের সারচার্জ আরোপের বিষয়টি অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছেন দেশের পোশাক রপ্তানি খাতের ব্যবসায়ীরা। আরোপিত সারচার্জ প্রত্যাহারে পদক্ষেপ চেয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরাবরে ইতিমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি মো. আবদুস সালাম বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের পোশাকশিল্পসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বিপর্যস্ত। নানা প্রতিকূলতায় অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে রপ্তানিমুখী পোশাকশিল্প। গত অক্টোবর পর্যন্ত এই শিল্পের প্রায় ৩ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ডলারের রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। এ অবস্থায় সারচার্জ আরোপ দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অনুকূল নয়। তাই আমরা সংশ্লিষ্টদের বিষয়টি জানিয়ে এ ব্যাপারে তাদের হস্তক্ষেপ চেয়েছি।-দেশ রূপান্তর