নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: ঈদুল আযহা আসতে আর বেশি দিন বাকি নেই। ঈদকে ঘিরে নগরীর কামার পাড়াগুলোতে নেই ব্যস্ততা। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেয়া কঠোর লকডাউনের মধ্যে ক্রেতা পাওয়া নিয়ে সংশয়ে রয়েছেন কামাররা।
কামারদের হাতিয়ার বানানোর আয়োজন শুরু হতো ঈদের একমাস আগে থেকে। কেনাবেচা চলত ঈদের আগ রাতের দিন পর্যন্ত। এ সময় কামারশালার পাশ দিয়ে গেলেই শোনা যেত লোহার ঝনঝনানি আর লোহা গরম করা ভাতির ভোঁ ভোঁ শব্দ।
১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর এবারের চিত্রটা ভিন্ন।
সরেজমিনে নগরীর সল্টগলা ক্রসিং, আকমল আলী রোড কামারপাড়ায় দেখা যায়, কামারশালার সামনে একসময় যেখানে বোঝাই করে পসরা সাজানো থাকতো ছুরি, দা, বটি, চাপাতিসহ নানা হাতিয়ার, সেখানে হাতেগোনা কয়েকটি দা-বটি।
আকমল আলী রোডের কামার আশিকুর রহমান রাহাত বলেন, কোরবানিকে ঘিরে এক মাস আগেই আমাদের ব্যবসা শুরু হয়। এসময় প্রতিদিনই বিক্রি হতো দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা। পরে আস্তে আস্তে বিক্রি বাড়ে। দিনে সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়, যা চলে ঈদের আগ রাত পর্যন্ত।
‘এবছর ঈদের আর ১৫ থেকে ১৬ দিন বাকি। এখনও কাজ শুরু করার সাহস পাচ্ছি না। চিন্তায় আছি, মানুষ কোরবানি দিবে কি না। মোড়ে মোড়ে বাঁশ লাগানো, কাস্টমার আসতে পারে না। বেচাকেনা করব কার কাছে?’
রাহাত বলেন, এছাড়া সাহস না পাওয়া আরেকটি কারণ জিনিসপত্রের দাম বেশি। তবে আল্লাহর ওপর ভরসা, ১০ দিন সময় পেলেও ব্যবসাটা গুছিয়ে নিতে পারব।
সরকারি কোনো সহায়তার বদলে দোকান খোলা রাখতে পারাটাই বেশি জরুরি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দোকান খোলার ও মালামাল বিক্রির অনুমতির জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
সল্টগোলা ক্রসিংয়ের কামার ফরিদ হোসেন বলেন, ঈদের আর বেশি সময় নেই। এ বছরও ব্যবসার সময়টাতেই লকডাউন। এ বছর আতঙ্কে এখনও একটা জবাই করার চাকু পর্যন্ত বানাইনি।
শুনতেছি এখনকার ভাইরাস আরও বেশি শক্তিশালী। কী করে হবে ব্যবসা বলেন? শহরের দোকানপাট সবই বন্ধ। যেখান থেকে লোহা কিনব ওই দোকনটাও বন্ধ। মানুষের মাঝে ভাইরাস নিয়ে যে ভয়ভীতি কাজ করছে আমাদের দোকানে আসবে কিনা সেটাও সন্দেহ বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, গেল বছর লকডাউন ছিল তবুও একমাসে ব্যবসা করছি প্রায় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার। এ বছর সেটা হবে বলে মনে হয় না।
কামারপাড়ায় হাতিয়ারের বাজার যাচাই করতে এসেছেন শাহ আলম।
তিনি বলেন, আমি বাজারে দাম শুনতে এসেছি। যদিও এবছর ভাইদের সাথে পরামর্শ হয়নি কুরবানি আদৌও দেব কি না। তবুও ভাবলাম হাতিয়ারের বাজারটা একটু জেনে নিই। এসে দেখছি হাতিয়ারের দাম অনেক বেশি। দাম বেশি থাকলে কী হবে, বাজারে বিক্রি তো নেই বললেই চলে।
কোরবানির আগে এই দোকানগুলোতে যে ভিড় থাকে, সেই তুলনায় এবার ভিড় নেই বললেই চলে। এছাড়া প্রতিটা জিনিসের দামও খুব চড়া। কাজের তেমন একটা তৎপরতা নেই। দাম বেশি আর তারা যেহেতু হাতিয়ার সেভাবে বানাচ্ছে না, তাই একটা লোহা কিনে এনে অর্ডার দিয়ে তৈরি করে নিলাম। বাজারে তো লোহার দামও বেশি বলে জানান তাইফুল ইসলাম নামে অপর এক ক্রেতা।