বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
কথায় বলে মানুষ দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না। কিডনির (Chronic Kidney Disease) ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা অনেকটা তেমনই। শরীরের ছোট এই দুটি অঙ্গের কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ (National Kidney Month)। সারা শরীরের দূষিত রেচন পদার্থ টেনে বের করে দিয়ে সাফসুতরো রাখার দায়িত্ব কিডনিরই। আর এই কিডনির অসুখেরই এখন বাড়বাড়ন্ত। হার্ট অ্যাটাকের মতোই ক্রনিক কিডনির রোগ (Chronic Kidney Disease) এখন ঘরে ঘরে।
ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনের সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০ শতাংশই ক্রনিক কিডনির অসুখে আক্রান্ত (World Hypertension Day 2022)। প্রতি বছর বহু মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির অসুখে।
কিডনির রোগের কারণ অনেক। ম্যাক্স সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. যোগেশ কুমার ছাবড়া বলছেন, রোজকার জীবনে অভ্যাসগত সমস্যা এই রোগ ডেকে আনে। তাছাড়া জিনগত কারণও আছে। কারও পরিবারে হয়তো বংশপরম্পরায় উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। তা অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চারাও বহন করে। আবার কেউ স্বাস্থ্যকর খাবার না খেয়ে জাঙ্ক ফুড খান। কিংবা হাঁটাচলা কম করেন, দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটার বা টিভির সামনে বসে থাকেন, দুশ্চিন্তা করেন। তাঁদেরও এই সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপের সমস্যা বাড়তে থাকলে এবং সঠিক ডায়াগনসিস না হলে তার থেকে আরও মারাত্মক সব অসুখ হতে পারে। ক্রনিক কিডনির রোগও তার মধ্যে একটি।
কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন–রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। অ্যাসিডোসিস হয়ে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা যাতে লাগামছাড়া না হয়ে যায় সেটা দেখার দায়িত্বও কিডনির। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতেও এর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখা, কিডনির দায়িত্ব অনেক। তাই কিডনি বিগড়ে গেলে বিপদের আশঙ্কা অনেক বেশি।
অ্যাংজাইটি অ্যাটাকে মৃত্যু হচ্ছে যখন তখন, কীভাবে বুঝবেন বিপদ আসছে
নারায়ণ হেলথের সিনিয়র নেফ্রোলজিস্ট ও ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ ডা. গণেশ শ্রীণিবাস প্রসাদ বলছেন, বেশিরভাগ কিডনির অসুখই গোড়াতে ধরা যায় না। ৯০ শতাংশ রোগী অসুখের লক্ষণ বুঝতে পারনে লাস্ট স্টেজে এসে। তখন এতটাই দেরি হয়ে যায় যে আর কিছু করার থাকে না।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, কিডনির অসুখ গোড়াতেই বোঝার কিছু উপায় আছে। রোগীকে লক্ষণ বুঝতে হবে। এড়িয়ে গেলে চলবে না।
কী কী উপসর্গ শুরুতেই বোঝা যাবে?
নেফ্রোলজিস্টরা বলছেন, কিডনির সমস্যা হলে সবচেয়ে আগে প্রভাব পড়ে মূত্রে। কোমরে বা তলপেটে ব্যথা, মূত্রে জ্বালা, রঙের বদল হলে চিকিৎসকের দ্বারস্থ হওয়া উচিত।
প্রায়ই যদি মূত্রথলি ও প্রস্রাবে সংক্রমণ হয় তাহলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার। তখন রক্তচাপও পরীক্ষা করিয়ে নিতে হবে। ব্লাড ইউরিয়া, সেরাম ক্রিয়েটিনিন ও জিএফআর (GFR) টেস্টও করিয়ে নিতে হবে সময় মতো।
কিডনিতে পাথর বা স্টোন জমলে মূত্রের রঙ বদলে যাবে। লালচে বা ঘন বাদামি রঙ হবে।
কারও উচ্চ রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সমস্যা থাকলে তার প্রভাব পড়ে কিডনিতেও। সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে। হঠাৎ করে জাঁকিয়ে বসা অবসাদ, ঘুম ঘুম ভাব, মনঃসংযোগের সমস্যা, খিদে নষ্ট, অল্প পা ফোলা, শরীরে রক্ত কমে যাওয়া এইসব রোগের আগমন হলে আগেভাগেই সতর্ক হওয়া উচিত।
আগে থেকেই ডায়াবেটিস বা কোনও ক্রনিক রোগ আছে যাঁদের, তাঁদের প্রতি ছ’মাস অন্তর নিয়ম করে ব্লাড প্রেসার ও সুগার টেস্ট করাতে হবে। সেই সঙ্গেই ইউরিক অ্যাসিড, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাডের মাত্রাবেশি আছে কিনা তাও পরীক্ষা করাতে হবে।