Home সারাদেশ কিশোরকে হত্যা, বাবা-ভগ্নিপতি গ্রেপ্তার

কিশোরকে হত্যা, বাবা-ভগ্নিপতি গ্রেপ্তার

ছবি সংগৃহীত


মোঃ রাসেল মিজি

গাজীপুর: দ্বিতীয় স্ত্রীর মন জয় করতে মাদ্রাসা পড়ুয়া কিশোর সন্তানকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছেন তার বাবা। হত্যাকাণ্ডের তিনমাস পর গাজীপুর জেলার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই রহস্য উদঘাটন করে।

এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত নিহতের বাবা ও ফুপাতো বোনের স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারের পর অভিযুক্ত পিতা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
নিহত কিশোরের নাম বিপ্লব হোসেন আকন্দ (১৪)। সে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানাধীন বীর হাটাবো এলাকার আল জামিয়া আল সালাদিয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার পিতা অভিযুক্ত বাবুল হোসেন আকন্দ (৪২)। তিনি জেলার জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী আকন্দ পাড়ার মৃত আমজাদ হোসেনের ছেলে। বাবুলের সহযোগী একই এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে এমদাদুল (৩৫)। এরা সম্পর্কে মামা শ্বশুর ও ভাগ্নি জামাতা।
পিবিআইয়ের গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান জানান, চলতি বছরের ৮ মার্চ রাতে ভিকটিম বিল্পব আকন্দ মসজিদে নামাজ পড়ার কথা বলে ঘর থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। পরে মা ছেলেকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও পায়নি। পরদিন ৯ মার্চ ভোরে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানাধীন পিরুজালী বকচরপাড়া গ্রামের চালা জমির বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় বিপ্লবের মরদেহ পাওয়া যায়। মরদেহের বিভিন্নস্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।
বিপ্লবের মা খাদিজা আক্তার বাদি হয়ে জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলাটি গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর থানা পুলিশ এক মাস তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করতে না পারায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ঢাকার নির্দেশে পিবিআই গাজীপুর জেলার ওপর অর্পন করে।


পিবিআই’র ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদারের তত্ত্বাবধানে পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমানের সার্বিক সহযোগিতায় মামলাটি পুলিশ পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান তদন্ত করেন। তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য ও আলামত বিশ্লেষণ করে অভিযান পরিচালনা করে হত্যার সঙ্গে জড়িত বাবুল হোসেন আকন্দকে গত ৯ জুন রাতে এবং সহযোগী এমদাদুলকে ১০ জুন ভোরে জেলার পিরুজালী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, ১১ থেকে ১২ বছর আগে আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রী জুলিয়াকে বিয়ে করার পর বাবুল সংসারের সুখের কথা ভেবে পৈত্রিক জমি বিক্রি করে টাঙ্গাইলে তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়িতে ঘর তৈরি করে দেয়। কিন্তু জুলিয়া সেখানে থেকে বিভিন্ন ছেলের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়ায়। এ কারণে বাবুল আবারো পিরুজালী গ্রামে এনে বাসা ভাড়া করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতে থাকে। জুলিয়া প্রায়ই বাবুলের বড় স্ত্রীকে মারধর করতো। ফলে বাবুলের প্রথম স্ত্রী খাদিজার সাথে দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়ার ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো।
এদিকে, হত্যার তিনমাস আগে জুলিয়া তার ছোট মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি টাঙ্গাইল চলে যায় এবং মোবাইলে তার স্বামী বাবুলকে প্রথম স্ত্রীকে তালাক দিতে বলে। তালাক না দিলে সে তার ছোট মেয়েকে খুন করে বাবুল এবং তার পরিবারের সকলকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাবুলের সহযোগী ভাগ্নি জামাই এমদাদ জানান, তার সাথে বাবুলের দ্বিতীয় স্ত্রী জুলিয়ার গোপন সম্পর্ক ছিলো। এই সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে জুলিয়া এমদাদকে বিভিন্ন বুদ্ধি পরামর্শ দিতো, যাতে করে বাবুলের প্রথম স্ত্রীকে ঘর ছাড়া করা যায়।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদুর রহমান জানান, বিপ্লবকে হত্যার কয়েকদিন আগে জুলিয়া টাঙ্গাইল থেকে গোপনে পিরুজালী এসে আসামি এমদাদের সাথে দেখা করে ভিকটিমকে হত্যা করার জন্য বাবুলকে রাজি করাতে বলে। ঘটনার কয়েকদিন আগে বাবুল এমদাদকে জানায়, তার ছোট ছেলেকে হত্যা করতে হবে। পরবর্তীতে বাবুল গ্রেপ্তারকৃত আসামি এমদাদুলের পরামর্শে তার ছোট ছেলে ভিকটিম বিপ্লব আকন্দকে খুনের পরিকল্পনা করে। ভিকটিম বিপ্লব নারায়ণগঞ্জের মাদ্রাসা থেকে বাসায় ছুটিতে আসার কয়েকদিন পর ঘটনার দিন বাবুল ভিকটিমকে নিয়ে এশার নামায পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হয়। পরিকল্পনা মতে আসামি এমদাদ ভিকটিমকে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কোমল পানীয়র সঙ্গে নেশা জাতীয় দ্রব্য মিশিয়ে খাওয়ায়। পরে বাবুল তার ছেলে ভিকটিম বিপ্লব আকন্দকে নিয়ে পিরুজালী বকচরপাড়ায় চালা জমির বাঁশ ঝাড়ের পাশে ফাঁকা জায়গায় উপস্থিত হয়। কিছুক্ষণ পর ভিকটিম ঝিমিয়ে পড়তে থাকলে আসামি বাবুল তার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে ভিকটিম বিপ্লবের গলায় আঘাত করে। ভিকটিম লাফিয়ে ওঠার চেষ্টা করলে বাবুল পুনরায় কোদাল দিয়ে ভিকটিমের শরীরের বিভিন্নস্থানে আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
পিবিআই গাজীপুরের পুলিশ সুপার জানান, বাদি তার স্বামীর প্রথম স্ত্রী। আনুমানিক ১১ থেকে ১২ বছর আগে বাবুল তার আপন ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে এবং ছোট স্ত্রীর ২ মেয়েকে নিয়ে নিজের গ্রামে আলাদা বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকে। মূলত পারিবারিক কলহের জেরে দ্বিতীয় স্ত্রীর প্ররোচনায় বাবুল কোদাল দিয়ে অপর আসামি এমদাদের সহায়তায় ভিকটিমের গলা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামি এমদাদের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত কোদালটি উদ্ধার করা হয়েছে।