Home সারাদেশ স্কুল শিক্ষিকার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

স্কুল শিক্ষিকার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

রোকশানা খানম

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া: শহরের হাউজিং এলাকার নিজ বাসা থেকে রোকশানা খানম (৫২) নামে এক স্কুল শিক্ষিকার রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

সোমবার (৭ নভেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫ নম্বর ছয়তলা ভবনের ২য় তলায় নিজ বেডরুম থেকে মরদেহ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।

পারিবারিক ও পুলিশ সূত্রের ধারণা, সম্পত্তির কারণে পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।

নিহত রোকশানা খানম ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত রওশন আলীর ছেলে এবং একই উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক খুনকারের ছেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ যশোরের হিসাব রক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের স্ত্রী। নিহত রোকশানা কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঘটনাস্থল ওই ভবনের ছয় তলার বাসিন্দা নিহতের ভাইয়ের পরিবার। নিহতের ভাইপো নিশাদ (২২) জানায়, ‘সোমবার সকাল ১০টার দিকে ফুফু বাসায় দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া না পেয়ে পরে প্রতিবেশীদের সাহায্যে ঘরে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে ঢুকে ফুফুর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাই। পরে পুলিশে সংবাদ তার পুলিশ লাশ উদ্ধার করে’।

নিহতের স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির বলেন, ‘সোমবার সকালে স্ত্রী রোকশানাকে খুন করা হয়েছে এমন সংবাদ পেয়ে আমার কর্মস্থল যশোর থেকে এসেছি। ওর আজকে সকালে যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিলো। ওকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। খুনিরা বাসায় ঢুকে কেবল মাত্র একটা পিসি ভাঙচুর করা ছাড়া কোনো কিছুই নিতে পারেনি। তাছাড়া আমরা দুজনে চাকরি করলেও বাসাতে কোনো টাকা পয়সা বা মূল্যবান কোনো গয়না খোয়া যায়নি। কেবলমাত্র স্ত্রী রোকশানাকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে। ছয়তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি রোকশানার নিজ নামে এবং নিজেই ব্যাংক ঋণ নিয়ে করেছে। তার বেতনের টাকাও এখন ওই ব্যাংক লোনের কিস্তি দিতে ফুরিয়ে যায়। যারা এই খুন করেছে আমি তাদের বিচার চাই’।

নিহতের বড় ভাই (খালাতো ভাই) বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. সুজাউদ্দিন জানান, ‘রোকশানা ভেড়ামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ তে এসএসসি ও ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হয়ে কুষ্টিয়া সরকারী কলেজে স্মাতক শ্রেনীতে ভর্তি হন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ডিপইনএড ও এমএড সম্পন্ন করেন। শিক্ষাশেষে প্রথমে সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৯৭ সালে উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের সাথে পারিবারিকভাবেই বিয়ে। তাদের বৈবাহিক জীবনের এখনও পর্যন্ত কোনো সন্তানাদি না থাকায় দাম্পত্য জীবনের দুজনের মধ্যে কিছুটা মনোকষ্ট থাকাটা স্বাভাবিক।’

কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এফতেখায়রুল ইসলাম জানান, ‘আমার স্কুলের ইংরেজি শিক্ষক রোকশানা বেশ কর্মপাগল মানুষ ছিলেন। নিঃসন্তান হওয়ার কারণে অনেকটাই কর্মব্যস্ত থেকে সময় পার করতেন। প্রশ্নপত্র মডারেশনের কাজে সোমবার সকালে ওর যশোর বোর্ডে যাওয়ার কথা। দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল বলে কখনও শুনিনি। তবে নিজ নামের ওই বাড়িটা এককভাবে করতে গিয়ে রোকশানা ব্যাংকের কাছে ঋণগ্রস্তও হয়েছে। নিঃসন্তান হওয়ায় তার সম্পত্তিগত কোন বিষয় কেন্দ্রিক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। নচেৎ শুধু শুধু তো আর একটা মানুষকে হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার কথা নয়’।

নিঃসন্তান এই স্কুল শিক্ষিকা হত্যাকাণ্ডে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে জেলার সকল আইন প্রয়োগ কারী সংস্থা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন,‘ সম্পত্তি কুক্ষিগতকরন বা পারিবারিক কোনো ঘটনা সংশ্লিষ্ট বিষয়কে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে’।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল জানান, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঠিক কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে নিহত রোকশানা খানম একাকি নিজ বাসায় থাকা অবস্থায় দুর্বৃত্তরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকলেও সেখান থেকে তেমন কিছু টাকা পয়সা বা মূল্যবান কোনো অলঙ্কার চুরি ডাকাতি বা খোয়া যায়নি। সম্ভাব্য একাধিক বিষয়ভিত্তিক ধারণাকে সামনে রেখে খতিয়ে দেখছে পুলিশ। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাক না কেনো তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে’। তবে এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। নিহতের লাশ ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।