কুড়িগ্রাম থেকে নয়ন দাস: কুড়িগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় সড়ক দখল করে চলছে ভুট্টা, বোরো ধানমাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ। এতে ভোগান্তিতে পড়ছেন বিভিন্ন যানবাহনের চালক ও পথচারীরা। এভাবে চললে যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
মঙ্গলবার (১৭ মে) সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন সড়কে বোরো ধানমাড়াই ও খড় শুকানোর কাজ করার এমনই চিত্র দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে রৌমারী উপজেলার সড়কগুলোয়। সরেজমিনে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা শালুর মোড় থেকে উপজেলা শহর রৌমারী পর্যন্ত পাকা সড়কের বিভিন্ন স্থানে ধান স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এ যেন এক ধান মাড়াইয়ের উঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কৃষকরা পাশেই শ্যালোচালিত ইঞ্জিন দিয়ে মাড়াই করছেন এসব ধান। মাড়াই শেষে অনেকে ধান বাড়ি নিয়ে গেলেও খড় সড়কের ওপরই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছেন শুকানোর কাজে। এ ছাড়া কেউ ভুট্টা শুকাচ্ছেন সড়কে। শুকানোর পর সড়কের পাশেই স্তূপ করে রাখা হচ্ছে খড়। এর মধ্যেই ঝুঁকি নিয়েই চলছে ট্রাক, অটোরিকশা, ভ্যান, মোটরসাইকেল ট্রাক্টর।
অটোরিকশাচালকরা বলছেন, সড়কজুড়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করছেন কৃষকরা। সড়কের ওপর ধানরমাড়াইয়ের কাজ করায় তারা যাত্রী নিয়ে গাড়ি চালাতে নানা সমস্যায় পড়ছেন। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেড়েই চলেছে।
পথচারী মো. আরিফ মিয়া নামের একজন বলেন, এ মৌসুমে খড় বিছানো সড়কে গাড়ি চালানো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েক দিন আগে মোটরসাইকেল নিয়ে সড়কে বিছানো খড়ে পিছলে পড়ে আহত হন কয়েকজন চালক।
রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা এলাকার মো. রমিজ উদ্দিন যাচ্ছিলেন এ সড়ক ধরে। তিনি বলেন, ধানরমাড়াইশেষে কৃষকরা ধানের অবশিষ্ট খড় সড়কে ফেলে রাখেন শুকানোর জন্য। বৃষ্টি হলে ওই খড় সড়কে কর্দমাক্ত হওয়ার পর সেগুলো সরানো হয় না। পরে পচে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হতে প্রায়ই দেখা যায়।
যাতায়তকারীদের অভিযোগ থাকলেও বোরো ধান মাড়াইকারী কৃষকরা বলছেন, তারা অল্প সময়ের জন্য রাস্তায় ধান মাড়াই করছেন। এতে যানবাহনের সাময়িক একটু ক্ষতি হলেও তাদের অন্য কোনো উপায় নেই। কারণ বাড়িতে জায়গার অভাব।
মো.আব্বাস আলী নামের এক ট্রাকচালক বলেন, সড়কের দুই পাশে খড়, ধান শুকানো ও মাড়াইয়ের কারণে রাস্তা সরু হয়ে যায়। এতে সড়কে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। জ্যামে আটকা পড়লে অনেক সময় ধান অন্য জায়গায় সরিয়ে গাড়ি নিয়ে আসতে হয়।
এ বিষয়ে রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও, ভারপ্রাপ্ত) আরশাফুল আলম রাসেল বলেন, সড়ক দখল করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড করা বেআইনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত এসব বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কুড়িগ্রাম বাস মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বাচ্চু বলেন, কৃষকরা সড়কে বোরো ধানমাড়াই ও খড় শুকানোর কারণেই বর্তমান সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা যদি সড়কে ধানমাড়াই ও শুকানোর কাজ না করতেন, তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যেত। তাই আমি অনুরোধ করব কৃষকরা যেন সড়কে ধানমাড়াই ও শুকানোর কাজ না করেন।