কুড়িগ্রাম থেকে নয়ন দাস: কয়েকদিন ধরে বয়ে যাওয়া ভারি বর্ষণ ও উজানের পানির ঢলে এখানকার ১৬ নদ-নদীর তীরবর্তি এলাকার চলতি বোরো ধান, পেঁয়াজ, ভুট্টা ও শাকসবজির ক্ষেত পানির নিচে ডুবে গেছে। এরমধ্যে অসময়ে বৃষ্টি আর পাহাড়ী ঢলে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর ফলে নদ-নদী তীরর্তি রাজারহাট, কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর, উলিপুর, ফুলবাড়ী, নাগেশ্বরী ও ভূরুঙ্গামারী উপজেলার উঁচু ও চরাঞ্চল গুলোতে বোরো ধান, পিঁয়াজ, ভুট্টা, বাদাম, মরিচ, পটল, ঝিংগাসহ বিভিন্ন ফসল পানিতে ডুবে গেছে।
কয়েকদিন ধরে এসব ফসল পানির নিচে ডুবে থাকায় শতশত কৃষক ফসল নষ্টের আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে বোরো ক্ষেত নিয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন এসব এলাকার কৃষকরা।পানিতে ডুবে থাকা বোরো ক্ষেত পঁচে গলে যাবে এমন আশঙ্কা তাদের।
ফুলবাড়ী উপজেলার ধরলা নদীর তীরবর্তি এলাকার কৃষক মোঃ কালাম হোসেন বলেন, আমি এবার ৬ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করি। বোরো ধানের আবাদ খুব সুন্দর হয়। আশা ছিল ফলন ভালো পাবো। কিন্তু চৈত্রের বান আমার ৬ বিঘা জমির সব ফসল ডুবে গিয়েছে। এবার ঘরে ভালো ফলন ঘরে উঠবেনা বলে জানান তিনি।
চিলমারী উপজেলার রাজার ঘাট অষ্টমীর চরের কৃষক রিয়াজুল ইসলাম বলেন,চরের জমিতে মরিচ, পটল চাষ করেছি, ঝিংঙা চাষ করেছি।সব অসময়ের পানিতে তলিয়ে শেষ হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর এসময় পানি না আসলেও এবার এসে সব শেষ করে দিল।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার উত্তর নওয়াবস পাঁগাছী ইউনিয়নের ধরলার পাড়ের কৃষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন,নদীর পলিতে প্রায় এক একর পরিমানে জমিতে বোর লাগিয়েছিলাম। সব তলিয়ে গেছে। তাই ধানের শীষে কেটে নিয়ে নৌকায় করে নিয়ে আসতেছি।বাকী সব পানির নিচে।তলিয়ে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর খামারবাড়ীর উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান সরকার রাজু বলেন,আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে কুড়িগ্রামে অবিরাম বর্ষণ ধারা বয়ে যাচ্ছে। এটি একটি বিরল ঘটনা। এমন দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে কুড়িগ্রামে ৯ টা উপজেলায় নিম্নাঞ্চলের ৭৭৫ হেক্টর জমির বোরো, বিভিন্ন ফসল পানির নিচে নিমজ্জিত হয়। এরমধ্যে ৪৫০ হেক্টর জমির চলতি বোরো ধান ক্ষেত নিমজ্জিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান,কুড়িগ্রামের ৯ টি উপজেলার নদ-নদী তীরবর্তী এলাকার বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলী জমিতে পানি ওঠে। এরমধ্যে চরাঞ্চলের প্রায় ৬০০ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসলের ক্ষেতে পানি ঢুকে পড়েছে। উজানের পানি আসা কমে গেলে ও আভ্যন্তরিন বৃষ্টিপাত কমে গেলে ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমতে পারে বল জানান তিনি।