Home ক্যারিয়ার রফিকুল অন্ধ, কিন্তু সমাজের বোঝা নন

রফিকুল অন্ধ, কিন্তু সমাজের বোঝা নন

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

কুড়িগ্রাম:রফিকুল দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, কিন্তু সমাজের জন্য তিনি বোঝা নন। একজন সফল ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। কুড়িগ্রাম সদরের অদূরে বিসিক শিল্প এলাকায় ভাই ভাই প্লাস্টিক কারখানার মালিক তিনি।

কুড়িগ্রামে নয়, লালমনিরহাটেও গড়েছেন আরো একটি প্লাস্টিকের কারখানা। বর্তমানে তার কারখানায় ১৫-২০ জন কর্মচারী কাজ করে জীবন নির্বাহ করছেন।

লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী থানার সাপটিবাড়ি ইউনিয়নের খাতাপাড়া মাজার গ্রামের আব্দুস ছাত্তার ব্যাপারীর মেজো ছেলে রফিকুল। রফিকুল বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে বড় ভাই শহিদুল ইসলামের সাথে পরিত্যক্ত বর্জ্য প্লাস্টিকের বোতল, জার, ঘরবাড়ির বিভিন্ন প্রকার নষ্ট ভাঙাচুরা প্লাস্টিকের পণ্য কুড়ে বাজারে বিক্রি করতাম।

পরে বড় ভাই পুরাতন মালামাল ত্রুয়ের ব্যবসা শুরু করেন। স্কুলের পড়াশোনা করার পাশাপাশি ভাইয়ের ব্যবসায় সময় দিতাম। যখন এসএসসি পরীক্ষায় পাশ করি তখন আমার চোখ দুটো অন্ধ হয়ে যায়। চোখে দেখতে না পাড়ায় পড়াশোনা বন্ধ করে ভাইয়ের ব্যবসায় মনোযোগী হই। তখন থেকে পরিত্যাক্ত বর্জ্য প্লাস্টিকের পণ্যের বাজার, ভাঙাচুরা মালামালের গ্রেড, প্লাস্টিকের কাটিং পদ্ধতি, বাজারজাতকরণের প্রক্রিয়াসহ ঢাকার ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচয় হয়।

পরবর্তীতে সামান্য টাকা দিয়ে নিজের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কুড়িগ্রামে এসে ব্যবসা শুরু করি। এ প্লাস্টিকের ব্যবসা থেকে আমার ভালো আয় হচ্ছে। আমি অন্ধ হওয়ায় সরকারি বেসরকারি ব্যাংকগুলো আমাকে কোন ঋণ বা সহযোগিতা করেনি। একমাত্র বিসিক আমাকে বিভিন্নভাবে অর্থনৈতিক সহযোগিতা করছে।

কারখানার কর্মচারী রাজু আহমেদ বলেন, আমি ১২ বছর ধরে রফিকুল ভাইয়ের কারখানায় কাজ করে আসছি। আমার মত আরো প্রায় ২০ জন নারী পুরুষ এ কারখানায় কাজ করে সংসার চালায়। প্রতি মাসে ওভারটাইমসহ জন প্রতি ১৫-২০ হাজার টাকা পাই।

আরেক কর্মচারী হাফিজুর রহমান বলেন, রফিকুল ভাইয়ের প্লাস্টিকের কারখানা দীর্ঘদিন ধরে দিনমজুরির কাজ করে আসছি। আমরা বাইরে থেকে ৪০-৪৫ টাকা কেজি দরে পড়ে থাকা নষ্ট প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, বোতল, জার, ছিপির গ্রেড করে হিট মেশিনে কাটিং করে বস্তা প্যাকিং করি।

কুড়িগ্রামে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) এর উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের বিসিক শিল্প এলাকায় ভাই ভাই প্লাস্টিক সেন্টারের একজন শিল্প মালিক রফিকুল ইসলাম। তিনি মুলত পরিত্যক্ত প্লাস্টিক সামগ্রী কিনে প্রসেসিং করে চিপ, কাটিং করে তা রিসাইক্লিং করে নতুন প্লাস্টিক তৈরির উপযোগী করার কাজ করেন।

বর্তমানে তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধি হওয়ায় আমরা তাকে আর্থিক সহযোগিতাসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছি।