সুমন চৌধুরী
চট্টগ্রাম: হিমেল হাওয়ার সাথে জেঁকে বসছে শীত। সন্ধ্যার পর পরই চারদিকে শুরু হয় কুয়াশার রাজত্ব। রাত যখন গভীর হয় যেন তখনই শুরু হয় ভাপা পিঠার চুলার আগুনের সাথে কুয়াশার পাল্লা। পিঠার ভাপের সাথে কুয়াশা একাকার। পথচারী থেকে শুরু করে যানবাহন চালকদের দেখা যায় রাস্তার পাশে কিংবা কোনায় পিঠা কিনতে।
মূলত শীতকালে অন্যান্য পিঠার চাইতে নারকেল-গুড় ও চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা সকলের পছন্দের। গ্রামাঞ্চলে এখন সকালের নাশতা হরেক রকমের পিঠাপুলি দিয়ে চলছে। তবে শহরে ভাপা পিঠা ও চিতল পিঠা ছাড়া অন্যান্য পিঠা পাওয়া যায় না।
দেখা গেছে নগরীতে দুই চাকাবাহী মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীদের। সংখ্যায় বেশি হলেও ক্রেতার কমতি নেই। ভোর থেকে সকাল নয়টা এবং বিকাল থেকে রাত দেড়টা দুইটা পর্যন্ত পিঠা বানায়। পিঠা খেতে এসে ঠান্ডা হাত দুটিও চেঁকে নেয় ক্রেতারা। বিশেষ করে ভোরে গার্মেন্টস শ্রমিকেরা প্যাকেটে করে পিঠা কিনে নিয়ে যায়। এছাড়া ফজর নামাজ আদায় করে মুসল্লীরাও ঢু মারে পিঠার দোকানে। ভাগ বসায় রিকশা-সিনজি অটোরিকশার চালকেরাও।
আগ্রাবাদ এক্সেস রোডে পিঠার দোকানি মো. মিয়া জানান, নভেম্বর মাসে তেমন ভালো বিক্রি হয়নি। চলতি মাসের শুরু থেকে পিঠা খেতে ক্রেতাদের হুড়োহুড়ি বেড়েছে। শীতও ভালো পড়ছে। পিঠা দিয়ে কুল পাচ্ছি না। পার্সেলটা বেশি যাচ্ছে। তাছাড়া মৌসুমী পিঠা ব্যবসায়ীও বেড়েছে।
আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজের শিক্ষার্থী তানভীর জানান, শীতের সবজির পাশাপাশি ভাপা পিঠার এখন কদর বেশি। গরমকালে এই পিঠা পাওয়াও যায় না। চুলা থেকে নামানো গরম গরম পিঠা খেতে অনেক সুস্বাদু।
এদিকে পিঠার চাল ভাঙানোর মেলঘরেও ভিড় বেড়েছে। লাইন ধরে চাল দিচ্ছেন আর গুঁড়ি করে নিচ্ছেন। সুযোগ বুঝে কেজিতে দুই টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে মেলমালিকরা।
দোকানি মো.কুদ্দুস জানান, এখন সব কিছুর দাম বাড়তি। কেজি প্রতি চাল ভাঙানো আট টাকার জায়গায় এখন দশ টাকা। পিঠা তো আগের দরে বিক্রি করছি। তবে আগের বছর গড়ে সব পেশাজীবীর মানুষ পিঠা খেতো। করোনার কারণে এখন কম। বর্তমানে চালকেরাই বেশি।
মেল মালিক হান্নান জানান, আমরা হলুদ, মরিচ, জিরা ইত্যাদি মসলা ভাঙানোর পাশাপাশি শীত মৌসুমে চাল ভাঙানোর ব্যবস্থা রাখি। এখন বিদ্যুতের খরচসহ অন্যান্য খরচ বেড়েছে। তেমন বেশি টাকা নেয়া হচ্ছে না।
সিএনজি চালক কবির হোসেন জানান, শীতে বৌ ঝিয়ের হাতের তৈরি পিঠা পাবো কই? শহরে ব্যাচেলর থাকি। রাস্তার পাশে পিঠার দোকান থেকে পিঠা খাই। ঘরে বানানো পিঠা খেতে যে তৃপ্তি তা পাওয়া যায় না। বুঝতেইতো পারতেছেন, পাঁচ-ছয় টাকা দামের পিঠায় সামান্য গুঁড় আর একটু নারকেল।
পোশাক শ্রমিক রেহানা জানান, সারাদিন কাজে থাকি। ইচ্ছে করলেও পিঠা বানিয়ে পরিবার নিয়ে খাওয়া সম্ভব হয় না। তাই দোকান থেকে পিঠা নিয়ে যাই। ছেলে-মেয়েরা আছে, খাবে।