বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক: ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরি করে গোটা বিশ্বকে চমকে দিল চিন। অন্যতম মহাশক্তিধর দেশটি তাদের পরমাণু সংযোজন প্রযুক্তি (নিউক্লিয়ার ফিউশন) উন্নয়নে আর এক গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য পেয়েছে।
‘এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপারকনডাক্টিং টোকাম্যাক’ (ইস্ট), যা ‘কৃত্রিম সূর্য’ নামে পরিচিত, ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এক হাজার সেকেন্ড ধরে প্লাজমা স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছে।
‘প্লাজমা স্থিতিশীল রাখা’র অর্থ, উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাসীয় পদার্থকে এমন একটি অবস্থায় রাখা যেখানে পরমাণুগুলির ইলেক্ট্রন আলাদা হয়ে যায় এবং পদার্থটি আধানযুক্ত কণায় (আয়ন ও ইলেক্ট্রন) পরিণত হয়। এই অবস্থাকেই প্লাজমা বলে। এর আগে ২০২৩ সালে ৪০৩ সেকেন্ড ধরে প্লাজমা স্থিতিশীল রাখার রেকর্ড ছিল চিনের।
সূর্যের আয়ু ফুরিয়ে গেলে পৃথিবীর কী হবে, তা নিয়ে বহুদিন ধরেই ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। সেই ভাবনা থেকেই ‘কৃত্রিম সূর্য’ তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছিল চিন। পাশাপাশি পরিবেশের ক্ষতি না করে, বিদ্যুতের ঘাটতিপূরণের লক্ষ্যও ছিল। আর তাতেই এবার বড় সাফল্য অর্জন করেছে তারা।
চায়না অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর ইনস্টিটিউট অফ প্লাজমা ফিজিক্সের পরিচালক সং ইয়ুনতাও জানিয়েছেন, ‘একটি সংযোজন ডিভাইসের দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীল কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভবিষ্যতের পরমাণু সংযোজন কেন্দ্রগুলিতে ধারাবাহিক শক্তি উৎপাদনের জন্য অত্যাবশ্যক।’
তাঁর আশা, ইস্ট-এ আন্তর্জাতিক সহায়তা মিলবে এবং এর মাধ্যমে ফিউশন এনার্জিকে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা সম্ভব হবে।
কৃত্রিম সূর্যের পথে অগ্রগতি
চীনের গবেষকরা আশা করছেন, চলতি বছরের শেষ নাগাদ গবেষণা ও অবকাঠামোগত কাজ সম্পন্ন হবে। এই প্রকল্প সফল হলে তা বৈশ্বিক জ্বালানি চাহিদার জন্য একটি পরিবেশবান্ধব এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে।
চীনের এই গবেষণার অগ্রগতি বৈজ্ঞানিক মহলে বড় ধরনের সাড়া ফেলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কৃত্রিম সূর্য তৈরির এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যতের জ্বালানি সংকট সমাধানে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে।
বিশ্বের অনেক দেশই ফিউশন রিঅ্যাকটর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে। তবে এ প্রযুক্তিতে এবার উল্লেখযোগ্য সফলতা পেয়েছে চীন। দেশটির বানানো নিউক্লিয়ার ফিউশন রিঅ্যাকটর ডিভাইস সূর্যের চেয়েও পাঁচ গুণ বেশি তাপমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
চীনের ‘কৃত্রিম সূর্য’ বানানোর প্রকল্পটি এক্সপেরিমেন্টাল অ্যাডভান্সড সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক (ইস্ট) নামে পরিচিত।
শুধু চীনই নয়, এ ধরনের প্রযুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছে বিশ্বের শক্তিশালী দেশগুলো। ফ্রান্সের মারসেলেতে রয়েছে ফিউশন প্রযুক্তির সবচেয়ে বড় রিঅ্যাকটর ইন্টারন্যাশনাল থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাকটর।
যুক্তরাজ্যও নিজস্ব ফিউশন রিঅ্যাকটর বানানোর কাজ করছে। তবে চীনের ৭ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাই কিন্তু ফিউশন প্রযুক্তিতে অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা নয়। ২০২০ সালে কোরিয়ান সুপার কন্ডাকটিং টোকামাক অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টার (কেস্টার) প্রায় ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উৎপাদন করতে সক্ষম হয়।
তাদের অর্জিত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত ধরে রাখতে সক্ষম হয় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মধ্যে তারা ১০ কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা ৫ মিনিটের জন্য ধরে রাখতে চায়।