ইতিহাসে প্রখ্যাত অভিযাত্রী হিসেবে যাঁদের নাম স্বর্ণাক্ষরে মুদ্রিত হয়ে আছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ইতালীয় নাবিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস (Christopher Columbus)। বিখ্যাত এক নাবিক এবং উপনিবেশ স্থাপনকারী হিসেবে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন তিনি। মূলত আমেরিকার আবিষ্কর্তা হিসেবেই সারা বিশ্বের কাছে পরিচিত তিনি, যদিও গবেষণায় উঠে আসে কলম্বাস প্রথম ব্যক্তি হিসেবে আমেরিকায় পদার্পণ করেননি। কিন্তু ইউরোপীয়দের আমেরিকা অন্বেষণ এবং সেখানে উপনিবেশ বিস্তারের পথ প্রশস্ত করে দিয়েছিলেন তিনি। ক্যারিবিয়ান, মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকায় সফলভাবে মোট চারটি সমুদ্রযাত্রা পরিচালনা করেছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। মশলা বাণিজ্য থেকে লাভের আশায় তিনি ইস্ট ইন্ডিজের দিকে যাওয়ার জন্য পশ্চিম সমুদ্রপথ অন্বেষণের পরিকল্পনা করেন। যদিও এই অভিযানে বেরিয়ে তিনি চলে যান আমেরিকায় এবং বাহামার মতো দ্বীপ আবিষ্কার করেন, কিউবা, হিস্পানিওলা দ্বীপগুলি পরিদর্শন করেন কোথাও বা বসতি স্থাপনও করেন। উপনিবেশ স্থাপনকারী কলম্বাসের বর্বরতার জন্য পরবর্তীকালে তাঁকে হিস্পানিওলা দ্বীপের গভর্নর পদ থেকে অপসারণ করা হয়, এমনকি গ্রেপ্তারও করা হয় তাঁকে। তাঁর প্রথম সমুদ্রযাত্রার পর ওল্ড ওয়ার্ল্ড এবং নিউ ওয়ার্ল্ডের মধ্যে স্থানান্তর ‘কলম্বিয়ান এক্সচেঞ্জ’ নামে পরিচিত।
পণ্ডিতদের মতে ১৪৫১ সালে উত্তর-পশ্চিম ইতালীয় উপকূলের জেনোয়া প্রজাতন্ত্রে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের জন্ম হয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাস নামটি লাতিন ক্রিস্টোফোরাস কলম্বাসের ইংরেজিকরণ। প্রাথমিকভাবে কলম্বাসের মাতৃভাষা একটি জেনোজ উপভাষা ছিল বলে অনুমান করা হয়, কিন্তু সেই ভাষায় কখনও লেখালেখি করেননি তিনি। তাঁর বাবা ডোমেনিকো কলম্বো (Domenico Colombo) পেশায় ছিলেন একজন উল তাঁতি। কাজ করতেন জেনোয়া এবং সাভোনায়। এছাড়াও ডোমেনিকো একটি পনির স্ট্যান্ডের মালিক ছিলেন যেখানে যুবক কলম্বাস একজন সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর মায়ের নাম ছিল সুজানা ফন্টানারোসা ( Susanna Fontanarossa)৷ কলম্বাসের আরও যে তিন ভাই ছিল তাঁরা হলেন, বার্তোলোমিও, জিওভানি পেলেগ্রিনো এবং গিয়াকোমো যিনি ‘ডিয়েগো’ নামেও পরিচিত ছিলেন। কলম্বাসের একমাত্র বোনের নাম ছিল বিয়ানচিনেটা। কলম্বাস ছিলেন তাঁর বাবা-মায়ের সকল সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ সন্তান। কলম্বাস লোমবার্ড বংশোদ্ভূত পর্তুগিজ সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি বার্তোলোমেউ পেরেস্ত্রেলোর কন্যা ফেলিপা পেরেস্ত্রেলো-ই-মনিজকে (Felipa Perestrello e Moniz) বিয়ে করেছিলেন। ১৪৭৯ বা ১৪৮০ সালে তাঁদের পুত্র দিয়েগোর জন্ম হয়।
কলম্বাস মূলত স্বশিক্ষিত ছিলেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার খুব বেশি সুযোগ হয়নি তাঁর। তবে নিজে নিজেই জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞান, নৌ-বিদ্যা ইত্যাদি বিষয়ে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন। এছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় কথা বলতে পারতেন তিনি। ভ্রমণের সময়ে স্প্যানিশ শিখেছিলেন, তাছাড়া লাতিন ভাষাতেও দখল ছিল তাঁর। ধ্রুপদী সাহিত্যের সঙ্গেও ভালরকম পরিচিত ছিলেন তিনি এবং মনে করা হয় যে টলেমি ও মারিনাসের কাজ তিনি মনোযোগ সহকারে অধ্যয়ন করেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি জাহাজ চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং সেই বয়সেই দ্রুত তা রপ্ত করে নিয়েছিলেন।
তাঁর নিজেরই এক লেখা থেকে জানতে পারা যায় যে, চোদ্দ বছর বয়সে তিনি প্রথম সমুদ্রযাত্রায় যান। সেই অল্প বয়সেই উত্তরে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ এবং দক্ষিণে প্রায় ঘানা পর্যন্ত সমুদ্রপথে পাড়ি দিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। সেই কিশোর বয়সেই ভূমধ্যসাগর এবং এজিয়ান সাগরে বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক ভ্রমণে গিয়েছিলেন তিনি। ১৪৭০ সালে কলম্বাসের পরিবার সাভেনায় চলে যায়। সেখানে তাঁর বাবা ডোমেনিকো একটি সরাইখানার দায়িত্ব নেন। ১৪৭৩ সালে কলম্বাস জেনোয়ার ধনী স্পিনোলা, সেঞ্চুরিয়ন এবং ডি নিগ্রো পরিবারের জন্য ব্যবসায়িক এজেন্ট হিসেবে শিক্ষানবিশি শুরু করেন। ১৪৭৪ সালে ২৩ বছর বয়সে তাঁকে এজিয়ান সাগরের খিওস দ্বীপে যাওয়ার একটি জাহাজের নাবিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। পরে জেনোয়া দ্বারা শাসিত এজিয়ান দ্বীপ চিওসে ভ্রমণ করেন তিনি। ১৪৭৬ সালের মে মাসে তিনি উত্তর ইউরোপে মূল্যবান পণ্যসম্ভার বহনের জন্য জেনোয়া কর্তৃক প্রেরিত একটি সশস্ত্র কনভয়ে অংশ নেন। সেবছরই বাণিজ্যিক নৌ-বহর পর্তুগালের উপকূলে ফরাসি নৌ-বহর কর্তৃক আক্রান্ত হয়। জাহাজ পুড়ে যায় এবং কলম্বাস সাঁতার কেটে পর্তুগালে পালিয়ে এসে প্রাণে বাঁচেন। সম্ভবত ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল ও আয়ারল্যান্ডের গালওয়েতেও গিয়েছিলেন তিনি। তাঁর আইসল্যান্ড ভ্রমণের সত্যতা নিয়ে অবশ্য পণ্ডিতদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ১৪৭৭ সালে একটি পর্তুগিজ জাহাজে করে ক্রিস্টোফার কলম্বাস গালওয়ে থেকে লিসবন যান। লিসবনে তাঁর ভাই বার্তোলোমিও মানচিত্র নির্মাণের কাজ করতেন। তাঁর সঙ্গে কিছুদিন সেই ব্যবসাতে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৪৮৫ সাল পর্যন্ত কলম্বাস লিসবনে ছিলেন। ১৪৭৮ সালে সেঞ্চুরিয়নরা চিনি কেনার জন্য তাঁকে মাদেইরাতে পাঠায়। ১৪৮২ থেকে ১৪৮৫ সালের মধ্যে কলম্বাস পশ্চিম আফ্রিকার উপকূল বরাবর বাণিজ্য করেছিলেন, গিনি উপকূলে (বর্তমান ঘানায় ) এলমিনার পর্তুগিজ বাণিজ্য পোস্টে পৌঁছেছিলেন। পোর্টো সান্টোতে ফিরে এসে কলম্বাস দেখেন তাঁর স্ত্রীয়ের মৃত্যু হয়েছে। ১৪৮৫ সালে তিনি পর্তুগাল ত্যাগ করেন এবং ক্যাস্টিলের উদ্দেশ্যে রওনা দেন যেখানে ১৪৮৭ সালে বিয়াট্রিজ এনরিকেজ ডি আরানা (Beatriz Enríquez de Arana) নামে কুড়ি বছর বয়সী একজন অনাথ মহিলার সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তাঁর। পরবর্তীতে তাঁকেই বিবাহ করেন কলম্বাস। বিয়াট্রিজের সঙ্গে কলম্বাসের দেখা হয়েছিল সম্ভবত কর্ডোবায়। ১৪৮৮ সালে অবিবাহিত অবস্থাতেই বিয়াট্রিজ তাঁর ও কলম্বাসের পুত্র ফার্নান্দো কলম্বাসের জন্ম দিয়েছিল। মার্কোপোলো, জন ম্যান্ডেভিলদের ভ্রমণ সংক্রান্ত কাজ মন দিয়ে পড়েছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস।
চিন এবং ভারতের নিকটবর্তী এশীয় দ্বীপগুলি তাদের মশলা ও সোনার জন্য বিখ্যাত ছিল, ফলত ইউরোপীয়দের কাছে খুবই আকর্ষণীয় গন্তব্য ছিল সেসব স্থান। কিন্তু মধ্য-প্রাচ্যের মধ্যে দিয়ে বিস্তৃত বাণিজ্যপথে মুসলিম আধিপত্য পূর্ব দিকে ভ্রমণকে কঠিন করে তুলেছিল। সেই কারণে কলম্বাস সমুদ্রপথে পশ্চিমদিকে যাত্রা করে আটলান্টিক পেরিয়ে এশিয়া পৌঁছানোর একটি পথের পরিকল্পনা করেন বার্তোলোমিওর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে। তাঁর বিশ্বাস ছিল এই পথে গেলে দ্রুত এবং নিরাপদভাবে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে। কলম্বাসের মনে হয়েছিল পৃথিবীটা গোলাকৃতি, সেই কারণে পশ্চিম থেকে যাত্রা করলে তিনি সহজেই পূর্বদিকে পৌঁছে যাবেন। কিন্তু এই সমুদ্রযাত্রার পরিকল্পনা কার্যকর করবার জন্য প্রয়োজন বিপুল অর্থের। সেই কারণে আনুমানিক ১৪৮৪ সালের মধ্যে কলম্বাস পর্তুগালের রাজা দ্বিতীয় জনের কাছে তাঁর পরিকল্পিত সমুদ্রযাত্রার জন্য আর্থিক অনুদানের আর্জি পেশ করেন। রাজা তাঁর উপদেষ্টাদের কাছে প্রস্তাবটি পেশ করলে তা বাতিল করে দেওয়া হয়। ১৪৮৮ সালে পুনরায় পর্তুগালের আদালতে আপিল করেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস, কিন্তু সেবারেও হতাশ হতে হয় তাঁকে। তিনি তাঁর ভাই বার্তোলোমিওকে ইংল্যান্ডের সপ্তম হেনরির কাছে পাঠিয়েছিলেন অনুদানের জন্য। কিন্তু পথে জলদস্যুদের দ্বারা আটক হয়ে ১৪৯১ সালে ফিরে আসেন বার্তোলোমিও। আরাগনের স্প্যানিশ রাজা দ্বিতীয় ফার্দিনান্দ এবং ক্যাস্টিলের প্রথম ইসাবেলা বিবাহ করে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের বেশ কয়েকটি রাজ্যকে একত্রিত করেছিলেন। তাঁদের কাছে গিয়ে কলম্বাস আর্থিক অনুদানের কথা জানান। রাজার এক কেরানি লুইস ডি সান্টাঞ্জেলের দেওয়া যুক্তিতে এই সমুদ্রযাত্রা বিষয়ে অনেকটা নিশ্চিন্ত হন রানি ইসাবেলা। ১৪৯২ সালের এপ্রিলে রাজা ফার্দিনান্দ এবং রানি ইসাবেলা কলম্বাসকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি সফল হলে তাকে মহাসাগরের অ্যাডমিরালের পদ দেওয়া হবে, এমনকি স্পেনের জন্য দাবি করতে পারেন এমন সব নতুন জমির ভাইসরয় এবং গভর্নর নিযুক্ত করবেন তাঁকে।
১৪৯২ থেকে ১৫০৪ সালের মধ্যে ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেন এবং আমেরিকার মধ্যে চারটি সমুদ্রযাত্রা সফলভাবে সম্পন্ন করেন। ১৪৯২ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় পিন্টা, নিনা এবং সান্তা মারিয়া নামক তিনটি জাহাজ ও ১০৪ জন লোক নিয়ে পালোস দে লা ফ্রন্টেরা থেকে রওনা দিয়েছিলেন কলম্বাস। প্রথমে ক্যানারি দ্বীপপুঞ্জে কিছু সময়ের জন্য থেমেছিলেন। তারপর আটলান্টিক পেরিয়ে পশ্চিমদিকে প্রায় ৩৬ দিন যাত্রা করবার পর বাহামার একটি দ্বীপে পদার্পণ করেন তিনি। তাঁর বিশ্বাস ছিল তিনি এশিয়ার একটি দ্বীপে পৌঁছেছেন, সেই কারণে দ্বীপের নামকরণ করেছিলেন সান সালভাদর এবং সেখানকার অধিবাসীদের ‘ইন্ডিয়ান’ নামে অভিহিত করেন৷ স্থানীয়রা সেই দ্বীপটিকে ‘গুয়ানাহানি’ বলত। সেখানে লুকায়ান, তাইনো এবং আরাওয়াক জনজাতির মুখোমুখি হন কলম্বাস। তাঁদের কানে সোনার অলঙ্কার দেখতে পেয়ে কিছু আরাওয়াককে বন্দি করেন তিনি এবং সোনার উৎসের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করেন। এই সমুদ্রযাত্রার সময়ে কলম্বাস একটি ডায়েরি রচনা করতেন নিয়মিত। তাতে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার খুঁটিনাটি তথ্য পাওয়া যায়। চিনের উদ্দেশ্যে যাত্রা চালিয়ে যান তিনি এবং কিউবা ও হিস্পানিওলাতে পৌঁছান। ১৪৯২ সালের ডিসেম্বরে কলম্বাসের জাহাজ সান্তা মারিয়া হিস্পানিওলার উপকূলে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে যদিও কোনও প্রাণহানি হয়নি। ১৪৯৩ সালের ১৫ মার্চ প্রথম সমুদ্রযাত্রা শেষ করে স্পেনে পৌঁছোন তিনি। নিনা জাহাজে সীমিত জায়গা থাকায় নাভিদাদ নামক একটি দূর্গ প্রস্তুত করে সেখানে ৪০ জনকে রেখে এসেছিলেন তিনি। কেউ বলেন সোনার সন্ধানের জন্য সেই চল্লিশ জন রয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসে তাঁর ডায়েরিটি রানি ইসাবেলাকে দিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস।
১৪৯৮ সালের ৩০ মে স্পেনের সানলুকার থেকে ছয়টি জাহাজ নিয়ে তৃতীয় সমুদ্রযাত্রা শুরু করেন কলম্বাস। এবারে তিনি আরও দক্ষিণের পথে যাত্রা করেছিলেন। ৩১ জুলাই তাঁরা ক্যারাবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের সবচেয়ে দক্ষিণে ত্রিনিদাদে পৌঁছান। ভেনেজুয়েলার পারিয়া উপদ্বীপের দক্ষিণে তিনি বেশ কয়েকটি ছোট নৌকো পাঠিয়েছিলেন। এটি দক্ষিণ আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে ইউরোপীয়দের প্রথম অবতরণ। এছাড়াও মার্গারিটা, টোবাগো, গ্রেনাডা নানা দ্বীপ ভ্রমণ করেন কলম্বাস। ১৯ আগস্ট তিনি হিস্পানিওলায় ফিরে আসেন। সেখানে অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও বর্বরোচিত শাসন চালাচ্ছিলেন কলম্বাস। সেকারণে তাঁকে গভর্নর পদ থেকে বহিষ্কার এবং কারাবন্দি করে রাখা হয়েছিল।
১৫০২ সালের ৯ মে কলম্বাস তাঁর ভাই বার্তোলোমিও এবং পুত্র ফার্নান্দোর সঙ্গে, সান্তা মারিয়াসহ আরও তিনটি জাহাজ ও ১৪০ জন লোক নিয়ে চতুর্থ সমুদ্রযাত্রার জন্য রওনা দেন। মুরদের দ্বারা অবরুদ্ধ পর্তুগিজ সৈন্যদের উদ্ধারের জন্য মরক্কোর উপকূলে আরজিলায় যাত্রা করেন তিনি। জামাইকায় অল্প সময়ের জন্য থেমে কলম্বাস মধ্য আমেরিকার দিকে যান এবং হন্ডুরাসের উপকূলে পৌঁছান। তিনি হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া এবং কোস্টা রিকার উপকূল অন্বেষণে দুই মাস অতিবাহিত করেন। ১৫০৩ সালের জানুয়ারিতে তিনি বেলেন নদীর মুখে একটি গ্যারিসন প্রতিষ্ঠা করেন। কিউবার উপকূলে ঝড়ে তাঁদের জাহাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ছয় মাস জামাইকায় আটকে থাকেন তাঁরা। অবশেষে ১৫০৪ সালের ৭ নভেম্বর স্পেনের সানলুকারে পৌঁছান।
ক্রিস্টোফার কলম্বাস প্রথম আমেরিকা আবিষ্কার করেননি। তাঁর আগে লিফ এরিকসনের নেতৃত্বে একটি অভিযান আমেরিকায় এসেছিল। তবে কলম্বাস প্রথম ইউরোপীয় যিনি আমেরিকায় বসতি স্থাপন করেন এবং ইউরোপীয়দের কাছে আমেরিকায় বাণিজ্য এবং উপনিবেশ বিস্তারের পথ সুগম করে দেন৷ প্রতি বছর ১২ অক্টোবর স্পেন ও আমেরিকা জুড়ে ‘কলম্বাস দিবস’ পালিত হয়।
১৫০৬ সালের ২০ মে ৫৪ বছর বয়সে স্পেনের ভ্যালাডোলিডে গুরুতর আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের মৃত্যু হয়।