৪ জন আজীবন বহিষ্কার
চন্দন ভট্টাচার্য্য, খুলনা: খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের( কুয়েট) এর শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৪ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এদের মধ্যে ৪ জনকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে। অন্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার ও আর্থিক জরিমানা করা হয়েছে। ৫ জানুয়ারী বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
শিক্ষক ড. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি ৪৮ পৃষ্ঠার তদন্ত রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে পর্যালোচনা শেষে চারজন ছাত্রকে আজীবন বহিস্কারসহ ৪৪ ছাত্রের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। যা আজ অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
আজীবন বহিষ্কার ৪
আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে- সাদমান নাহিয়ান সিজান (১৩০৭০২৪), হাসান আব্দুল কাইয়ুম (১৬০৫০৩৫), মো. কামরুজ্জামান রাজ্জাক (১৬০৫০৩৯) ও রিয়াজ খান নিলয়কে (১৬০৭০৭৫)।
এছাড়া দুই শিক্ষাবর্ষের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে মোঃ তাহমিদুল হক ইশরাক (১৫০১০৯০), মাহমুদুল হাসান (১৬০১০২৯), মোঃ সাদমান সাকিব (১৫১৯০৩৩), মাহিন মুনতাসির (১৬২৭০০৭), রাগিব আহসান মুন্না (১৫১৯০৪৮), মীর জামিউর রহমান (১৬০৫০২৪) ও রুদ্রনীল সিঃহ শুভ (১৩১১০৪৫)।
যাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তি
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে আনিকুর রহমানকে (১৭০৩১১৭)।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এক শিক্ষাবর্ষের জন্য বহিষ্কার ও হল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হয়েছে, তবে এই শাস্তি আপাতত স্থগিত থাকবে। ভবিষ্যতে কোন অপরাধ বা অসদাচারণ প্রমাণিত হলে এই শাস্তি আপনাআপনি বলবৎ হবে এসব ছাত্রের বিরুদ্ধে : ফয়সাল আহমেদ রিফাত (১৬০৫০৯৩), ইমরান হোসেন আউয়াল (১৭১১০৪৫), মোঃ খালিদ সাউফুল্লাহ সুভ্র (১৬০১১০১৩), মোঃ ফাইয়াজ রহমান (১৭০৭০৭৭), নুর মোহাম্মদ (১৬০৫০৮৮), মোঃ নাইমুর রহমান অন্তু (১৬২৭০১০), মোঃ সাবিদ জোয়াদ্দার (১৭০১১০৮), মোঃ মাহবুবুর রহমান রাফি (১৭০১০৬৮), মোঃ আতিকুর রহমান (১৭০১১০৪), মোঃ সাদিকুর ইসলাম (১৭১১০৪৮), নাজমুস সাকিব সিফাত (১৭০১০৮৪), মোঃ গোলাম কিবরিয়া (১৭০১০৮৮), ওসমান ফারুক (১৭০৭০৭৬), সাগর তরফদার (১৭০১০৯৭), প্রান্ত কর্মকার (১৭০১১১৭), সাফাত হাসান (১৭২৭০০৩), মানিক কুমার সরকার (১৭০৫০৪৪), মোঃ আমিনুর ইসলাম (১৬০৫০৭৪), মোঃ মুহিদবীন হোসেন সরদার (১৭০৭০৮১), মোঃ ইমতিয়াজ আহমেদ (১৬২৭০২০), সাফায়েত মাহবুব (১৭০১০৯১) ও মোঃ আনোয়ার হোসেন সাকিব (১৭০৫০৩৮)।
দশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে আহসানুল আবেদীন (১৭১১০৪২), কবির হোসেন (১৭১১০৪৬), মোঃ শুভ মন্ডল (১৭০১১১২), শাহরিয়ার আহমেদ মুশফিক (১৭০১১১১), ফয়সাল কবির ফাহিম (১৭০১১০৯), শাফিন আহমেদ অনন্ত (১৭১১০৩৮), মোঃ হান্নান ইসলাম (১৮০১০৩৭), হাফিজ সরদার (১৮০১০৩৩), সানজিদুল ইসলাম (১৯০৭০৭৯) ও মোঃ সাদাফ হেলাল (১৫১৯০২৬)।
উল্লেখ্য, গত ৩০ নভেম্বর বিকেলে কুয়েটের ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন মারা যান। তার মৃত্যুর পর সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এই মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ তার অনুগত ছাত্ররা দায়ী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের লালনশাহ হলের ডিসেম্বর মাসের খাদ্য ব্যবস্থাপক (ডাইনিং ম্যানেজার) নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিমকে চাপ দিয়ে আসছিলেন ফজলুল হক হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও কুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সাদমান নাহিয়ান সেজানের নেতৃত্বাধীন কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের রাস্তায় ড. সেলিমকে জেরা শুরু করেন। পরে তারা শিক্ষককে অনুসরণ করে তার ব্যক্তিগত কক্ষে (তড়িৎ প্রকৌশল ভবন) প্রবেশ করেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, তারা আনুমানিক আধা ঘণ্টা শিক্ষকের রুমে অবস্থান করেন। পরে কক্ষ থেকে বেরিয়ে ড. সেলিম দুপুরের খাবার খেতে ক্যাম্পাস থেকে নিজ বাসায় যান। দুপুর আড়াইটার দিকে তার স্ত্রী লক্ষ্য করেন তিনি বাথরুম থেকে বের হচ্ছেন না। দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও শিক্ষার্থীরা এই মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড দাবি করে আন্দোলন করে আসছিলেন।
পরে গত ৩ ডিসেম্বর জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজানসহ ৯ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে ও পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। সিন্ডিকেটের ওই সভায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়, যা ২৩ ডিসেম্বরের আরেকটি জরুরি সভার মাধ্যমে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধের মেয়াদ বাড়ানো হয়।
আগামীকাল ৭ জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খুলে দেওয়া হবে এবং ৯ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে।