কামরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম: খরায় পুড়ছে চট্টগ্রামের চা বাগান মালিকদের স্বপ্ন। বাগানের পর বাগানের বিবর্ণ রূপ। বাগান ব্যবস্থাপকরা আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা বাগানগুলোতে সেই নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। টানা সাড়ে ৫ মাসে ছিঁটেফোটা বৃষ্টিও হয়নি। মওসুমের শুরুতে অনাবৃষ্টি ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে চা শিল্পের জন্য। ফটিকছড়ির এক বাগান ব্যবস্থাপক বিজনেসটুডে২৪ কে বললেন, অনাবৃষ্টিতে ভয়াবহ রকমের উৎপাদন বিপর্যয়ের সম্মুখীন চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় সব বাগান। কয়েকদিন আগে যে বৃষ্টিপাত হয়েছিল তা উদালিয়া এবং কর্ণফুলী টি এস্টেটে হয়েছে। অন্যান্য বাগানে মাটিও ভিজেনি।
অপর এক বাগান ব্যবস্থাপক জানালেন, গত এক দশকের মধ্যে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাগানগুলো এত খারাপ অবস্থার সম্মুখীন হয়নি। এই প্রথম মারাত্মক রকমের সংকটে। ২০১৯ সালের এ সময়েও চা কারখানা রাত-দিন চালু থাকতো। তাদের বাগানে প্রতিদিন ৮/৯ হাজার কেজি গ্রিন লিফ সংগৃহীত হতো। গত বছরের এপ্রিলে এ সময়ে ২/৩ ইঞ্চি বৃষ্টিপাত পাওয়া গেছে। প্রতিদিন ১২০০ কেজি পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ হয়েছে। আর এ বছর একই সময়ে দিনে ৫০০ কেজিও হচ্ছে না। কারখানা চলে একদিন, দুদিন পরপর। পানির উৎস হ্রদ, জলাশয় শুকিয়ে গেছে।
অবশ্য, এমন অবস্থায়ও দু’একটি বাগান অগ্রগতি ধরে রেখেছে। সেসব বাগানের ভূ-গর্ভস্থ সেচ ব্যবস্থা রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাতা তোলা বন্ধ থাকায় এখন বাগানের পুরনো গাছসমূহ কাটিং, নার্সারি তৈরি, শ্রমিকদের বাসা মেরামত, পাতা আনা-নেয়ার জন্য ট্রেইলার তৈরি, কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ওভারহলিং চলছে।
বাংলাদেশীয় চা সংসদ, চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রাক্তন সভাপতি, পঞ্চবটি টি এস্টেটের স্বত্ত্বাধিকারী আলহাজ নাসির উদ্দিন বাহাদুর জানালেন, বাগানের খুব খারাপ অবস্থা। চারা মরে যাচ্ছে। সেচ দিয়ে বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায় না। প্ল্যাকিং শুরু হয়েছিল। প্রথম নিলামের জন্য পাতা ব্রোকারের গোডাউনে পৌঁছে গেছে। কিন্তু এখন প্ল্যাকিং বন্ধ। দ্বিতীয় নিলামের জন্য চালান বিলম্বিত হচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন বৃষ্টি। নতুবা উৎপাদন মার খাবে।
বাগান ব্যবস্থাপকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ অঞ্চলের ২২ টি বাগানের মধ্যে অধিকাংশে শুরু হয়েছিল প্ল্যাকিং। বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে। সব বাগান বৃষ্টিপাতের অপেক্ষায়। বৃষ্টি হলে নতুন পাতা গজাতে শুরু করবে।
বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ এই ৩ মাস পাতা তোলা বন্ধ থাকে। আবার শুরু হয় এপ্রিলে। ডিসেম্বর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। তবে, সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত সময়ে।
উল্লেখ্য, অনাবৃষ্টিতে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চা বাগান পুড়লেও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাতা উত্তোলন পুরোদমে চলছে।