Home First Lead খরায় পুড়ছে চা বাগান

খরায় পুড়ছে চা বাগান

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

সিলেট: খরায় পুড়ছে চা বাগান। বিবর্ণ সবুজ রূপ বাগানের।কেবল বৃহত্তর সিলেট নয়, চট্টগ্রামেও একই অবস্থা। উত্তরের জেলা পঞ্চগড়েও খারাপ অবস্থা।

কোন কোন বাগানের সীমিত সেচব্যবস্থা রয়েছে।এরপরও কলসি ভর্তি পানি ছিটিয়ে গাছ বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলছে। গত মওসুমের রেকর্ড উৎপাদনের পর এবারে শুরু থেকে অনাবৃষ্টি।বাগান মালিকরা তাকিয়ে আছেন আকাশের দিকে।

ড. মোহাম্মদ আলী।
পরিচালক: বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট

বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআেই)’এর পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী আশংকা করেছেন যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টিপাত না হলে অধিকাংশ বাগানের গাছ মরে যাবে।

ফেব্রুয়ারির শেষদিক থেকে এ পর্যন্ত ছিঁটেফোটা বৃষ্টিপাতও হয়নি সিলেট অঞ্চলে। দিনে কখনও কখনও তাপমাত্রা ৩৭/৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধির সাথে সাক্ষাতকারে বিটিআরআই  পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলী জানালেন, দীর্ঘসময় ধরে চলছে প্রচণ্ড খরা। তাতে কোন কোন বাগানে গাছ মরতে শুরু করেছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন এখনই। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে যদি পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হয় অধিকাংশ বাগান চরম দুর্বিপাকে পড়বে। গাছ মারা গিয়ে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

জানান, কোন কোন বাগানের রয়েছে স্প্রিংকলার সিস্টেম। সেচ দিয়ে সেসব বাগান চেষ্টা করছে গাছ টিকিয়ে রাখার। কিন্তু বৃষ্টি আর সেচের মধ্যে তফাৎ বিস্তর। বৃষ্টির সময় আবহাওয়া শীতল থাকে। আর অন্য সময় কৃত্রিম সেচ ব্যবস্থায় যে পানি দেয়া হয় তার অনেকটা আবার বাষ্প হয়ে উবে যায়। অনাবৃষ্টি অব্যাহত থাকলে সামনে রোগবালাইর আশংকা রয়েছে।

ড. মোহাম্মদ আলী উল্লেখ করেন, প্লাকিং শুরু হয়নি, চলছে ট্রিপিং। কয়েক দফায় ট্রিপিংয়ের পর পাতা একটি লেভেলে আসলে তারপর প্লাকিং আরম্ভ হবে।সবার অপেক্ষা এখন বৃষ্টিপাতের জন্য।

ডিসেম্বরে শেষ হয়ে যায় উৎপাদন মওসুম। তখন চা কারখানা অচল থাকে। এ সময় চা গাছের মাথা ছাটাই করে দেয়া হয়। মধ্য জানুয়ারির মধ্যে দিতে হয় ডিপ স্কিপ করে। ফেব্রুয়ারিশেষে বা মার্চের প্রথমদিকে বৃষ্টিতে কুঁড়ি বের হয়। বিবর্ণ বাগান সবুজ হয়। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন বৈরি প্রকৃতির কারণে।

আলহাজ নাসিরউদ্দিন বাহাদুর। স্বত্ত্বাধিকারি: পঞ্চবটি টি এস্টেট

বাংলাদেশীয় চা সংসদ চট্টগ্রাম শাখার সাবেক সভাপতি, পঞ্চবটি টি এস্টেটের স্বত্ত্বাধিকারি আলহাজ নাসিরউদ্দিন বাহাদুর জানান, চা উৎপাদন বৃদ্ধিতে ব্যবস্থাপনা দিক থেকে দক্ষতার পাশাপাশি প্রকৃতির উপরও নির্ভর করতে হয়। কিন্তু এ বছর প্রকৃতি বিরূপ। অনাবৃষ্টির কারণে উৎপাদন মার খাচ্ছে। সেই সঙ্গে গুণগত মান খারাপ হচ্ছে। সহসা বৃষ্টিপাত না হলে উৎকৃষ্ট মানের চা হবে না, হেক্টর প্রতি ফলনও হবে কম। আর এক সপ্তাহ যদি অনাবৃষ্টি থাকে তাহলে গাছ মারা যাবে এবং নানা রোগবালাই দেখা দেবে বলে আশংকা করেন তিনি।

মো. সিরাজুল ইসলাম। জেনারেল ম্যানেজার: হামিদিয়া টি কোম্পানি

সিলেটের হামিদিয়া টি কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ও প্রবীণ প্লান্টার মো. সিরাজুল ইসলাম-এর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিজনেসটুডে ২৪ প্রতিনিধিকে বলেন, বৃষ্টির অভাবে ক্লোন গাছসমূহ মারা যাচ্ছে। ক্লোন গাছের শিকড় নিচের দিকে যায় না, ডানে বায়ে যায়। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টিতে তাই মরে যাচ্ছে। কোন কোন বাগান কৃত্রিম সেচ দিয়ে গাছ টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তা বেশ ব্যয়বহুল। তাই সবার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। কোন কোন বাগানে চলছে টিপিং, কোন কোন বাগানে শুরু করতে পারেনি।

জাহাঙ্গীর আলম। সভাপতি: বাংলাদেশীয় চা সংসদ, চট্টগ্রাম শাখা

বাংলাদেশীয় চা সংসদ, চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি হালদা ভ্যালি টি এস্টেটের সিনিয়র ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম জানান, মওসুমের প্রথমদিকে চট্টগ্রামে আবহাওয়া ছিল ভাল। ফেব্রুয়ারির শেষদিকে বৃষ্টিপাত হয়েছিল। তাতে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছিল চা শিল্পের জন্য। গাছসমূহ ছিল স্বাস্থ্যবান। মার্চের প্রথমদিকে প্লাকিং শুরু হয়। অধিক পরিমাণে পাতা পাওয়া যাবে বলে আশা করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে যে অবস্থা আবহাওয়ার তাতে প্রত্যাশিত ফলন পাওয়া বেশ কঠিন হবে। তবে, হালদা-ভ্যালির মত সেচব্যবস্থা যাদের রয়েছে তাদের ক্ষতির পরিমাণ হবে কিছুটা কম।তবে, শিগগির যদি বৃষ্টিপাত হয় তাতে উৎপাদন ক্ষতি কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।