মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রীরা প্রথমে হলের ভেতরের তলা ভেঙে বাইরে আসে। পরে হলের গেট খুলে প্রতিবাদ শুরু করে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জনা যায়, হলের প্রোভোস্ট, সহকারী প্রোভেস্ট ছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধমক দেওয়া থেকে শুরু করে সিট বাতিলের হুমকি দেন। মঙ্গলবার এক ছাত্রী পারিবারিক কারণে বটি দিয়ে গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যান। এ ঘটনায় ছাত্রীদের রান্নার সরঞ্জাম জব্দ করার নিদের্শ দেয় হল কর্তপক্ষ। ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ, রাইস, কুকার, হিটার রুমে পাওয়া গেলে সিট বাতিল করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে হলের প্রোভোস্ট, সহকারী প্রোভোস্ট ছাত্রীদের ধমক দেন ও সিট বাতিলের হুমকি দেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মঙ্গলবার আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খাদিজা আক্তার তরকারি কাটার বটি দিয়ে নিজের গলা কাটার চেষ্টা করেন। গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যান তিনি।
এই ঘটনার পর ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নিদের্শ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনায় বলা হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইস কুকার, হিটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না সরালে, যার রুমে এগুলো পাওয়া যাবে তার সিট বাতিল হয়ে যাবে।
‘রান্নার সরঞ্জাম’ জব্দের নোটিশের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবিষয়ক পরিচালক অধ্যাপক মো. শরীফ হাসান লিমন বলেন, ‘যেহেতু একটি আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনা ঘটেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হল কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু তিনি হয়তো শিক্ষার্থীদের সেন্টিমেন্ট বুঝতে পারেননি। আশাকরি, প্রাধ্যক্ষ আসলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এদিকে, ১০ দফা দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস পেয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছেন। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ২টার পর তারা আন্দোলন স্থগিত করে হলে ফেরেন।
এর আগে, রাত সাড়ে ১০টার দিকে প্রথমে অপরাজিতা হলের ছাত্রীরা ভেতরের তালা ভেঙে বাইরে এসে গেট খুলে প্রতিবাদ শুরু করেন। পরে অন্য হলের শিক্ষার্থীরা যুক্ত হয়ে হাদী চত্বরে অবস্থান নিয়ে নিজেদের ১০ দফা দাবি জানান।
শিক্ষার্থীদের ১০ দাবি –
১। রাইস কুকার ও রান্নার সরঞ্জামাদি ব্যবহারের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে।
২। যৌন হয়রানির প্রতিবাদে সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলার কারণে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও পারিবারিক শিক্ষা তুলে কথা বলায় ক্ষমা চাইতে হবে।
৩। হলে প্রয়োজনে অভিভাবক ও নারী আত্মীয়দের থাকার অনুমতি দিতে হবে।
৪। পানিতে পোকা ও খাবারের সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে হবে।
৫। প্রভোস্টদের নিজ ডিসিপ্লিনের স্টুডেন্টদের ডেকে ব্যক্তিগত এবং একাডেমিক বিষয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে।
৬। হলের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
৭। যেকোনো পরিস্থিতিতে সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া বন্ধ করতে হবে।
৮। যেকোনো পরিস্থিতিতে হলের ছাত্রীদের মতামতকে প্রাধান্য দিতে হবে।
৯। আজকের (মঙ্গলবার) ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোনো শিক্ষার্থীকে ব্যক্তিগতভাবে হুমকি দেওয়া যাবে না।
১০। দাবি না মানলে প্রভোস্ট কমিটিকে পদত্যাগ করতে হবে।
অপরাজিতা হলের প্রভোস্ট রহিমা রিম্মি বলেন, শিক্ষার্থীর আমাদের সন্তান। তাদের সকল দাবি আমরা মেনে নিয়েছি। কারণ আমরা চাইনা সন্তানেরা কষ্ট পাক। তাদের হল তারা যেভাবে চাইবে আমরা সেভাবে চালাবে। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থী কখনও পতিপক্ষ হতে পারেনা। এটা আমরা বিশ্বাস করি না।
এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, হলের প্রভোস্ট, সহকারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ধমক দেওয়া থেকে শুরু করে সিট বাতিলের হুমকি দেন। মঙ্গলবার এক ছাত্রী ওই হলে বটি দিয়ে গলা কাটার চেষ্টা করলেও হাসপাতালে নিয়ে গেলে বেঁচে যান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রীদের রান্না করার সরঞ্জাম জব্দ করার নির্দেশ দেয় হল কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনায় বলা হয়, ইলেকট্রনিক ডিভাইস, রাইস কুকার, হিটারসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম না সরালে, যার রুমে এগুলো পাওয়া যাবে তার সিট বাতিল হয়ে যাবে।
শিক্ষার্থীরা আরও জানান, কিছুদিন আগে ফেসবুকে কমেন্ট করাকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রীকে ৪৫ মিনিট ধরে ধমক দেয় এবং শাসায় হল কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া ছাত্রীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে জানালে সমস্যা সমাধান না করে উল্টো শাসানো হয়।
ছাত্রীরা অভিযোগ করেন, সহকারী প্রভোস্ট ছাত্রীদের হুমকি দিয়ে বলেছেন, ‘হল তোমাদের সুযোগ, অধিকার নয়। যার সমস্যা সে হল থেকে নেমে যাও।’ এ কারণে আজ (মঙ্গলবার) আন্দোলন শুরু করেন তারা।