কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ সুবিধায় উন্নতি হওয়া খেলাপি ঋণ পরিস্থিতিকে টেকসই করতে চায়।
শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে আয়োজিত বার্ষিক সম্মেলনে, বন্ধকী সম্পত্তিকে কাজে লাগিয়ে সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ে তৎপর হওয়ার তাগিদ দেয়া হয়।
হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে ৯ বছর আগে সোনালী ব্যাংক একরকম গর্তে পড়ে যায়। মূলধন ঘাটতির পাশাপাশি ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে দেশের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকটি। এরপর দীর্ঘ দিনেও পুরোপুরি ঘুরে দাড়াতে পারেনি সোনালী ব্যাংক। এখনো বহন করছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা। ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণের ৭৫ শতাংশ মাত্র ২১ টি শাখায়। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) জেনারেল ম্যানেজারস অফিস ঢাকা-১ এর আওতায় থাকা ১০৬টি শাখার ব্যবস্থাপকদের সম্মেলনে বলা হয়, এ জোনে মোট ঋণের ৩৬ শতাংশ খেলাপি। যার ২২ শতাংশই গুলশান ও ইন্টারকন্টিনেন্টাল শাখার মাধ্যমে হল-মার্ক কেলেঙ্কারিতে খেলাপি হয়েছে।
ডিসেম্বর শেষের দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল শাখায় খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২৮ কোটি টাকা। জিএম অফিস ঢাকা-১ এর মহাব্যবস্থাপক ও সম্মেলনের সভাপতি, মো. আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ৩৩ এর ৫ ও ৭ ধারায় বন্ধকী সম্পত্তি পাওয়ার পরও যারা ঘুমিয়ে আছেন, ৮/৯ মাস পর সার্টিফিকেট তুলেন, এসব আর হতে পারবে না। আমি সব রকম সহায়তা করবো, এটা বাস্তবায়ন করলে খেলাপি ঋণ কমবে। এসব সম্পত্তি খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য আমাদের বড় হাতিয়ার। আমরা খেলাপি হার এক অঙ্কে নামাতে চাই।
সম্মেলনে বলা হয়, বর্তমানে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগযোগ্য তহবিল আছে সোনালী ব্যাংকের। তাই আমানত সংগ্রহের পাশাপাশি ঝুঁকি মূল্যায়ন করে ঋণ বিতরণেও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
সোনালী ব্যাংকের কোম্পানি সচিব, তাওহিদুল ইসলাম উপস্থিত শাখা ব্যবস্থাপকদের বলেন, করোনা মহামারিতে বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিল করায় হয়তো ব্যাংকের খেলাপি ঋণের ফিগারে উন্নতি হয়েছে। তবে এটা সত্যিকার চিত্র নয়। এটাকে কতটা টেকসই করা যাবে তা নিয়ে পরিচালনা পর্ষদে উদ্বেগ আছে। আপনাদের এখন এ সুবিধার বাইরে থাকা গ্রাহকরা এসে করোনার অজুহাত, ব্যবসা মন্দার অজুহাত আর দিতে পারবে না। তাই খেলাপি ঋণ আদায়ে মনোযোগী হন। আপনাদের পারফরমেন্স মূল্যায়নে এটাকে আমরা গুরুত্ব দেবো।
এসময় সোনালী ব্যাংকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র দাস বলেন, সামনের চ্যালেঞ্জ আরো বেশি। আমরা গেল বছরের হিসাবে দেশের সবচেয়ে বেশি পরিচালন মুনাফা করেছি। আপনারা সবাই করোনাকালে জনগণকে সেবা দিতে অনেক পরিশ্রম করেছেন। তাতে ফলাফল পাওয়া গেছে। এখন এই অবস্থা ধরে রাখতে হবে।
করোনা মহামারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ সুবিধায় ব্যাংকখাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা কমে নেমেছে ৮৯ হাজার কোটির নিচে।