Home চট্টগ্রাম ঝর্ণার রানী খৈয়াছড়া!

ঝর্ণার রানী খৈয়াছড়া!

 মোহাম্মদ জুয়েল

খৈয়াছড়া ঝর্ণা (Khaiyachora Waterfalls) চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের পাহাড়ে অবস্থিত একটি জলপ্রপাত। মিরসরাই এর এই ঝর্না বিস্ময়কর। খৈয়াছড়া আকার আকৃতি ও গঠনশৈলির দিক দিয়ে এটা নিঃসন্দেহে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝর্ণাগুলোর ১টি । এর মোট ৯ টি মুল ধাপ।খৈয়াছড়ায় প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ। অনেকে রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে তাবু টাঙ্গিয়ে অবস্থান করছেন।ঝুম ঝুম শব্দে বয়ে চলা ঝর্ণাধারায় গা ভিজিয়ে মানুষ যান্ত্রিক জীবনের অবসাদ থেকে নিজেকে ধুয়ে সজীব করে তুলছে খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। অনেকগুলো বিচ্ছিন্ন ধাপ, যা বাংলাদেশের আর কোন ঝর্ণাতে এখনও পর্যন্ত দেখা যায়নি। তাই ‘খৈয়াছড়া’ কে বলা হয় বাংলাদেশের ‘ঝর্নার রানী‘।
ধারণা করা হয় প্রায় ৫০ বছর আগে থেকেই প্রবাহিত হচ্ছে খৈয়াছড়া ঝর্ণাটি। জনমানবহীন পাহাড়ি এলাকা এবং ঝোপ ঝাড়ের আধিক্যের জন্য এটির অবস্থান আবিষ্কারে সময় লেগেছে। আবার অনেকে ধারণা করেন প্রায় ৬০ বছর আগে পাহাড়ি ঢলের ফলে এই ঝর্ণাটি তৈরি হয়েছে, এর পূর্বে এখানে ঝর্ণাটি ছিল না।
জায়গাটা মিরসরাই ঠাকুরদা দিঘির আগেই পড়ে। গ্রামের সবুজ শ্যামল আঁকা বাঁকা মেঠো পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু হলেও ভিজিয়ে নেয়া যায় নিঃসন্দেহে।খৈয়াছড়া এলাকার পাহাড়ে অবস্থান বলে এর নামকরণ করা হয়েছে খৈয়াছড়া ঝর্ণা। মিরসরাই উপজেলার খৈয়াছড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রায় ৪ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে এক কিলোমিটার পথ গাড়িতে যাওয়ার পর বাকি পথ যেতে হবে পায়ে হেঁটে। বাঁশের সাঁকো, ক্ষেতের আইল, আঁকাবাকা পাহাড়ী পথ, ছরা, অন্তত ৪টি পাহাড় পেরিয়ে ঝর্ণার স্বচ্ছ জলে যখন গা ভিজাবেন তখন মনে হবে পথের এই দুরত্ব খুব সামান্য।
পাহাড়ের সবুজ রং আর ঝর্ণার স্বচ্ছ জল মিলেমিশে একাকার হয়েছে মিরসরাইয়ের প্রাকৃতিক জলপ্রপাত খৈয়াছড়া ঝর্ণায়। প্রকৃতির নান্দনিক তুলিতে আঁকা এ ছবি দেখে মুগ্ধ হচ্ছে দেশের ভ্রমণপিয়াসী মানুষ।
যাওয়ার উপায়ঃ- চট্টগ্রামের যেকোনো বাস কাউন্টার থেকে ফেনি গামী বাসে উঠবেন। যাওয়ার পথে ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে চট্টগ্রামের মিরসরাই পার হয়ে বড়তাকিয়া বাজারের আগে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের সামনে নামবেন। পথে যানজট না থাকলে ১ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাবেন মিরেরসরাই।
বড়তাকিয়া বাজারে খৈয়াছড়া আইডিয়াল স্কুলের কাছে গিয়ে স্থানীয় লোকদের জিজ্ঞাসা করলেই তারা বলে দেবে কোন পথে যেতে হবে। ঢাকা চট্টগ্রাম রোডে নেমে পূর্বদিকে গ্রামের রাস্তা ধরে দশ মিনিট হাঁটলে পথে রেললাইন পড়বে, রেললাইন পার হয়ে আরো দশ মিনিট হাঁটলে ঝিরি পাবেন। ইচ্ছে করলে ঢাকা চট্টগ্রাম রোড থেকে ঝিরি পর্যন্ত আপনি সি.এন.জি নিয়ে (জনপ্রতি ২০ টাকা লাগবে) যেতে পারবেন। ঐখান থেকে আপনাকে খৈয়াছড়া ঝর্ণার মূল ট্র্যাকিং শুরু করতে হবে। ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা একটিই, আর পথে আরো অনেক অ্যাডভেঞ্চারপিয়াসীর দেখা পাবেন, কাজেই পথ হারানোর ভয় তেমন একটা নেই। এছাড়া সীতাকুন্ড বা মিরেরসরাই নেমে ঐখান থেকে সি.এন.জি নিয়েও আসতে পারেন ঝিরির আগ পর্যন্ত।জঙ্গলের ভেতর দিয়ে পাহাড়ি ঝিরিপথ ধরে প্রায় দেড় ঘণ্টা হাঁটলে দেখা পাবেন ঝর্ণার। হাতে সময় নিয়ে যাওয়া ভালো, ঝর্ণা দেখে ফিরতে ফিরতে বেশ সময় লাগবে। খাবার সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারেন, তবে ঝর্ণায় যাওয়ার পথেই অন্তত তিনটি জায়গায় দেখা মিলবে স্থানীয় হোটেলের, চাইলে সেখান থেকেও খেয়ে নিতে পারেন।ঝর্ণায় যাওয়ার রাস্তা বেশ দুর্গম এবং পাথরের জায়গা পিচ্ছিল থাকতে পারে। তাই সতর্ক হয়ে পথ চলবেন। মারাত্মক কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ওই দুর্গম রাস্তা পাড়ি দিয়ে ফিরে আসা অনেক কঠিন হবে।

লেখক: মোহাম্মদ জুয়েল

 সদস্য -বিজ্ঞানচেতনা পাঠাগার রাউজান চট্টগ্রাম