সালেহ নোমান
চট্টগ্রাম: মাতারবাড়িতে নির্মিয়মান গভীর সমুদ্রবন্দরে প্রথম জাহাজ ভিড়ছে জানুয়ারিতে।
জাহাজটি নিয়ে আসবে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভিন্ন মালামাল।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে, পরীক্ষামূলকভাবে জাহাজটি আনা হবে। গভীর সমুদ্র বন্দরের জন্য যে চ্যানেল তৈরি হয়েছে সেটার কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাবে জাহাজটির যাতায়াতের মধ্যে দিয়ে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি আনার জন্য নির্মিত বন্দর অবকাঠামো মূলত দেশের বহুল প্রত্যাশিত গভীর সমুদ্র বন্দরের একটি অংশ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, জাহাজটি নোঙর করার মধ্য দিয়ে কার্যত দেশে গভীর সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
মাতারবাড়ীতে ৫০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ১৫ শ’ একর এলকার উপর নির্মিত কয়লা ভিত্তিক ১২ শ’ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের অগ্রগতি প্রায় ৪০ শতাংশ। কয়লা ও অনান্য মালামাল আনা নেয়ার জন্য সেখানে নির্মিত হয়েছে নৌ চ্যানেল ও দুটি জেটি। গভীর সমুদ্রে চলাচলকারী বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে সেখানে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় নির্মিত এই জেটি পরিচালনায় যুক্ত থাকছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, গভীর সমুদ্র বন্দরে পরীক্ষামূলকভাবে এই জাহাজ নিয়ে আসা হচ্ছে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, মাতার বাড়ী চ্যানেলে কর্ণফুলী নদীর চেয়েও সহজে জাহাজ ভেড়ানো যাবে। সেখানে জাহাজ চলাচলের জন্য জোয়ার- ভাটার উপর নির্ভর করতে হবেনা।
বড় জাহাজ আসার জন্য সাগর থেকে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্র পর্যন্ত খনন করা হয়েছে সাড়ে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ চ্যানেল। তা প্রশস্থতায় আড়াইশ মিটার। সেখানে গভীরতা ১৮ মিটারের বেশি। এখানে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ অনায়াসে ভিড়তে পারবে। চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে এত বড় জাহাজ আসতে পারে না। বহির্নোঙরে বড় বড় জাহাজ আসে এবং পণ্য লাইটারিং করে ফিরে যায়।
বন্দরে ৯.৫মিটার গভীরতার এবং ১৮৬ মিটার দীর্ঘ জাহাজ আসতে পারে। মাতারবাড়ীতে চ্যানেলে যে কোন বড় জাহাজ ভিড়তে পারবে ।
মাতারবাড়ী কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, আপাতত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল আনা নেওয়ার কাজে ব্যবহার হবে জেটি দুটি, এসব জেটি ২০২৪ সাল নাগাদ ব্যবহার হবে কয়লা এবং জ্বালানি তেল খালাসের কাজে।”
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল আনার জন্য মাতারবাড়ী চ্যানেলে চারটি অস্থায়ী জেটি নির্মাণ করা হয়েছে। লাইটারেজ জাহাজে পণ্য খালাস করা হচ্ছে।
জানুয়ারীতে আসা বড় জাহাজ মূল জেটির পাশাপাশি অস্থায়ী জেটির যে কোন একটিতে ভিড়তে পারবে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অধীনে নির্মিত জেটি দুটির দৈর্ঘ ৩০০ মিটার ও ২৫০ মিটার।
বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল আবুল কালাম জানিয়েছেন, মাতারবাড়ীতে বড় জাহাজ ভিড়ানোর জন্য ডিসেম্বরের মধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের এই দুই জেটির সাথে সাড়ে ১৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে বহুমুখি জেটি ও কন্টেইনার টার্মিনাল নির্মাণসহ গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিপূর্ণ অবকাঠামো নির্মাণ করবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। তখন চ্যাণনলের প্রশস্থতাও বাড়ানো হবে ২৫০ মিটার থেকে ৩৫০ মিটারে।
গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণের জন্য জাপানের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা জাইকা অর্থায়ন করবে ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের অন্যান্য ব্যয়ের সংস্থান করবে বাংলাদেশ সরকার।
বিভিন্ন সংস্থার জরিপে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে ২০৪১ সাল নাগাদ ৬.৯ মিলিয়ন টিইউএস কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করতে হবে। এরমধ্যে কমপক্ষে ২.০ মিলিয়ন টিইউএস হ্যান্ডলিং হবে মাতারবাড়ীতে।