Home বিনোদন গরুর কুচকাওয়াজ সুইজারল্যান্ডে

গরুর কুচকাওয়াজ সুইজারল্যান্ডে

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

ইস আল্পসে শরৎকাল শুরু হয় সুইস গরুর কুচকাওয়াজ এর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রীতির মাধ্যমে। শুনতে আশ্চর্য লাগলেও এটাই সত্যি। সুইজারল্যান্ডের আলপাইন  প্রদেশে বহু বহু বছর আগে থেকেই চলে আসছে এই রীতি। সুউচ্চ আল্পস পর্বতের শীর্ষদেশ থেকে দল দল সুইস গরু নেমে আসে এই সময় পাদদেশে। সংখ্যায় তারা প্রায় তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার। সুদীর্ঘ গ্রীষ্মকাল আল্পস পর্বতের চূড়ায় শীতল আবহাওয়ায় কাটিয়ে শীতের শুরুতে গো পালকেরা তাঁদের গরুদের নিয়ে নেমে আসে উপত্যকায়। সুইস গরুদের এই উপত্যকায় অবতরণকে কেন্দ্র করেই প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে বা অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে সুইজারল্যাণ্ডে পালিত হয় এক বিশেষ ঐতিহ্যবাহী রীতি যাকে সুইস ভাষায় বলে ‘আল্‌পাবযুগ’(Alpabzug) এবং ইংরেজিতে আলমাবট্রিয়েব (Almabtrieb) যার বাংলা করলে দাঁড়ায় ‘সুইস গরুর কুচকাওয়াজ’। ভাবতেও অবাক লাগছে বিষয়টা তাই না? প্রজাতন্ত্র দিবসে বা স্বাধীনতা দিবসে এনসিসির কুচকাওয়াজ দেখেছেন কিন্তু তা বলে গরুর কুচকাওয়াজ? না না হাসার প্রয়োজন নেই। সুইজারল্যাণ্ডের সেই বিশেষ ঐতিহ্যবাহী রীতি এটাই। চলুন জেনে নিই সুইস গরুর কুচকাওয়াজের (Swiss Cow Parade) বিস্ময়কর কিছু তথ্য সম্পর্কে।

এ এক বর্ণাঢ্য উৎসব। আলপাইন প্রদেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক এই উৎসব। এই বিশেষ দিনে গো পালকরা তাঁদের যে গরুগুলিকে পাহাড়ের উপরে চারণভূমিতে ঘাস খেতে পাঠিয়েছিলেন গ্রীষ্মকালে, শীতের শুরুতে এবার তাদের উপত্যকায় নামিয়ে আনার পালা। উপত্যকার মধ্য দিয়ে পথ করে মাথায় ফুলের মুকুট পরে আর গলায় মিষ্টি শব্দযুক্ত ঘন্টা পড়ে সেই গরুগুলি সার বেঁধে নামতে থাকে পাহাড়ের উপর থেকে। গরুগুলির সেই ঘণ্টার মিষ্টি আওয়াজ আর সুদৃশ্য সাজের বাহার দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। সুইজারল্যাণ্ড সহ ইউরোপের আরো অন্যান্য দেশ জুড়ে সুদূর অতীতে ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে চলে আসছে এই রীতি-রেওয়াজ। বর্তমানে আরো সুদৃশ্যভাবে এই গরুর কুচকাওয়াজ পরিচালিত হয়। কোনো কোনো গ্রামে গেলে এই সময় এখানকার বিখ্যাত অ্যালফর্ন আর ইয়োডেলিং-এর মিষ্টি ধ্বনিতে মন জুড়িয়ে যাবে। সেই সঙ্গে লোকনৃত্য, পতাকা-উত্তোলন আর গরুর গলায় বাঁধা ঘন্টার সুরে-তালে পা মিলিয়ে মানুষের হেঁটে চলা দেখতে বহু জায়গা থেকে মানুষ ভিড় করে। এই উৎসবকে ঘিরেই আঞ্চলিকভাবে বিখ্যাত কিছু হস্তশিল্প কিংবা খাবার পরিবেশিত হয় যার মধ্যে আর কিছু না থাক ঐ সুইস গরুদের থেকেই উৎপন্ন চীজ্‌ থাকবেই। গরুর পাল এবং শিশুর দলকে বেশ রঙচঙে জামা-কাপড় পরানো হয়, শিশুদের গায়ে থাকে মজাদার জ্যাকেট। পাহাড়ের পাদদেশ থেকে হাঁটতে হাঁটতে সেই গরুর পাল ঢুকে পড়ে গ্রামের রাস্তায় আর দুই ধারে ভিড় করা অগণিত মানুষ তাদের অভ্যর্থনা জানায়।

সাধারণত সুইজারল্যান্ড, জার্মানি এবং অস্ট্রিয়ার কৃষকরা সারা শীতকাল জুড়ে বসন্তের অপেক্ষায় থাকেন কারণ ঐ সময়েই তাঁরা আবার তাঁদের গরুগুলিকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যেতে পারবেন আলপ্সের উচ্চভূমিতে। সমস্ত গরমকালটা সেই গরুগুলি পার্বত্য উপত্যকায়, স্তেপ পর্বতের ধারে ধারে প্রচুর তাজা সবুজ ঘাস খেয়ে খেয়ে স্থূলকায় হয়ে ওঠে । সে সময় কৃষকরা দুধ দোয়ানোর জন্য লোক নিয়োগ করেন এবং দিনে দু’বার দুধ দোয়ানো হয় আর সেই দুধ দিয়ে সারা গরমকাল জুড়ে বানানো হয় চীজ্‌। টানা একশো দিন পর্বতের উপরে ঘাস খাওয়ার পরে তাদের আবার নামিয়ে আনা হয় শীত পড়লে কারণ সেই সময় পুনরায় গরুগুলিকে তাজা ঘাসের বদলে দেওয়া হবে খড়-বিচালি। ঠিক এই ফিরে আসার সময়েই পালিত হয় বিস্ময়কর এই উৎসব। সুইজারল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে এই উৎসব বিশেষ এক ঐতিহ্য বহন করে। লোক-সংস্কৃতির অঙ্গ হিসেবে বড়ো বড়ো অ্যালপাইন হর্ন বাজানো হয় এই সময়। অ্যালপাইন প্রদেশের এই রীতি ‘অ্যালম্যাবট্রাইব’ নামে সাধারনত পরিচিত যাকে সুইশ ভাষায় ‘অ্যালপাবযুগ’ বলা হয়।

ক্রমেই এই উৎসব পর্যটকদের আকৃষ্ট করেছে এবং তা ক্রমশ পর্যটনক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। উৎসবের সময় এখানে রাস্তার ধারে ধারে বিশেষ স্টল বসে। বিভিন্ন খাবার, কৃষিজ পণ্য, চীজ্‌, কাউ-কেক ইত্যাদি বিক্রি হয় এ সময় ঐ স্টলগুলিতে। মানুষের বসার জন্য জায়গা করা হয় যেখানে বসে খাওয়া-দাওয়া করতে পারে পর্যটকরা। সব মিলিয়ে শীতের শুরুতে বর্ণাঢ্য উৎসবে সেজে ওঠে সুইজারল্যাণ্ড, সুইস গরুর কুচকাওয়াজের ধ্বনিতে চারপাশ সরগরম হয়ে ওঠে।