প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজগরের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহের ঘাড়ে ও পাঁজরে বড় বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার আগে কেউ তাঁকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে থাকতে পারে।
কুড়িগ্রাম থেকে নয়ন দাস: ধরলা নদীর চরে গরু চরাতে গিয়ে নিখোঁজ আজগর আলীর (৬০) ভাসমান মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার সকালে ধরলা অববাহিকার উত্তর কদমতলা এলাকায় স্থানীয় দুজন কৃষক নদীতে তাঁর ভাসমান মরদেহ দেখতে পায়। পরে পুলিশে খবর দিলে সদর থানা-পুলিশের একটি দল মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুড়িগ্রাম সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মর্তুজা।
আজগর আলীর বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের নওয়াবশ গ্রামে। তাঁর পরিবারে স্ত্রী ও ছয় ছেলে-মেয়ে রয়েছে।
এদিকে আজগরের মরদেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড় জমে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, আজগরের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহের ঘাড়ে ও পাঁজরে বড় বড় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া পিঠে বেশ কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। নদীতে নিখোঁজ হওয়ার আগে কেউ তাঁকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে থাকতে পারে।
নিহতের বড় ছেলে আজিজুলের দাবি, তাঁর বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে আজিজুল বলছে, ‘বাবার নিয়ে যাওয়া গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি ও তাঁর ছেলে লাঠি দিয়ে বাবাকে আঘাত করেছিল। বয়স্ক মানুষ হওয়ায় তিনি সেটা সহ্য করতে পারেননি। এটা হত্যাকাণ্ড। তাঁর শরীরে গলার কাছে আমি আঘাতে চিহ্ন দেখেছি।’ এ ঘটনায় তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
পাঁচগাছি ইউপির ২নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কালাম সরকার ওয়াসিম বলেন, ‘মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। আজগর নিখোঁজ হওয়ার আগে তাঁকে মারপিট করা হয়েছে বলে ৪-৫ জন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন।’
বৃহস্পতিবারের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য ওয়াসিম বলেন, ‘আজগর আলীর গরু স্থানীয় এক ব্যক্তির জমির ধান খাওয়ায় ওই ব্যক্তি নৌকায় করে গিয়ে আজগরকে একটি লাঠি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করে। এরপর নদী পার হওয়ার পথে আজগর হঠাৎ নদীতে হারিয়ে যায়।’
স্থানীয় জেলে নুর হোসেনের বরাত দিয়ে ইউপি সদস্য বলেন, ‘নৌকায় করে মাছ ধরার সময় তিনি দেখেছেন একজন লোক গরু নিয়ে নদী পার হচ্ছিল। হঠাৎ তিনি দেখতে পান গরু পার হচ্ছে কিন্তু লোকটি নাই।’
এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. শাহরিয়ার বলেন, ‘নিহতের শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের পর শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।’
মামলার বিষয়ে ওসি বলেন, ‘নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হলে আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। নিহতের পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।’
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে ধরলার চরে নিজের গরু নিয়ে ঘাস খাওয়াতে যান আজগর আলী। সেদিন সন্ধ্যার আগে তাঁর গরুগুলো চেনা পথ ধরে নদী পার হয়ে বাড়িতে ফিরলেও আজগর ফেরেননি। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের যৌথ দল অনুসন্ধান চালালেও খোঁজ মেলেনি তাঁর।