ঋভু চট্টোপাধ্যায়
রজত ঠেকে যেতে টুকাই বলে ওঠে, ‘এই যে মাস্টার, তোর ছাত্রীর বাবার অবস্থা শুনেছিস?’
–‘কোন ছাত্রী?’
–‘আরে, ওই যার কথা তুই সবচেয়ে বেশি শোনাতিস, তিতলি না কী যেন নাম।’
–‘না তো, কেন, কী হয়েছে?’
–‘ওর বাবা তো ভয়ঙ্কর কাজ করে রেখে দিয়েছে!’
–‘চুরি করেছে নাকি?’
–‘ওটা হলে ভাল হত, খুন করেছে, তাও একসঙ্গে দু’জনকে, একজন তার মধ্যে আবার বাচ্চা।’ শেষের কথাগুলো মন্টা বলে।
রজত নিরীহ গোবেচারার মত বলে ওঠে, ‘না তো, আমি কিছুই জানি না।’
–‘সে কীরে, সকাল থেকে প্রতিটা চ্যানেলে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে আর তুই বলছিস কিছু জানিস না!’
–‘আসলে, আজ সকাল থেকে টানা টিউশন পড়াচ্ছি, টিফিনও বাইরে করেছি। এইবার একটু বসতে পারলাম, তোরাই বল, কে খুন হয়েছে?’
–‘সে সব তো কিছুই দেখাচ্ছে না, বারবার ওই ভদ্রলোকটিকে দেখাচ্ছে, আর খুনের কথা বলে যাচ্ছে।’
–-‘তুই আবার ওনাকে ভদ্রলোক বলছিস, শালা খুনি, ছোটলোক।’
বাপ্পা ঝাঁঝিয়ে উঠতেই রজতের মুখটা কিসমিসের মত হয়ে গেল। তিতলির বাবা খুন করেছে কি না সে ব্যাপারে তার বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই, ওর চিন্তা হল টিউশনের ব্যাপারে। কয়েকদিন আগেই মিলপাড়ার একটা ফ্যামিলি ট্রান্সফার হয়ে চলে যাওয়ায় রজতের ওই টিউশনটা বন্ধ হয়ে গেছে, তার পরে আবার তিতলিরটাও চলে গেলে এক্কেবারে আঠারো আনা পূর্ণ হয়ে যাবে। অথচ তিতলি রজতের সবচেয়ে ভাল ছাত্রী, পাঁচবছর ধরেই পড়াচ্ছে, তিতলি তখন ক্লাস নাইনে পড়ে। বন্ধুদের কাছে বেশ গর্ব করেই তিতলির কথা বলে। এমনকী বন্ধুদের অনেকেরই তিতলির দিকে নজরও আছে।
তিতলি রজতের থেকে খুব বেশি হলে বছর সাত-আটের ছোট, তাও রজতের তার প্রতি দুর্বলতা কম নেই। এর জন্যেই এতদিন ধরে একা পড়িয়ে যাচ্ছিল, এই বছর থেকেই তিতলির ভাই রিন্টুও পড়ছে, তবে দু’জনকে আলাদা সময়ে পড়াতে যায়। কাকিমারও ব্যবহার খুব ভাল, সকাল-সন্ধে যখনই পড়াতে যাক একটা মোটা টিফিন বাঁধা। সবচেয়ে ভাল লাগে মাসের এক্কেবারে প্রথম সপ্তাহেই অ্যাডভান্স পেমেন্ট। এত সবের পরেও একটা বন্ধ ঘরে তিতলির সাথে টানা ঘণ্টা দুই-আড়াই কাটানোর সুযোগটাও তো কম নয়, ঠেকের বন্ধুদের ঈর্ষার জায়গা তো এটাই।
ঠেক থেকে বাড়ি পৌঁছে মাকে জিজ্ঞেস করতে মা সেই একই রকমভাবে না-জানার কথা বলে। সাইকেলটা রেখে টিভি চালাতেই ব্রেকিং নিউজে সব চ্যানেলেই খবরটা দেখে, শোনে, তাও কিছুতেই হিসাব মেলাতে পারে না। কয়েকদিন আগেই কাকুর সাথে বাড়িতে দেখা হয়েছিল, অনেক কথাও হল, রজতের চাকরির ব্যাপারেও খোঁজখবর নিলেন। কিন্তু সেই কাকুই কি এই কাকু?
রজত পরের দিন সকালের ব্যাচটা পড়িয়ে ফেরবার সময় একটা পেপার কেনে। এক্কেবারে ফ্রন্টপেজেই কাকুর সেই নিরীহ মুখের ছবি আর ইনসেটে যাদের খুন করেছে তাদের ছবি ছাপা হয়েছে। রজত সব খবর পড়ে, একবার ক্লাবে গিয়ে আরও কয়েকটা পেপারও পড়ে। শরীরটা কেমন যেন ঘিনঘিন করছে, কী ভয়ানক ব্যাপার, এক্কেবারে মাংস কাটার মত টুকরো-টুকরো করে ব্যাগে ভরে অন্য জায়গায় নিয়ে চলে যাচ্ছিল, ভাবা যায়! একটা বাচ্চাকেও এভাবে মারল, উফঃ কী ভয়ানক। তিতলির জন্যেই আরও বেশি খারাপ লাগছে। গতকাল ঠেকে বাপ্পা বলে ওঠে, ‘মাস্টার, তোমার তো একবার হবু শ্বশুরবাড়ি যাওয়া উচিত।’ কথাগুলো মজা করে বললেও ভিতরে আরও অনেক কথা ছিল। মাকেও জিজ্ঞেস করতে মা বলে, ‘ওরা যতক্ষণ না কিছু বলছে, ততক্ষণ পড়াতে না যাওয়ার তো কোনও মানে হয় না। এতদিন ধরে ওদের বাড়ি পড়াতে যাচ্ছিস, এখনও যাবি। মারা যাওয়া আর মরে যাওয়া দুটোই এক, দুটোই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা।’
দিন-দুই পরে একটু ইতস্তত করেই রজত তিতলিদের বাড়ি যায়। ওদের দোতলা বাড়ি, খুব সুন্দর করে সাজানো, সামনে একটা ছোট বাগানও আছে, বাইরের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ভিতরে কেউ আছে কি না বুঝতে পারে না। সব জানলা বন্ধ, ভিতর থেকে পর্দা টাঙানো, বাইরেটা বেশ নোংরা। বারান্দাতে ধুলো জমা রয়েছে, সঙ্গে শুকনো ও কাঁচা পাতা। বাইরের বাগানের দরজাটা খোলা দেখে আস্তে-আস্তে ভিতরে গিয়ে কিছু সময় অপেক্ষা করে বেল বাজায়। বেশ কয়েকবার বাজানোর পর তিতলি দরজাটা হাল্কা খুলে মুখ বের করে রজতকে দেখেই বলে ওঠে, ‘তুমি! এই সময়?’
রজত কোনও উত্তর খুঁজে পায় না।
–-‘তোমার তো আজকে পড়ানোর ডেট নেই, ভাইয়ের আছে নাকি?’
রজত ঘাড় নেড়ে জানায়, ‘না।’
–-‘তা হলে চলে যাও।’
রজতের মুখের সামনে শব্দ করে দরজাটা বন্ধ করে দিতেই রজত আগের মতই আরও কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ফেরবার জন্য পা বাড়াতেই পিছন থেকে তিতলি ডাকে, ‘কিছু বলবে?’
–‘না, এমনি এসেছিলাম, তোমাদের অসুবিধা হলে আমি চলে যাচ্ছি।’
–-‘ভিতরে এসো।’
–‘আজ থাক, পরে আসব।’
তিতলি সঙ্গে সঙ্গে বেরিয়ে রজতের বাঁ-হাতটা ধরে টেনে ঘরের ভিতর এনে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দেয়। রজত ঘরের ভিতর ঢুকেই দেখে বারান্দাতে কাকিমা দাঁড়িয়ে আছেন। রজতকে দেখতে পেয়েই বলেন, ‘দেখো বাবা, মেয়ে তোমার ওপরে রেগে গেছে, তুমি কী করবে বলো?’ রজত এবারেও কোনও কথা বলে না। কাকিমা রজতকে তিতলির ঘরে বসতে বলে নিজে রান্নাঘরে চলে যান। রজত আস্তে-আস্তে তিতলির পড়ার ঘরে গিয়ে বিছানাতে বসে। কিছু সময় পর তিতলি এসে বিছানাতে বসলে রজত বলে, ‘কী হল, হঠাৎ আমার ওপর এত রেগে গেলে কেন?’ তিতলি চাপা গলায় কিন্তু বেশ রুক্ষভাবে উত্তর দেয়, ‘চুপ করো, তোমরা সবাই সমান, কাউকে বিশ্বাস করা যায় না।’ একটা শ্বাস ফেলে রজত চুপ করে বসেই থাকে। তিতলি বলতে থাকে, ‘কত বিশ্বাস করতাম, বাবা ছিল আমাদের কাছে ভগবান, কোনও দিন স্বপ্নেও ভাবিনি।’ শেষের কথাগুলো বলতে-বলতে তিতলি ফুঁপিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করে। রজত তিতলির দিকে এগিয়ে এসে কাঁধে হাত রেখে বলে, ‘কেঁদে কিছু হবে? তার থেকে চিন্তা করো কীভাবে এর থেকে বের হবে?’ তিতলি কাঁদতে-কাঁদতেই জবাব দেয়, ‘কীভাবে বের হব রজতদা, কাল দোকানে গেছিলাম, আমাকে ঘিরে লোকজনের যা ভিড় হয়ে গেল, তুমি চিন্তা করতে পারবে না। কত রকমের প্রশ্ন, এর থেকে আমাদের তিনজনকে মেরে ফেললে শান্তি পেতাম।’ তিতলি আরও কেঁদে উঠল।
–-‘তোমরা কোনওদিন কিছু বুঝতে পারোনি?’
চোখ দুটো মুছতে-মুছতে তিতলি উত্তর দেয়, ‘‘কিচ্ছু না, তবে কয়েক মাস ধরে বাড়িতেও সব সময় মোবাইল নিয়ে থাকত, এসএমএস পাঠাত, জিজ্ঞেস করলে বলত, ‘কাজের ব্যাপার।’ মাস-চার আগে একটা নতুন ফোন কেনে, আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টল করে দিতে বলে।’’
–-‘কাকুর হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্টস ছিল?’
–‘সব ছিল।’
রজত আবার একটা লম্বা শ্বাস ফেলে বলে, ‘কাকিমা কেমন আছেন, সব কিছু শুনে তো আরও খারাপ মনে হচ্ছে।’
–-‘আজ তো মা তাও বাইরে গেছে, কথাবার্তা বলছে, এই কয়েকদিন এক্কেবারে গুম মেরে বসেছিল। জানো, সেদিন থেকে ঘরে টিভি চলেনি, পেপার বন্ধ, কাজের মাসি বন্ধ, তাও আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী তো আছে, আর কত খরগোশের মত মুখ লুকিয়ে থাকব?’
রজত সব কথা শুনে গেল, সংসারটা কেমনভাবে তাসের ঘরের মত ভেঙে গেল তাদের, নিচ থেকে মানুষ টেনে বের করে আনল মানুষের মৃতদেহ। এখানে অবশ্য তিতলিরা বেঁচে থেকেই মৃতদেহ হয়ে গেছে, এই সব মনে পড়তেই মুখটা নিজের থেকে বন্ধ হয়ে গেল রজতের। কিছু সময় পর তিতলির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে, ‘আমায় একটু জল দেবে?’ তিতলি জল আনতে ঘরের বাইরে গেলে একা ঘরে বসে রজতের চোখের সামনে কাকুর মুখটা ভেসে এল। কী অমায়িক মানুষ মনে হত, কয়েক মাস আগেও ক্লাবের পুজোর চাঁদার দেবার পরেও বলেছিল, ‘ডোনেশন বা অ্যাড কিছু লাগলে বোলো।’
‘সেই কাকুই এই কাকু?’ বার-বার এই প্রশ্নটাই ঘুরছে রজতের মাথাতে।
–-‘জল নাও।’
তিতলির হাত থেকে জলের গ্লাসটা নিয়ে রজত বলে, ‘কিছুতেই মেলাতে পারছি না, সব কেমন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে।’
–‘আমাদেরও হিসাব মিলছে না, সবচেয়ে অবাক ব্যাপার জানো, যেদিন ঘটনাটা হল বলে শুনলাম, সেদিনও রাতে বাবা ফোন করে খুব স্বাভাবিকভাবেই মা, ভাইয়ের সাথে কথা বলে।’
তিতলির কথাগুলো শুনেই রজতের মনে পড়ল পেপারেই পড়েছে, দুটো ডেডবড়ি গাড়িতে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় কাকু একটা চায়ের দোকানে গাড়ি থামিয়ে চা, খাবার খেয়েছিলেন। দোকানিটাও বলেছেন, এক্কেবারে স্বাভাবিক ছিলেন। স্বাভাবিক, না কি নির্লিপ্ত? নাকি আরও অন্য কিছু?
–‘ভাই কেমন আছে?’
–‘ঘর থেকে বেরচ্ছে না, স্কুল, টিউশন কোথাও যায়নি।’
–-‘ঠিক আছে আমি দেখা করছি, বাজার-দোকান কিছু আনতে হবে?’
–‘গতকাল মামা এসে সব্জি ও মুদিখানা করে দিয়ে গেছে। কয়েকদিন যাক, লোকের কৌতূহলটা অসহ্য লাগছে। এক্কেবারে শেষ হয়ে গেলাম।’
শেষের কথাগুলো বলে তিতলি কেঁদে উঠতেই রজত তিতলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে উঠল, ‘কেঁদো না, তোমাদের তো কোনও দোষ নেই, বোসো, আমি রিন্টুর সাথে দেখা করে আসি।’
ঘরটা থেকে বেরলেও রজতের নিজেকে খুব অসহায় লাগল। এই সময় এদের পাশে দাঁড়ানো দরকার, কিন্তু কোন পরিচয়ে দাঁড়াবে, কীভাবে দাঁড়াবে। এই পাঁচবছরে বাড়িটার সাথে একটা সম্পর্ক তৈরি হলেও সেটা তো টিউশনের শেষের সাথেই শেষ হবে। তিতলির সাথে অসম সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবেনি, যেমন ভাবেনি দোতলা বাড়ি আর ছোট কোয়ার্টারে বাবার ডেথ কেসে রাজ্য সরকারের চাকরিপ্রার্থী রজতের মাঝখানে সমীকরণটাও। পড়ানোর মাঝে তিতলির চোখ, কপালে ছুঁয়ে থাকা চুলের দিকে তাকিয়ে তাকে পাবার ইচ্ছের সাথে নিজেকে কেন্নোর মত কুঁকড়ে রাখা রজত বেশ বুঝছে, তার ভবিষ্যতের থেকে তিতলিদের বর্তমান আরও ভয়াবহ।
তিতলির ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমে কাকিমার সাথে আবার দেখা হল। সোফার ওপর দুটো চোখ বন্ধ করে কিছু চিন্তা করছিলেন। সদ্য ঘরভাঙা যাযাবরের মত দুই ছেলেমেয়েকে বগলে পুঁটুলির মত নিয়ে বসে উপরওয়ালার দিকে তাকিয়ে আছেন। কাছে গিয়ে কাকিমা বলে ডাকতেই শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখের কোণটা মুছে নিয়ে বললেন, ‘বোসো।’
–-‘না, কাকিমা আজ যাই, এই সপ্তাহে রেশন তোলা হয়নি, কাল থেকে রিন্টুকে পড়াতে আসব।’
কাকিমা কিছুটা সময় অন্যমনস্ক থাকবার পর রজতের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘‘তুমি তো তাও এলে, সায়েন্সের স্যার গতকাল ফোন করে বলে, ‘পুলিশের সব ঝামেলা মিটলে যাব।’ এর পর কিছু বলা যায়?’’
–‘কিন্তু এতে আপনাদের কী দোষ?’
–‘‘সেটা কে বুঝবে? ঘরের লোকরাই ফোন করে কত কী বলছে, টিভিতে দেখছে, পেপার পড়ছে আর ফোন করে সাত-পাঁচ প্রশ্ন করছে, ‘মেয়েঘটিত কেস, তুমি কিছু বুঝতে পারোনি?’ বিশ্বাস করো, কিছু বুঝতে পারলে একবারের জন্যেও কি চেষ্টা করতাম না, এই দুটোর কথা তো আমাকে ভাবতে হবে, রিন্টুর এই ক্লাস নাইন।’’
কাকিমা কিছু সময় চুপ থেকে বলে উঠলেন, ‘শুনলাম, আরও নাকি দুটো সংসার ছিল, তার মধ্যে আবার কার পেটে নাকি বাচ্চা…।’ তিতলি হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, ‘মা! তুমি কী আরম্ভ করলে?’
রজত প্রসঙ্গটা পাল্টানোর জন্য বলে উঠল, ‘আত্মীয়রা সবাই সমান, আমি নিজেই তো দেখলাম, বাবা মারা যাওয়ার পরে কোনও পক্ষেরই কেউ যোগাযোগ রাখে না।’ তার পর ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, ‘এবার উঠি, রিন্টুকে বলে যাই, কাল থেকে পড়াতে আসব।’
–-‘রিন্টু তো আমাদের সঙ্গেও ভাল করে কথা বলছে না, তোমার সঙ্গে বলে কি না দেখো।’
রিন্টু তখন বিছানাতে একটা বই-মুখে বসেছিল। রজত ঘরে ঢুকলে চোখ উঠিয়ে একবার দেখে আবার বইয়ের দিকে আগের মত চোখ রেখে বসেই রইল। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে শুধু ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’।
রজত আবার পড়াতে আসার কথা বলতেই রিন্টু বলে ওঠে, ‘আচ্ছা, আমাকে একা পড়ালে, তুমি আসতে?’
–‘মানে!’
–‘ধরো, দিদি যদি তোমার কাছে না পড়ত?’
–‘হঠাৎ এই কথা মনে হল কেন?’
–‘আগের দুটো ক্লাসে তো আসোনি।’
রজতের কানে তার মায়ের কথাগুলো ভেসে বেড়াতে লাগল, ‘ভুল করলি বাবু, খুব ভুল করলি।’
–-‘সরি রিন্টু, ভুল হয়ে গেছে, কাল থেকে পাক্কা।’
রিন্টুর কাছ থেকে বেরিয়ে তিতলিদের বাড়ির বাইরে এসে বাগানের দরজা লাগিয়ে বেরনোর সময় চারদিকটা একবার দেখে নিল। তিতলি বলছিল, লোকজন বাড়িটা দেখতে-দেখতে যাচ্ছে।
রজত সাইকেলটা ঠেলতে-ঠেলতে বাড়ি পৌঁছতেই মা জিজ্ঞেস করে, ‘কীরে, গেছিলি? কেমন আছে ওরা?’ রজত কোনও উত্তর না দেওয়াতে মা আবার বলে, ‘কিছু বলছিস না যে?’
–‘কী বলব মা… কাকু আমাকেও মেরে গেল।’