Home অন্যান্য ব্যথা পেলে আর্তনাদ, অবহেলায় কান্না

ব্যথা পেলে আর্তনাদ, অবহেলায় কান্না

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

গাছেরও প্রাণ আছে। ছোট থেকেই এই কথাটা শুনে বড় হয়েছি আমরা। শুধু প্রাণ নয়। গাছের কিন্তু নিজের ইচ্ছেও আছে। হয়তো জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এক জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাকে, খুশি মতো নড়াচড়া করাও উপায় নেই। কিন্তু যন্ত্রণায় সাড়া দেয় গাছ। ব্যথা পেলে তীব্র আর্তনাদ করে, অবহেলায় হাউহাউ করে কাঁদে (Plants cry)। গাছের সেই কান্না শুনেছেন বিজ্ঞানীরা।

যন্ত্রণা হলে বা ব্যথা পেলে নানারকম শব্দ করে গাছ (Plants cry)। এক একবার এক একরকমভাবে শব্দ করে। এমনকি টানা ১০ থেকে ১২ বার আর্তনাদ করে। মানুষ যেমন ব্যথা পেলে কঁকিয়ে ওঠে, গাছও ঠিক এমনই। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে গাছের কান্না ও আর্তনাদের শব্দ শুনেছেন স্কুল অব প্ল্যান্ট সায়েন্ট অ্যান্ড ফুড সিকিউরিটির গবেষক ড. লিলাচ হাডনি। অত্যাধুনিক মাইক্রোফোনে শব্দের কম্পাঙ্ক রেকর্ড করে তিনি শুনেছেন, গাছের আর্তনাদ। কী প্রচণ্ড যন্ত্রণা পেলে এমন হৃদয়বিদারী আর্তনাদ বের হতে পারে, তা শুনে স্তম্ভিত বিজ্ঞানীরা।

Image - গাছের কান্না শুনলেন বিজ্ঞানীরা! যন্ত্রণা-অবহেলায় তীব্র আর্তনাদ করে

আচার্য জগদীশচন্দ্র ও তাঁর বন্ধু আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চার জনক। জগদীশচন্দ্র বসু সেই কবেই বলে গিয়েছিলেন গাছেরও অনুভূতি আছে। তাঁর দুটি  অসাধারণ নিবন্ধ ‘গাছের কথা’ ও ‘উদ্ভিদের জন্ম মৃত্যু’। এর পর একই বিষয়ে লেখেন ‘নির্বাক জীবন’। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ও গবেষণাধর্মী লেখাটি সহজ বাংলায় লেখা ‘আহত উদ্ভিদ’। এই সমস্ত নিবন্ধে খুব পরিষ্কার ভাবে ‘উদ্ভিদের প্রাণ আছে’ এ কথা আচার্য প্রমাণ করেছেন ও বলেছেন। মূল বক্তব্য: উদ্ভিদের জন্ম, বৃদ্ধি, বংশবিস্তার, মৃত্যু, ভয়-ব্যথা-আনন্দ অনুভবের ক্ষমতা আছে, এমনকি অন্য উদ্ভিদ ও প্রাণের প্রতি সমব্যথী হওয়ার ক্ষমতাও আছে। এগুলিই প্রাণের লক্ষণ। গাছের বৃদ্ধি মাপার জন্য তিনি একটি সূক্ষ্ম যন্ত্র তৈরি করেন। এর নাম দেওয়া হয়  ‘ক্রেস্কোগ্রাফ’।

বিজ্ঞানীরা এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে তৈরি যন্ত্রে গাছের যন্ত্রণার শব্দ শুনেছেন। টম্যাটো, তামাক, ভুট্টা, ক্যাকটাস ইত্যাদি গাছ নিয়ে পরীক্ষা করেছেন বিজ্ঞানীরা। কোনও গাছের বেশি যত্ন করা হয়েছিল। আর কোনও গাছের কম। তো আবার কোনও গাছকে একটুও জল দেওয়া হয়নি। কিছু গাছের পাতাও ছিঁড়ে নেওয়া হয়েছিল। এই সব কিছুর পরে একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বিজ্ঞানীরা শব্দ শোনার চেষ্ঠা করেছিলেন। তারা প্রথমবার শব্দ শুনেই অবাক হয়েছেন। তাঁরা দেখেছেন, যেসব গাছ অবহেলায় ছিল তাঁর সাহায্যের জন্য চিৎকার করেছে। একটানা আর্তনাদ করেছে। ২০ থেকে ২৫০ kHZ অবধি শব্দের কম্পাঙ্ক স্থির করে শব্দ শুনেছেন বিজ্ঞানীরা।

মানুষ সর্বোচ্চ 20 KHz শব্দ শুনতে পায়। কিন্তু গাছেরা যে শব্দ করেছে তা ছিল ৪০-৬০ kHZ। এই উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ মানুষের কানে পৌঁছয় না। যন্ত্রের সাহায্যে সেই শব্দ ও তার তীব্রতা শুনে বিশ্লেষণ করেছেন বিজ্ঞানীরা। দেখেছেন, আঘাত পাওয়ার আর্তনাদ একরকম, আর অবহেলায় থাকার কান্না অন্যরকম। এর থেকেই প্রমাণিত মানুষের মতো গাছেরও অনুভূতি আছে আর তার বহিঃপ্রকাশ এক একরকম।