Home অন্যান্য চওড়া হাসি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে

চওড়া হাসি নিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

ভারতের সংবিধানে সমানাধিকারের কথা থাকলেও, সেখানে এমন অনেক জায়গা আছে যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণ ভেদাভেদ আজও প্রকট। সমাজে উঁচু-নিচু ভেদাভেদের কারণে বহু সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সমাজের তথাকথিত নিচুতলার মানুষদের। যেমন দলিতদের অনেক ক্ষেত্রেই বিশেষত বিয়ের সময় ঘোড়ায় চড়ে যাওয়াকে ভাল চোখে দেখেন না সমাজের উচ্চ বর্ণের মানুষ।

কিন্তু সেই জাতবৈষম্য দূর করার অভিনব উদ্যোগ নিল রাজস্থান পুলিশ। রাজ্যের এক দলিত ছেলে ঘোড়ায় চাপিয়ে বিয়ের মণ্ডপে গেলেন বিয়ে করতে। আর পাহারা দিলেন খাকি উর্দিধারী কয়েকজন। কারও কারও হাতে লাঠি, কড়া চোখে নজরদারি চালাচ্ছেন উপস্থিতদের জনতার ওপর।

আর ঘোড়ার ওপর মুখে চওড়া হাসি নিয়ে বসে আছেন বছর ২৭-এর শ্রীরাম মেঘওয়াল। পরনে সাদা শেরওয়ানি, কোমরে ঝুলছে তলোয়ার। রাজস্থানের বুঁদি গ্রামে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছেন কন্যা দৌপদ্দি।

সোমবার তাঁর বিয়ের শোভাযাত্রা পুরো গ্রাম ঘুরে যখন বিয়ের মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান, তখন তাঁর জন্য মালা হাতে অপেক্ষা করছেন দ্রৌপদী। তাঁর মুখেও চওড়া হাসি। সে হাসি যেন জয়ের। বিয়ের মঞ্চে বিআর আম্বেদকরের একটি বড় ছবি রাখা ছিল। মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে মেঘওয়াল বলেন, ‘এখন, দলিত সম্প্রদায়ের বাকিরাও ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাবে। আমাদের সমাজ বদলে যাচ্ছে।’

গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মী মেঘওয়াল বলেন, ‘আমিই প্রথম দলিত যিনি এই রাস্তা দিয়ে ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাচ্ছি। দলিত নিচ হ্যায়, তো নিচ হ্যায় রেহেনে দো, এটি সমতার দিকে এক ধাপ এগোল।’

রাজস্থানের বুঁদি জেলার পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের তরফে ‘অপারেশন সামন্ত’ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের প্রথম বিবাহ দেওয়া হল শ্রীরাম মেঘওয়াল ও দ্রৌপদীর। এই উদ্যোগের প্রধান লক্ষ্যই দলিতদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞাগুলোকে ভেঙে দেওয়া। যেমন, দলিতদের ঘোড়ায় চড়ে বিয়ে করতে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া।

রাজস্থান পুলিশ সম্প্রতি একটি রিপোর্টে উল্লেখ করেছে যে, বিগত ১০ বছরে এমন ৭৬টি কেস দাখিল হয়েছে যেখানে দেখা গেছে দলিত সম্প্রদায়ের বরের শোভাযাত্রায় বাধা দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা ও দলিতদের তাদের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি কমিটি তৈরি করে রাজস্থান পুলিশ। তারাই বিষয়টি নিয়ে দলিত পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন।

বুঁদি জেলার এসপি জয় যাদব সংবাদমাধ্যকে বলেন, ‘আমরা বুঁদি জেলায় সমীক্ষা করেছি এবং প্রায় ৩০ টি গ্রামকে চিহ্নিত করেছি যেখানে দলিতরা বিয়ের অনুষ্ঠানের অংশ হিসাবে কখনও ঘোড়ায় চড়েনি। কিছু জায়গায় মানুষ এই বিষয়ে প্রতিবাদ করেছেন, কিন্তু প্রতিকার হয়নি। আমরা অপারেশন সামন্ত শুরু করেছি। গ্রামের প্রধান, পুলিশ, গ্রাম রক্ষকদের নিয়ে একটি সামন্ত কমিটি গঠন করেছি।’

জেলা শাসকও এই বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন। সেই কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘যদি কোনও দলিত পরিবার বিয়ের সময় ঘোড়া ব্যবহার করতে চান কিন্তু কেউ সেখানে বাধার সৃষ্টি করে তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেব।’