Home সারাদেশ ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না

ঘড়ির কাঁটা ঘুরছে না

আলী আমজাদের ঘড়ির কঁঅটা ঘুরছে না।

মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সিলেট: নগরীতে প্রবেশ করেই আপনাকে স্বাগত জানাবে যে দু’টি ঐতিহাসিক স্থাপনা তার একটি হলো ‘ক্বিনব্রিজ’ আর ওপরটি  হলো ‘ঘড়িঘর’। দুর দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই এই স্থাপনাগুলোকে দেখতে আসেন। আর নগরবাসীর তো ঘুম ভাঙ্গে ঘড়িঘরের ঘড়ির টং টং শব্দে।

কিন্তু আশ্চয্যজনক হলেও সত্য গত কয়েকদিন যাবত ঘড়িঘরের সেই ঘড়ির টং টং শব্দ শোনা যাচ্ছে না। ঘড়ির কাটাও ঘুরছে না। তবুও এই ঘড়িঘরের দেখভালের দ্বায়িত্বে থাকা সিলেট সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানেনই না।

জানা যায়, সিলেট নগরীর কিনব্রিজ এলাকায় সুরমা নদীর পাড় আর সারদা হলের মাঝখানে ‘জিরো’ পয়েন্ট। তার ঠিক ১০০ মিটারের মধ্যেই আলী আমজদের ঘড়ির অবস্থান। কিনব্রিজের উত্তর অংশের ঠিক প্রবেশমুখে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা এ ঘড়ি স্থাপিত হয় ১৮৭৪ সালে। ওই বছর তৎকালীন বড়লাট লর্ড নর্থব্রুক সিলেট সফরে এসেছিলেন। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার পৃত্থিমপাশার জমিদার নবাব আলী আহমদ খান নিজের ছেলে আলী আমজদ খানের নামে ঘড়িটি নির্মাণ করেন। 

সিলেট সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, আলী আমজদের ঘড়ির দৈর্ঘ্য ৯ ফুট ৮ ইঞ্চি এবং প্রস্থ ৮ ফুট ১০ ইঞ্চি। নিচ থেকে ছাদ পর্যন্ত উচ্চতা ১৩ ফুট, ছাদ থেকে ঘড়ি অংশের উচ্চতা ৭ ফুট, ঘড়ির ওপরের অংশের উচ্চতা ৬ ফুট। মোট উচ্চতা ২৬ ফুট। ঘড়িটির ডায়ামিটার আড়াই ফুট এবং ঘড়ির কাঁটা দুই ফুট লম্বা।

তখনকার সময়ে এখানকার মানুষ সাধারণ সূর্যের আলো দেখেই সময় আন্দাজ করে নিতেন। ঘড়িটি চালু হওয়ার পর সময় জানার জন্য এটিই হয়ে ওঠে অনেকের অবলম্বন।

লোহার খুঁটির ওপর ঢেউটিন দিয়ে সুউচ্চ গম্বুজ আকৃতির এই ঘড়ি। এই নান্দনিক স্থাপনা যে কাউকে মুগ্ধ করে। এ ঘড়ি সিলেটের প্রতীক হিসেবে এখন দেশ-বিদেশে সুপরিচিত। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা ঘড়িটি বিধ্বস্ত করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধের পরে কিছুসংখ্যক প্রবাসী, আরও পরে তৎকালীন সিলেট পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি সচল করতে উদ্যোগী হয়। বার কয়েক সংস্কার করা হলেও নানা সময়ে ঘড়িটি অচল হয়ে পড়ত। সর্বশেষ ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশন ঘড়িটি পুনরায় সচল করে। এরপর দীর্ঘদিন ঘড়িটি সচল ছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে ঘড়িটি পুনরায় বিকল হয়ে ঘড়ির কাঁটা থমকে গেছে।

তবে এবিষয়ে কিছুই জানেন না সিসিক কর্তৃপক্ষ! বিষয়টি নিয়ে জানতে সিসিকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমানের সাথে কথা বলতে তার মোবাইলে কল দিলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে জানান। তবে ঘড়িটি বন্ধ রয়েছে তাকে জানালে তিনি বিদ্যুৎ বিভাগে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।

সিসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনিও এবিষয়টি জানেন না বলে জানান। তবে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ^াস দেন প্রকৌশলী রুহুল আমিন।