বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় জেলেদের ইলিশ ধরা জালে বিলুপ্তপ্রায় ঘড়িয়াল ধরা পড়েছে। পরে খবর পেয়ে জেলা সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তারা দুষ্প্রাপ্য মৃদু পানির এই ঘড়িয়ালটি আহতাবস্থায় উদ্ধার করে আবার সেটাকে পদ্মা নদীতে অবমুক্ত করেছেন বলে নিশ্চিত করেছে বন বিভাগ।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর ইউনিয়নের লালনশাহ সেতুর নিচে পদ্মা নদীতে আবুল কালাম আজাদ ও সজল নামের দুই জেলের ইলিশ ধরা জালে প্রায় সাড়ে তিন মিটার দৈর্ঘ্যের ঘড়িয়ালটি আটকে যায়।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যার পর বাহিরচর গ্রামের সজল ও কালাম পদ্মা নদীতে ইলিশ ধরার জাল ছড়ালে কিছুক্ষণের মধ্যেই জালে টান পড়ে। এতে বড় কোনো মাছ আটকে থাকতে পারে ভেবে সাবধানে তারা জাল টেনে নৌকাতে তোলার চেষ্টা করেন। পরে নৌকাতে অধিক ওজনের জাল টেনে ওঠানোর পর ঘড়িয়ালটি দেখতে পান।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া সামাজিক বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা জি এম মোহাম্মদ কবীর বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যার পর কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার লালন শাহ সেতুর ভাটিতে ‘কুমির’ ধরা পড়েছে এমন সংবাদ পেয়ে বন বিভাগের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যাই। সেখানে আমরা দেখি সেটি কুমির নয়; এটি বিরল প্রজাতির ও বিলুপ্ত প্রায় মৃদু পানির ঘড়িয়াল। এরা শান্ত ও নিরীহ প্রজাতির অহিংস জলজ প্রাণী, এরা মূলত মাছ খেয়ে জীবন ধারণ করে।
একসময় বাংলাদেশের নদ-নদীতে প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে ঘড়িয়াল এখন বিলুপ্তির পথে। খবর পেয়ে ঘড়িয়ালটি উদ্ধার করে পদ্মা নদীতে অবমুক্ত করা হয়েছে।
অনেকে প্রাণীটিকে মেছো কুমির বলে। ঘড়িয়ালের প্রধান খাদ্য মাছ। নদীর বালুচরে রোদ পোহাতে পছন্দ করে প্রাণীটি। এগুলো মানুষের কোনো ক্ষতি করে না। বরং বিভিন্ন রাক্ষুসে মাছ খেয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। প্রধান খাদ্য মাছ বলেই অনেকেই মেছো কুমির বলা থাকে। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা ও ব্রক্ষপুত্র এবং এগুলোর শাখা নদীতে এক সময় এ ধরনের কুমির প্রচুর মিলত। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম কোনো ঘড়িয়াল কুমির নেই বললেই চলে। ঘড়িয়াল মহাবিপন্ন প্রাণী যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।