বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকা মৌসুমের প্রথম বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। অবশ্য বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া এ জলাবদ্ধতাকে জলাবদ্ধতা বলতে নারাজ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা।
তারা একে বলছেন জলজট। আকস্মিক বৃষ্টিতে এ জলজট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকে বৃষ্টিপাত শুরুর আধাঘন্টারও কম সময়ের মধ্যেই পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি শুরুর পর এত কম সময়ের মধ্যে জলাবদ্ধতা অতীতে দেখা যায়নি। এজন্য তারা বাস্তবায়নাধীন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) নগরীর বিভিন্ন খালে যে বাঁধ দিয়েছে, তাকে দায়ী করেছেন।
তবে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের সেনাবাহিনী নিযুক্ত প্রকল্প পরিচালক লে. কর্নেল শাহ আলী বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, হঠাৎ অতিবৃষ্টি হয়েছে। তীব্রতা বেশি ছিল। পানি সাময়িকভাবে জমে গেলেও দ্রুত নেমে যাচ্ছে। এজন্য এটাকে আমরা জলাবদ্ধতা বলছি না। ড্রেন এবং খালের প্রশস্ততা আমরা বাড়াতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য পানি দ্রুত নামছে। খালের যেসব স্থানে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কেটে দিয়েছি। আমাদের কুইক রেসপন্স টিম, ইমার্জেন্সি টিম আটকে থাকা পানি সরাতে কাজ করছে।
সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম বলেন, হঠাৎ টানা বৃষ্টি, জোয়ার এবং বিভিন্ন খালে বাঁধ দেওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা হয়েছে। নগরীর অন্তত ২০ শতাংশ এলাকা তলিয়ে গেছে। এর চেয়েও কিছুটা বেশি হতে পারে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে শহরের অধিকাংশ নিচু এলাকায় তলিয়ে যাবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প সেনাবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।
জলাবদ্ধতা নিরসনে জনসচেতনতার গুরুত্ব তুলে ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এ কে এম বেলায়েত হোসেন বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, প্রকৃতিকে তার পাওনা খাল-বিল, নালা-নর্দমা,পুকুর-দীঘির মালিকানা ফেরৎ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রকৃতি চট্টগ্রামকে মানুষের বসবাসের জন্য সুন্দররুপে সাজিয়ে দিয়েছিল। উঁচু আবাস ভূমি অপেক্ষা জলাভুমির পরিমান বেশি ছিল। বর্ষা কালে পাহাড় থেকে নেমে আসা অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি এসব নিচু জায়গায় জমা হতো। বৃষ্টির পানির বেশির ভাগ অভ্যন্তরিন নালা -নর্দমার মাধ্যমে খাল দিয়ে সাগরে গিয়ে পরতো।
তবে, বেশিরভাগ জলা-ভূমিকে মাটি ভরাট করে আবাস ভূমিতে রুপান্তর করেছি। বেশিরভাগ পুকুর-দীঘি ভরাট করে বাড়ি ঘর তৈরী করেছি। পানি নিষ্কাশনের জন্য নির্মিত নালা-নর্দমা ময়লা আবর্জনা ফেলে সব ভরাট করে রেখেছি।খালের অংশ এমনকি পুরো খাল অবৈধভাবে দখল করে বাড়ি ঘর দোকান-পাট মিল কারখানা তৈরি করা হয়েছে।
প্রাকৃতিক জলাধার, খাল বিল নালা নর্দমা সব মানুষেই ধ্বংস করেছে। জনগন তাদের ভবিষ্যৎ চিন্তা না করে প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। সচেতন জনগনকেও এসবের বিরুদ্ধে কোন প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। তাই প্রকৃতি এখন মানুষের বিরুদ্ধে প্রাকৃতিক নিয়মেই প্রতিশোধ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।