খুচরায় বস্তাপ্রতি দাম বাড়লো ১৫০ টাকা
*ঈদ এলেই পণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে: ক্যাব
*লকডাউনে পণ্য নিতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের: নিজাম উদ্দীন
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে মিলছে না স্বস্তি। করোনা পরিস্থিতিতে বাজারে সব ধরনের চালের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ২ থেকে ৩ টাকা বেড়েছে। প্রকারভেদে বস্তাপ্রতি দাম ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা বেড়েছে।
রবিবার (১১ জুলাই) ঈদগাঁ, বেপরী পাড়া ও হালিশহর ও বেশ কয়েকটি খুচরা বাজার থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পাহাড়তলী বা খাতুনগঞ্জের আড়ত থেকে পাইকারি দামে চাল কিনে আনেন খুচরা দোকানিরা। ভ্যান বা ছোট পিকআপে করে চালের বস্তাগুলো আনতে হয়। তবে লকডাউন পরিস্থিতিতে চালকরা বাড়তি ভাড়া দাবি করেন। উপায় না দেখে অতিরিক্ত ভাড়া গুণে পণ্যগুলো দোকানে আনতে হয়। তাই বাড়তি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে জানালেন দোকানিরা।
খুচরা বাজারে ৩ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি সরু চাল মানভেদে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, মাঝারি আকারের চাল ৩ টাকা বেড়ে কেজিতে ৫৫ টাকা, মোটা চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে মানভেদে ৪৬ থেকে ৫০ টাকা, কেজিতে ২ টাকা বেড়ে নাজিরশাইল ৭০ টাকা, বিআর-২৮ জাতের চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৫২ টাকা ও মিনিকেট চাল কেজিতে ২ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৬২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া পাইজাম জাতের চাল মানভেদে ৪৭ থেকে ৫০ টাকা, আটাশ জাতের চাল মানভেদে ৫০ থেকে ৫২ টাকা, পোলাওয়ের চাল মানভেদে ৯০ থেকে ১০০ টাকা ও বাসমতি ৬৫ থেকে ৬৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
আড়তদারদের দাবি, লকডাউন পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী ট্রাক চালু থাকায় পাহাড়তলী পাইকারী বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে। তাই পাইকারিতে চালের দাম বাড়েনি। পাইকারি বাজারে মিনিকেট চাল মানভেদে ২ হাজার ৭শ’ থেকে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, বিআর-২৮ প্রতি বস্তা ২ হাজার ২শ’ টাকা, স্বর্ণা জাতের চাল বস্তা প্রতি ২ হাজার ২শ’ টাকা, সরু জাতের চাল ২ হাজার ৮শ’ টাকা ও মোটা চাল প্রতি বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দীনের সাথে কথা হলে তিনি বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, দীর্ঘ চার মাস ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেল মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমতে শুরু করেছিল চালের দাম। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে ত্রাণ সহায়তা দেয়ায় গেল মাসে সরকারি গুদামে চালের পরিমাণ কমে যায়। সরকার মজুদ বাড়াতে মিলারদের কাছ থেকে আবারও ভরা মৌসুমে চাল কিনেছে। ফলে মিলাররা এটাকে পুঁজি করে গেল মাসেও বস্তাপ্রতি চালের দাম ২শ’ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছিল। এরপর নতুন করে পাইকারিতে আর দাম বাড়েনি।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান লকডাউন পরিস্থিতিতে পণ্যবাহী পরিবহন চালু রয়েছে। তাই বাজারে পর্যাপ্ত চালের সরবরাহ রয়েছে। আমাদের কাছ থেকে চাল কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা সেটা আবার বিক্রি করেন। তবে লকডাউনে নগরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পণ্য নিতে বাড়তি ভাড়া গুণতে হচ্ছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। তাই চালের দাম খুচরা পর্যায়ে বেড়েছে।
একই বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, ঈদ এলেই পণ্যের দাম বাড়ানো ব্যবসায়ীদের একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ ঠিক থাকলে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। এছাড়া করোনায় অনেক মানুষের আয় নেই। অনেকে ঠিকমত বেতন পাচ্ছেন না। এর মধ্যে পণ্যের দাম বাড়লে মানুষ অসহনীয় কষ্টে পড়বে। কয়েক মাস ধরে চাল নিয়ে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কারসাজি করছে। তাই বাজার তদারকি সংস্থাগুলোকে নজরদারি বাড়াতে হবে। অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।