Home চট্টগ্রাম বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম ভার্সিটি ক্যাম্পাস

বিক্ষোভে উত্তাল চট্টগ্রাম ভার্সিটি ক্যাম্পাস

ছবি সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিচার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে বৃহস্পতিবার দিনভর উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস।

বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার ও প্রশাসনিক ভবনের সামনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা, জয়বাংলা ভাস্কর্যের সামনে প্রগতিশীল ছাত্রজোট এবং বিজ্ঞান অনুষদের সামনে রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। ক্যাম্পাস জুড়ে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অকার্যকর যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে ঘটনার বিচার করে তা কার্যকর করার দাবি জানান আন্দোলনকারীরা। চার কার্যদিবসের মধ্যে এসব দাবি বাস্তবায়িত না হলে রেজিস্ট্রারসহ প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যদের পদত্যাগ দাবি করেন তারা।

এর আগে বুধবার ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা এবং রাত ১০টার মধ্যে মেয়েদের হলে প্রবেশের নির্দেশনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন ছাত্রীরা।

এদিন উপাচার্যের বাসভবনের সামনে চার ঘণ্টা অবস্হান নেন তারা। শিক্ষার্থীদের লিখিত দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে ছাত্রীরা হলে ফিরে যান। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বলেন, চবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আরো গুরুত্ব দিয়ে চিন্তা করা উচিত। বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় সিসি ক্যামেরা নেই। মূল ক্যাম্পাসের সড়ক, ফ্যাকাল্টিগুলো ছাড়া আর কোথাও সবসময় পুলিশ টহল থাকে না। আমরা ঘটনার সময়ের প্রত্যেকটি পয়েন্টের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছি। ফুটেজগুলো গুরুত্বসহকারে যাচাই করা হচ্ছে। আমরা পুলিশের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। প্রকৃত দোষীদের শনাক্ত করে কঠোর ব্যবস্হা গ্রহণ করা হবে।

ছাত্রীর শ্লীলতাহানির বিচার দাবিতে গতকাল দিনভর উত্তাল ছিল চবি ক্যাম্পাস। ‘ভিসি যেখানে নারী, সেখানে অনিরাপদ কেন আমি?, ধর্ষকেরা বন্দি হয়নি বুক ফুলিয়ে চলে, তোমরা বরং ছাত্রীদের ক্লাস করাও হলে, আপস না হোক লুকিয়ে থাকা সিন্ডিকেটের সঙ্গে, নাম অবশ্যই জানা তবে নাম কেন অজ্ঞাতনামা, চবির মাটিতে নিপীড়কের ঠাঁই নাই, অবিলম্বে নরপিশাচদের শাস্তি চাই’—ইত্যাদি স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

cu

চবি প্রশাসনের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে রসায়ন বিভাগের ছাত্রী সাজিয়া আহমেদ বলেন, যে ঘটনার বিচার চার ঘণ্টার মধ্যে হওয়ার কথা ছিল, সে ঘটনার চার দিন পেরিয়ে গেলেও প্রশাসন কিছু করতে পারেনি। ক্যাম্পাসকে আমরা আমাদের বাড়ির মতো মনে করি। এখানে প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। আমাদের বাড়িতে অভিভাবকরাই আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। এ রকম অভিভাবক থেকেই বা কী লাভ? আধুনিক ভাষা শিক্ষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নুজরাত জেবিন সুমাইয়া বলেন, ছাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারেনি। এভাবেই আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ সজল বলেন, চবি ক্যাম্পাসে সম্প্রতি ছাত্রী হেনস্তার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এগুলোর কোনো বিচার করতে পারেনি।

ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

গত রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রীতিলতা হল এলাকায় এক শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের পর আপত্তিকর ভিডিও ধারণের অভিযোগ ওঠে। ভুক্তভোগী ঐ শিক্ষার্থী পরদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কার্যালয়ে এই বিষয়ে অভিযোগ দিতে গেলে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বাধা দেন বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। তবে রেজাউল হক রুবেল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

cu

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন—বেগম খালেদা জিয়া হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম, শামসুন্নাহার হলের প্রভোস্ট ড. লায়লা খালেদা ও সহকারী প্রক্টর অরূপ বড়~য়া। সদস্যসচিব করা হয়েছে সহকারী প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলামকে। কমিটিকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এদিকে ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় গত মঙ্গলবার হাটহাজারী থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার শিকার ঐ ছাত্রী অজ্ঞাতনামা পাঁচ জনকে আসামি করে এ মামলা করেন।