বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছাত্রীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার আজ শনিবার ৩৪তম সিনেট অধিবেশনে এ কথা জানিয়ে বলেন, ছাত্রী হেনস্তার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে গ্রেপ্তার করায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ধন্যবাদ। জড়িত দুইজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং অন্যরা বহিরাগত। বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা জড়িত তাদের আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সম্মেলন কক্ষে সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়েশা খানের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আরও লাইটিং এবং সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
শনিবার (২৩ জুলাই) সকাল সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের চান্দগাঁও ক্যাম্পে র্যাব-৭ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পতেঙ্গার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় এক যাত্রীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে চারজনকে আটক করেছে র্যাব।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে ও বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করে জানতে পারি আজিমের নেতৃত্বে এ ঘটনার সঙ্গে ৬ জন সস্পৃক্ত। অভিযুক্ত সাইফুলকে ধরতে পারলে আরও বিস্তারিত জানা যাবে। ঘটনাটি তাৎক্ষণিক ঘটেছে। পূর্ব কোনো পরিকল্পনা ছিল না তাদের। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগের ছাত্রী গত ১৭ জুলাই রাত সাড়ে ৯টার দিকে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বন্ধুকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকা হয়ে প্রীতিলতা হল সংলগ্ন রাস্তায় যাওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে অজ্ঞাত ৫ জন লোক তাদের পথরোধ করে জেরা করতে থাকে। এ সময় তার বন্ধুকে মারধর করতে থাকে। তখন বাধা দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে মারধরের একপর্যায়ে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুকে জোর করে বেগম ফজিলাতুন নেছা হলের পেছনে ইটের রাস্তা দিয়ে ঝোপঝাড়ের দিকে নিয়ে যায়। মারধরের পর শ্লীলতাহানি করে ও অশ্লীল ভিডিও ধারণ করে।
তিনি আরও জানান, আসামিদের একজন হুমকি প্রদান করে বলে তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক না করলে ধারণকৃত ভিডিও ভাইরাল করে দেবে। তারা এক ঘণ্টা আটকে রেখে ভুক্তভোগী ও তার বন্ধুর ২টি মোবাইল ও নগদ ১৩ হাজার ৭০০ টাকা নিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বাদী হয়ে গত ২০ জুলাই হাটহাজারী মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন।
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আসামিদের ধরতে র্যাব নজরদারি এবং তৎপরতা চালায়। গত ২২ জুলাই রাতে হাটহাজারী ও রাউজানের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. আজিম (২৩), হাটহাজারী কলেজের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র মো. নুর হোসেন শাওন (২২), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. নুরুল আবছার বাবু (২২), হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ রানা (২২) কে আটক করা হয়।
ছাত্রী হেনস্তায় অভিযুক্ত আজিম নোয়াখালীর হাতিয়া থানার চর ভারত সেন এলাকার মো. আমির হোসেনের পুত্র। নুর হোসেন শাওন হাটহাজারীর ফতেপুর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জাবেদ হোসেনের ছেলে। নুরুল আবছার বাবু ফেনীর পরশুরাম বেড়াবাড়ি এলাকার বেলায়েত হোসেনের ছেলে। মাসুদ রানা ঝালকাঠির আশিয়ার এলাকার আবদুল মান্নানের ছেলে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, হাটহাজারী সরকারি কলেজের দুই শিক্ষার্থীর আত্মীয়-স্বজন চবিতে কর্মরত থাকার কারণে তারা প্রায়ই ক্যাম্পাসে থাকে।
এর আগে গত রবিবার (১৭ জুলাই) রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হতাশার মোড় থেকে বোটানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় নিয়ে এক ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। পাঁচজন ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে বলেও অভিযোগ করা হয়। পরে ১৯ জুলাই প্রক্টর অফিসে লিখিত অভিযোগ দেন ওই ছাত্রী।
এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে একই দিন হাটহাজারী থানায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে মামলাও করেন। ওই ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রীদের রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের নির্দেশনা দিলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বুধবার গভীর রাত অবধি হলের বাইরে বিক্ষোভ দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। পরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।