Home First Lead চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ: প্রধানমন্ত্রী

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ঢাকা: ‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চিন্তা থেকেই সরকার দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এখন থেকেই উদ্যোগী না হলে দেশ পিছিয়ে যাবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিশ্বে এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা আসছে। এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কথা মাথায় রেখেই আমাদের দক্ষ কর্মজ্ঞান সম্পন্ন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। সেটার জন্য এখন থেকেই উদ্যোগ না নিলে আমরা পিছিয়ে যাব। সুতরাং আমরা পিছিয়ে যেতে চাই না। এ জন্য প্রশিক্ষণটা সাথে সাথে দরকার। কারণ আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই। বিশ্ব প্রযুক্তিগতভাবে যতটুকু এগোবে আমরা তার সঙ্গে তাল মিলিয়েই আমরা চলবো।”

ফ্রিল্যান্সার আইডি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে বুধবার সন্ধ্যায় এ কথা বলেন শেখ হাসিনা। সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শেরে বাংলা নগরের বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) অডিটোরিয়ামের ওই আয়োজনে ভার্চ্যুয়ালি অংশগ্রহণ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী দেশের তরুণ প্রজন্মের ওপর আস্থা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, “আমি জানি আমাদের ছেলে-মেয়েরা অনেক মেধাবী। অল্পতেই তারা শিখতে পারে। সরকার হিসেবেই আমাদের কাজ হচ্ছে সেই সুযোগটা সৃষ্টি করে দেওয়া। সেটাই আমরা করে দিচ্ছি।”

আরও বলেন, সারা দেশে ৩৯টি হাইটেক বা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। এগুলোর নির্মাণ শেষ হলে প্রায় ৩ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হবে। যার মধ্যে যুব সমাজই সবচেয়ে বেশি কাজ পাবে। দেশ-বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আসবে এবং দক্ষ কর্মীবাহিনীর সৃষ্টি হবে। সরকার চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রতিযোগিতা মোকাবিলায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১টি বিশেষায়িত ল্যাব স্থাপনসহ দক্ষ কর্মীবাহিনী সৃষ্টিতে নানারকম প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নিচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

প্রতিটি জেলায় সরকার ‘শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং ও ইনকিউবেশন সেন্টার’ স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বলেন উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, সরকারের এসব উদ্যোগের ফলে দেশে দারিদ্র্যের হার হ্রাস পাচ্ছে, কর্মসংস্থান হচ্ছে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও অনেক দূর দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আধুনিক প্রযুক্তিই পারবে আমাদের দেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে।

শেখ হাসিনা বলেন, “ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের ফলে আমাদের যে মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে তাতে করে দেশে নয়, বিদেশেও কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। আর ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে এমন এক ধরনের উদ্যোগ যার মাধ্যমে ঘরে বসেও অর্থ উপার্জন করা সম্ভব।”

শারীরিক প্রতিবন্ধীরাও ফ্রিল্যান্সিয়ের মাধ্যমে ঘরে বসে যেমন অর্থ উপার্জন করতে পারবে তেমনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখারও সরাসরি সুযোগ পাবে। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিবন্ধীদেরও ট্রেনিং দিয়ে কাজে লাগাতে চাই, যাতে তারা সমাজে অবহেলিত না হন।”

তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদের পরামর্শে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ থেকে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারসহ তার সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে প্রযুক্তিকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার পদক্ষেপ সমূহ ও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

ফ্রিল্যান্সারদের পরিচয়পত্র প্রদানের উদ্যোগ নেওয়ায় সরকারের তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ও তথ্য প্রযুক্তি বিভাগ এবং তার তথ্য প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “সজীব ওয়াজেদ জয়কে শুরু থেকেই বলে এসেছি এটা করতে হবে, তুমি উদ্যোগ নাও। আমাদের এই ছেলে-মেয়েদের একটা স্বীকৃতি দেয়া একান্তভাবে দরকার।”

তিনি বলেন, “আজকে ফ্রিল্যান্সারদের আইডি কার্ড প্রদানের জন্য একটি ওয়েব পোর্টাল শুরু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সকল ফ্রিল্যান্সাররা রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে আইডি কার্ড সংগ্রহ করতে পারবে। এই আইডি কার্ডের মাধ্যমে তারা সামাজিক পরিচিতির পাশাপাশি ব্যাংক ঋণ নিতে পারবে, আর চাকরি খুঁজতে হবে না, নিজেরা কাজের পাশাপাশি  অন্যকেও কাজ দিতে পারবে।”

গৃহিণীরা ঘরে বসে এর মাধ্যমে কাজ করে কিছু অর্থ উপার্জনের সুযোগ পাওয়ায় নারীর আরও ক্ষমতায়ন ঘটবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

সভাপতিত্ব করেন আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’-এর ওপর নির্মিত ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ সংক্রান্ত পৃথক দুটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক একটি অ্যানিমেটেড ভিজ্যুয়াল প্রেজেন্টেশন পরিবেশিত হয় অনুষ্ঠানে।