বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: চাল কেটে বা ছেঁটে ‘মিনিকেট’ কিংবা ‘নাজিরশাইল’ নামে বিক্রয়কারি অটোরাইস মিলের তালিকা দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
কথিত ‘মিনিকেট’ কিংবা ‘নাজিরশাইল’ মানবদেহের জন্য স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করছে কি না এবং খাদ্যের পুষ্টিমানের ক্ষতি হয় কি না সে সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রবিবার এক রিটের শুনানিশেষে বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এবং বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত আদালত আদেশসহ রুল দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টদের ৩ সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। ‘হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পীস ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরপিবি)-এর পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. ছারওয়ার আহাদ চৌধুরীসহ তিন আইনজীবী রিট করেন।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রিটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ৩০ জনকে বিবাদী করা হয়।
শুনানিতে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, বাংলাদেশের মানুষের অন্যতম প্রধান খাদ্য চাল কিন্তু। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অনেক ব্যবসায়ী চালের খাদ্য গুণাগুণ নষ্ট করে কেটে-ছেটে ভিন্ন নামে বাজারজাত ও বিক্রি করছে। এমনকি যে নামে চাল বিক্রি হচ্ছে সেরকম কোনো ধান বাংলাদেশে উৎপাদনই হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রকাশিত কয়েকটি প্রতিবেদনে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে ওভার পালিশ ও ছাঁটাইয়ের কারণে জিংকের পরিমান অনেক কমে যায়। এমনকি পুষ্টি উপাদান অনেক কমে যায়।
মনজিল মোরসেদ বলেন, বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে চালের উপরের অংশ ছেঁটে ফেলার কারণে যে চাল মানুষ গ্রহণ করছে সেখানে কার্বোহাইড্রেটের অংশ বেশি। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্তের আশঙ্কা বেড়েছে। চাল কেটে-ছেঁটে বিক্রি করা মিনিকেট, নাজিরশাইল চালে উচ্চ গ্লাইসেমিক ইনডেস্ক এর মাত্রা বেশি। দীর্ঘদিন এ রকম চাল খেলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯, বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪, খাদ্য নিরাপত্তা আইন ২০১৩ এবং সংবিধানের আর্টিকেল ১৮(১) অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও কর্তৃপক্ষের নিস্ক্রিয়তার কারণে অসাধু ব্যবসায়িরা খাদ্য নিয়ে মানুষকে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলছে। শুনানি শেষে আদালত উপরোক্ত আদেশ এবং রুল জারি করেন।
আদেশ সম্পর্কে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, যে সব অটো রাইস মিল চাল কেটে-ছেটে মিনিকেট, নাজিরশাইল চাল নামে বিক্রি করছে তাদের তালিকা করে এফিডেভিট আকারে ৪ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। দ্বিতীয়ত কাটা-ছাঁটা চালে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিছু রয়েছে কি না এ বিষয়ে গবেষণা করে বিসিএসআইআর’র চেয়ারম্যান, বিআরআরআই’র মহা-পরিচালক এবং বিএআরআই’র চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব,স্বাস্থ্য সচিব, খাদ্য, কৃষি এবং বাণিজ্য সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহা-পরিচালক, র্যাব, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ ডাইরেক্টরেট, বিএসটিআই, রাইস রিসার্স ইনষ্টিটিউট, কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট, সাত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, এবং অটো রাইস মিলস মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারিকে রিটের বিবাদী করা হয়েছে। শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাইনুল হাসান সরকারপক্ষে অংশ নেন।