Home First Lead শ্রমিক ধর্মঘটে চা শিল্পে ক্ষতি তিন শ’ কোটি টাকার বেশি

শ্রমিক ধর্মঘটে চা শিল্পে ক্ষতি তিন শ’ কোটি টাকার বেশি

ছবি সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রীর সাথে চা বাগান মালিকদের সভা আজ 

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

সিলেট: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গত ১৩ আগস্ট থেকে চা শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটের প্রেক্ষাপটে আজ শনিবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চা বাগান মালিকদের সাথে সভা করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে এ সভা হবে বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এম এম ইমরুল কায়েস।

এদিকে, শ্রমিক ধর্মঘটে গাছের পাতা নষ্ট হয়ে গেছে গাছেই। আজ কর্মবিরতির ১৭ তম দিন। একদিন কাজ বন্ধ থাকলে দেশের ১৬৭টি চা-বাগানে প্রায় ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয় বলে অনুমান সংশ্লিষ্টদের। সেই হিসেবে শুক্রবার পর্যন্ত ক্ষতির পরিমান ৩২০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় নির্বাহী উপদেষ্টা রামভজন কৈরী বলেন, ‘আমরা সবাই প্রধানমন্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই সবকিছু বিবেচনা করে একটি মানসম্মত মজুরি নির্ধারণ করবেন। আমার বিশ্বাস প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সাধারণ চা শ্রমিকেরা সেটাই মেনে নেবেন।’

বাংলাদেশ চা ছাত্র যুব পরিষদের নেতা মোহন রবিদাস বলেন, ‘আন্দোলনরত চা শ্রমিকেরা মজুরির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ঘোষণা শুনতে চান। বাগান মালিকদের সঙ্গে শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে বসবেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর সম্মানার্থে সভা-সমাবেশ ছাড়াই শুক্রবার ও শনিবার ধর্মঘট পালন করবেন শ্রমিকরা।’

৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে ৯ আগস্ট থেকে চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি ও পরে ১৩ আগস্ট থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট পালন করে আসছেন চা শ্রমিকরা। প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটি ধর্মঘট প্রত্যাহার করলেও সেটা মানেনি সাধারণ শ্রমিকরা। আন্দোলন সফল করতে সড়ক, মহাসড়ক, রেলপথ অবরোধ করতেও দেখা গেছে তাদের। দাবি আদায়ে গত কয়েক দিন ধরে বেশ উত্তাল ছিল চা বাগানগুলো।

চা শ্রমিকরা জানান, তারা দৈনিক ১২০ টাকা মজুরি তখনই পান, যখন বাগানের নির্ধারিত দৈনিক ন্যূনতম ২৪ কেজি পাতা সংগ্রহ করতে পারেন। ২৪ কেজির নিচে হলে মজুরিও অনুপাতে কম আসে। তবে সাধারণত ভরা মৌসুমে একজন শ্রমিক ৫০ কেজি পর্যন্ত পাতা তুলতে পারেন। কারণ গাছে তখন কচি পাতা বেশি থাকে। এ সময় আয়ও তাদের বেশি হয়।

বাগান ব্যবস্থাপকরা জানান, এখন চা শিল্পে উৎপাদনের ভর মওসুম।  লাগাতার শ্রমিক ধর্মঘটে ব্যাপক ক্ষতির মুখে এই শিল্প।  প্রতিদিন গাছ থেকে পাতা উত্তোলন করতে হয়, না হলে পাতার মান ঠিক থাকে না। গাছে থাকা পাতাগুলো বড় হয়ে যাচ্ছে। চা প্রক্রিয়াকরণ কারখানাগুলোও অচল। কারখানায় পাতা পড়ে আছে।  শ্রমিক আন্দোলনের প্রথম দিকে সবগুলো চা বাগানে উত্তোলনকৃত কাঁচা চায়ের পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে না পারায় পঁচে ও শুকিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া চা প্লান্টেশন এলাকা থেকে কচি চায়ের পাতায় উত্তোলন করতে না পারায় এগুলোও এক থেকে দেড় ফুট লম্বা হয়ে গেছে।

মাধবপুর,  শ্রীগোবিন্দপুর, পাত্রখোলা ও দলই চা বাগানে গেলে দেখা যায়, উত্তোলন করা চা পাতা পড়ে আছে ফ্যাক্টরিতে। এভাবে পড়ে থাকায় পাতাগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। তাছাড়া প্লান্টেশন এলাকার চায়ের গাছগুলো ঠিকমতো পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছের কচি পাতায় উত্তোলন করতে না পারায় প্রায় দেড় ফুট লম্বা হয়ে গেছে। অনেক গাছে পোকার সংক্রমণে পাতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। চায়ের জন্য এ পাতা প্রক্রিয়াজাত করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশীয় চা-সংসদের চেয়ারম্যান মো. শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘শ্রমিকদের আন্দোলনে যাওয়ার কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। টানা আন্দোলনে তাদের ক্ষতির পাশাপাশি  চা শিল্পের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই ভরা মৌসুমে শ্রমিকদের ধর্মঘট চা শিল্পের জন্য অশনিসংকেত।