বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
মৌলভীবাজার: কমলগঞ্জ উপজেলার ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকাধীন পাত্রখোলা চা বাগানের দলই ভ্যালি মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন মৌলভীবাজার জেলার চা শ্রমিকরা। শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্স এর মাধ্যমে চা শ্রমিকদের সাথে দেশের চারটি স্থানে চা বাগানের শ্রমিকদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
ভিডিও কনফারেন্সকে সফল করতে প্রশাসনিকভাবে সকল প্রকার প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে পাত্রখোলা চা বাগানের দলই ভ্যালী মাঠের স্থান পরিদর্শন করেন মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ।
এ সময় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মো: রফিকুর রহমান, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ সার্কেল) শহিদুল ইসলাম মুন্সি, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলী রাজিব মাহমুদ মিঠুন, কমলগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ ইয়ারদৌস হাসান, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান আসিদ আলীসহ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা, চা বাগান ব্যবস্থাপন, চা শ্রমিক প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
শনিবার বিকেল ৪টায় চা শ্রমিকেরা কমলগঞ্জ উপজেলার ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) পাত্রখোলা চা বাগানের দলই ভ্যালি মাঠ থেকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছে, ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ ছাড়াও মৌলভীবাজার জেলার ৯২টি চা বাগান থেকে চা শ্রমিক ইউনিয়নের পঞ্চায়েত কমিটির নেতৃবৃন্দ, নারী শ্রমিকসহ সহস্রাধিক চা শ্রমিক অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভিডিও কনফারেন্সে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় এ জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক নিশ্চিত করাসহ কারিগরি সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। চা শ্রমিকদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কারা কথা বলবেন, তাদের তালিকাও তৈরি করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলার সকল উপজেলার চা বাগান এলাকার অন্তত তিনটি স্থানে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বড় পর্দায় ভিডিও কনফারেন্সটি সরাসরি দেখানো হবে। এ ছাড়া হবিগঞ্জ, সিলেট ও চট্টগ্রাম থেকেও একই সঙ্গে চা শ্রমিকেরা ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হবেন।
চা শ্রমিক ইউনিয়ন সিলেট ভ্যালির সভাপতি রাজু গোয়ালা বলেন, ‘এখানকার চা শিল্পের প্রায় ১৬৮ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান চা শ্রমিকদের সাথে কথা বলবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছি। সহস্রাধিক শ্রমিক এখানে জড়ো হলেও সবাই কথা বলতে পারবেন না। সিলেট থেকে তিনজন কথা বলতে পারবেন বলে জানানো হয়েছে। আমরা তিনজনের তালিকা প্রশাসনের কাছে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিজেদের দাবি-দাওয়ার কথা তুলে ধরবেন জানিয়ে রাজু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চা শ্রমিকদের বিষয়ে আন্তরিক। আশা করছি তিনি আমাদের দাবি পূরণে উদ্যোগী হবেন।’
শনিবার গলফ মাঠের নিরাপত্তায় মহানগর পুলিশের পাশাপাশি চা শ্রমিক জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছাসেবকরাও দায়িত্ব পালন করবে বলে জানান রাজু।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-দলই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাশ পাইনকা বলেন, শনিবার বিকেলে দলই ভ্যালি ক্লাবের মাঠ থেকে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যুক্ত হবেন চা শ্রমিকেরা। এ সময় অন্যান্য চা শ্রমিক প্রতিনিধিদেরও উপস্থিত থাকার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল বলেন, ‘মোট ৪টি ভ্যানুতে কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হবে। চা শ্রমিকদের পক্ষ থেকে আমাদের অনেক দাবি-দাওয়া আছে। প্রশাসন থেকে কিছু নির্দেশনা আছে। নির্দেশনার আলোকে আমরা আমাদের যে কথা আছে, তা বলব।’
প্রসঙ্গত, দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ আগস্ট থেকে দেশের ১৬৭টি চা বাগানে চা শ্রমিকেরা কর্মবিরতির আন্দোলন শুরু করেন। চার দিন দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি শেষে তারা লাগাতার কর্মবিরতির আন্দোলনে যান। পরে গত ২৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে চা বাগান মালিকদের বৈঠক শেষে চা শ্রমিকদের মজুরি ১৭০ টাকার ঘোষণা দেওয়া হয়।
চা শ্রমিকেরা এই ঘোষণার পর কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। নতুন মজুরি নির্ধারণের পর চা শ্রমিকদের খোঁজখবর নিতে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠক করার কথা জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউস। এরই অংশ হিসেবে ভিডিও কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী কথা বলবেন জেনে সিলেটসহ সারা দেশের চা শ্রমিকরা আনন্দে উদ্বেলিত। এই আনন্দঘন মুহূর্ত স্মরণীয় করে রাখতে নানা আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন।
সিলেটের লাক্কাতুড়া বাগানের গলফ মাঠে আয়োজন করা হয়েছে অনুষ্ঠানের। সেখানে হাজির হবেন সিলেট জেলার ২৫ টি চা বাগানের কয়েক হাজার শ্রমিক। অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। একই সাথে এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে রাজনৈতিক তৎপরতাও লক্ষণীয়। সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে অনুষ্ঠান সফল করতে নানা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন।