বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
চুঙ্গাপিঠা
প্রাচীন ঐতিহ্য সিলেটের পিঠে-পুলির অন্যতম চুঙ্গাপিঠা বা চুঙ্গাপুড়া। খড়ের আগুনে বাঁশের ভেতর আতপ চালের গুঁড়ি সেদ্ধ হয়ে তৈরি হয় লম্বাটে সাদা পিঠা। চুঙ্গার ভেতরে তৈরি বলে এর নাম চুঙ্গাপিঠা। বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলে শীত মৌসুমে ভাপা, পুলি আর মালপোয়া পিঠার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পিঠা উৎসব মাতালেও এর দেখা পাওয়া এখন দুষ্কর।
এক সময় বাড়িতে জামাই এলে এই চুঙ্গাপিঠার সঙ্গে হালকা মসলায় ভাজা মাছ, নারকেল, কুমড়ার মিঠা বা রিসা পরিবেশন করা ছিল রেওয়াজ। রাতভর চলত চুঙ্গাপুড়ার কাজ। গিট্টু (ভাঁজ) মেপে ছোট ছোট করে কাটা বাঁশের ওপর জ্বলত খড়ের আগুন। কালের পরিক্রমায় সেই পিঠা আজ হারিয়ে যেতে বসেছে। পৌষ ও মাঘের শীতের রাতে বৃহত্তর সিলেটের গ্রামে গ্রামে চুঙ্গাপিঠা তৈরির ধুম পড়ে। আগে চুঙ্গাপিঠা তৈরির সময় সঙ্গে থাকত গান, পুথিপাঠ, কবিতা আবৃত্তি, কৌতুকসহ বিভিন্ন পরিবেশনা। এখন এসব পরিবেশনা না থাকলেও রয়েছে শীতের রাতে খড়ের আগুনে চুঙ্গাপিঠা তৈরির প্রচলন।
দুই থেকে তিন ফুট বাঁশ নিতে হবে। এগুলো স্থানীয়ভাবে ‘চুঙ্গার বাঁশ’ নামে পরিচিত। আর যে পাতায় মুড়িয়ে চাল দেওয়া হয় তাকে বলে খিত্তিপাতা। দুধ, চিনি, নারকেল, কনডেস্ট মিল্ক, চালের গুঁড়ো, কাজু, বাদাম, পেস্তা বাটা ও কুঁচো দিয়ে পিঠের স্বাদ বৃদ্ধি করা যেতে পারে। পিঠে তৈরি হয়ে গেলে তা চোঙ্গার ভেতরেই চোঙ্গা থেকে আলাদা হয়ে যায়। চুঙ্গা পিঠে পোড়াতে খড়ের প্রয়োজন। চাল কাটার পর পড়ে থাকা খড়ের স্তূপে আগুন দিয়ে তৈরি করা হত পিঠে।
এই চুঙ্গা পিঠে বানানোর নিয়মকানুন
চুঙ্গা পিঠে বানানোর কয়েকটি ধাপ রয়েছে। প্রথমে গোবিন্দভোগের ভালো গন্ধযুক্ত চাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখুন। ঢালু বাঁশের চোঙ্গা তৈরি করে নিতে হবে। এরপর কলাপাতায় মুড়িয়ে ভেজানো বিরান চাল ঢালু বাঁশের চোঙ্গের ভিতর ভরে মুখটা প্রথমে কলাপাতা ও পরে খড় দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। কলাগাছের কাণ্ডের দু’টি টুকরো মাটিতে পুঁতে তার উপরে চুঙ্গাগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে। এরপর সাজিয়ে রাখা চোঙ্গার নিচে সুপারি গাছের ডাল বা খড় দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিতে হবে। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চোঙ্গার দুইদিক পোড়াতে হবে ভালোভাবে। ঢলু বাঁশে বিশেষ ধরনের রাসায়নিক পদার্থ থাকে বলে সহজে আগুনে পোড়ে না। ক্রমাগত তৈলাক্ত তরল নিঃসরণ করে টিকে থাকে সরু বাঁশের সবুজ শরীর। এমনকি কয়েক ঘণ্টা আগুনে পোড়ার পরও সবুজই থাকে ঢলু বাঁশ। কিন্তু আগুনের ভাপে চোঙ্গার ভেতরে ঠিকই তৈরি হয়ে যায় চুঙ্গাপিঠা।