চেঙ্গিজ খান। মোঙ্গল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেই তিনি পরিচিত। যাযাবর মোঙ্গলীয় জনগোষ্ঠীর মানুষদের একত্র করে সামরিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে চেঙ্গিজ এই মোঙ্গল সাম্রাজ্যটি গড়ে তুলেছিলেন। সেসময় এটিই ছিল পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্য। এই মোঙ্গল সাম্রাজ্যের পত্তনের পর চেঙ্গিজ বিশ্বজয়ে বেরিয়েছিলেন। চেঙ্গিজ খান উত্তর চীন থেকে আফগান সীমান্ত পর্যন্ত এবং সাইবেরিয়া থেকে তিব্বতের সীমান্ত পর্যন্ত শাসন করেছিলেন এক সময়। পরবর্তী কালে তুরস্ক থেকে রাশিয়া পর্যন্ত অঞ্চলও ছিল তাঁর দখলে। একজন কিংবদন্তি সামরিক নেতা হিসেবে চেঙ্গিজ খানের নাম আজও স্মরণ করা হয়। যদিও তাঁর আগ্রাসী রক্তপিপাসু চরিত্রের জন্য তাঁকে অত্যাচারী হিংস্র একজন মানুষের তালিকাতেই ফেলা হয়। তবে যাযাবর উপজাতিদের একটি সামাজিক পরিচয়ের অধীনে একত্র করা চেঙ্গিজ খানের অন্যতম কৃতিত্ব।
চেঙ্গিজ খানের প্রাথমিক জীবন সম্পর্কে তথ্যের অপ্রতুলতা এবং নানারকম সংশয় রয়েছে। ঐতিহাসিকদের মধ্যে চেঙ্গিজের জন্মসাল নিয়ে নানা মতভেদ রয়েছে। কেউ মনে করেন ১১৫৫, কেউ বা ১১৬২, কেউ আবার ১১৬৭ সালকে সঠিক জন্মসাল বলে মনে করেন। এছাড়াও জন্মস্থান সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের অনুমান হল মোঙ্গলিয়ার হেনটি প্রদেশের বুরহান হালদুনের পাহাড়ী এলাকায় ওনন এবং হারলেন (খেরুলেন) নদীর কাছে চেঙ্গিজ খানের জন্ম হয়। মনে করা হয় যে, চেঙ্গিজের নাম জন্মের পরে রাখা হয়েছিল তেমুজিন। তিনি বোর্জিগিন বংশে জন্মেছিলেন। তাঁর বাবা ইয়েসুগেই ছিলেন একজন সম্মানীয় যুদ্ধবাজ ও সেনাপতি এবং মা হোয়েলুন ছিলেন ওলখোনুদ বংশের কন্যা। অনেকে মনে করে থাকেন যে চেঙ্গিজের বাবা, তেমুচিন-উগে নামে একজন বন্দীর সহায়তায় তাতারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করেছিলেন। এই তেমুচিন-উগের নামানুসারেই চেঙ্গিজের বাবা তাঁর নবজাতকের নামকরণ করেছিলেন তেমুজিন। চেঙ্গিজের জন্মবৃত্তান্ত নিয়েও নানান কিংবদন্তী প্রচলিত আছে। বলা হয় যখন তিনি জন্মেছিলেন তখন তাঁর হাতে রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। এশীয় লোককাহিনি অনু্যায়ী এই সংকেতের অর্থ হল শিশুটি ভবিষ্যতে বীর যোদ্ধা হবে। অন্য আবার কেউ কেউ দাবি করেন যে চেঙ্গিজের মা হোয়েলুন আলোক রশ্মি দ্বারা গর্ভধারণ করেছিলেন, যা সন্তানের ভাগ্য নির্ণায়ক ছিল। এই কিংবদন্তির মধ্যে পৌরাণিক পুরুষ অ্যালান গুয়ার ছায়া লক্ষ্য করা যায়। চেঙ্গিজের পরে আরও তিনটি ছেলে এবং কন্যার জন্ম দেন হোয়েলুন। ইয়েসুগেই-এর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী সোচিগেলের গর্ভে দুই পুত্র জন্মেছিল, হিসেব মতো তাঁরা ছিলেন তেমুজিন অর্থাৎ চেঙ্গিজের দুই সৎ ভাই। চেঙ্গিজ এবং তাঁর ভাইবোনেরা ওনন নদীর তীরে বেড়ে উঠেছিলেন। ছোটবেলা থেকেই তাঁরা ঘোড়ায় চড়তে, তীর ধনুক চালাতে শিখে গিয়েছিলেন ইয়েসুগেই-এর তত্ত্বাবধানেই।
তেমুজিনের বয়স যখন আট বছর, তখন ইয়েসুগেই তাঁকে একজন উপযুক্ত মেয়ের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন। চেঙ্গিজকে তাঁর বাবা নিয়ে যান ওঙ্গিরাত গোষ্ঠীর মানুষদের চারণভূমিতে। এই ওঙ্গিরাত গোষ্ঠীতেই চেঙ্গিজের মা হোয়েলুনের জন্ম হয়েছিল। সেখানে ওঙ্গিরাত সর্দার দেই সেচেনের কন্যা বোর্টের সঙ্গে তেমুজিন অর্থাৎ চেঙ্গিজের বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়। বিবাহের শর্ত হিসেবে দেই সেচেন বলেন চেঙ্গিজের বয়স বারো বছর না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে দেই সেচেনের বাড়িতে থেকে তাঁর সেবা করতে হবে। চুক্তি সম্পন্ন করে বাড়ি ফেরার পথে ইয়েসুগেই তাতারদের আতিথেয়তা গ্রহণ করে নিজের সর্বনাশ ডেকে আনেন। তাতাররা তাদের পুরোনো শত্রুকে চিনতে ভুল করেনি। ইয়েসুগেইয়ের খাবারে তারা বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। এরপরই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করেন ইয়েসুগেই। অতিকষ্টে বাড়ি ফেরেন তিনি। মৃত্যু শয্যায় শুয়ে ইয়েসুগেই মুংলিগ নামের একজনকে অনুরোধ করেছিলেন ওঙ্গিরাত সর্দারের মেয়ের সাথে তেমুজিন অর্থাৎ চেঙ্গিজের বিয়ে না দিতে। এরপরেই মারা যান তিনি৷ ইয়েসুগেই-এর মৃত্যুর পর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তাইচিউট পরিবারের নেতৃত্বে হোয়েলুন এবং তাঁর গোটা পরিবারকেই ঘরছাড়া করা হয়েছিল। কিছু সময়ের জন্য ছোট পরিবারটি চরম দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করে। সাধারণ যাযাবরের খাবারের পরিবর্তে শিকড় এবং মাছ খেয়ে দিন কাটতে থাকে তাদের।
পরবর্তীকালে এই তাইচিউটেদের হাতেই চেঙ্গিজ বন্দী হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে হত্যা করার পরিবর্তে তাঁর গলায় কাঠের গলাবন্ধ পরিয়ে রাখা হয়েছিল। এক রাতে যখন তারা ভোজন করছিল, তেমুজিন লক্ষ্য করেন তাঁকে অসুরক্ষিতভাবে বন্দী করে রাখা হয়েছে। একটি আঘাতে সেই গলাবন্ধ থেকে নিষ্কৃতি লাভ করে তিনি পালিয়ে যান সেখান থেকে। সারারাত তাইচিউটরা খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পায়নি।
চেঙ্গিজসহ তাঁর ভাইয়েরাও বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পিতার উত্তরাধিকার নিয়ে শুরু হয় ঝামেলা। চেঙ্গিজ এবং তাঁর সৎ ভাই বেহতার দুজনেই তাঁর পিতার উত্তরাধিকারের দাবি তুলেছিলেন জোরালোভাবে। শিকারের লুণ্ঠনের ভাগাভাগি নিয়ে নিয়মিত বিরোধের কারণে তাঁদের মধ্যে কলহ তীব্রতর হয়ে উঠলে, তেমুজিন এবং তাঁর ছোট ভাই কাসার বেহতারকে অতর্কিতে আক্রমণ করে হত্যা করে। এই সময়ে, চেঙ্গিজ অন্য এক অভিজাত গোষ্ঠী প্রধানের ছেলে জামুখার সাথে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন।
পনেরো বছর বয়সে চেঙ্গিজ ওঙ্গিরাত উপজাতিদের ভূমিতে ফিরে যান এবং তাদের সর্দারের কন্যা বোর্টেকে বিবাহ করেন। এই বিবাহের নেপথ্যে একটি উপজাতীয় জোট গঠনের পরিকল্পনাও সক্রিয় ছিল। বিবাহের পর একজন পৃষ্ঠপোষকের খোঁজে চেঙ্গিজ কেরাইত উপজাতির খান তোঘরুলের কাছে যান। এই তোঘরুলের সঙ্গে একদা ইয়েসুগেই-এর যুদ্ধ হয়েছিল এবং শেষমেশ তাঁরা আন্দা সন্ধিতে আবদ্ধ হয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে ওঠেন। তেমুজিন এবং তোঘরুলের ঘনিষ্ঠতা বেড়ে যায় অবিলম্বেই। এর পরপরই, ইয়েসুগেই-এর হোয়েলুন অপহরণের (ইয়েসুগেই অপহরণ করে এনে হোয়েলুনকে বিবাহ করেছিলেন) প্রতিশোধ নিতে, প্রায় তিনশো জন মেরকিট চেঙ্গিজের শিবিরে অভিযান চালায়। চেঙ্গিজ এবং তাঁর ভাইয়েরা বুরখান খালদুনে পালিয়ে গেলেও চেঙ্গিজের স্ত্রী বোর্টেকে অপহরণ করে মেরকিটরা। চেঙ্গিজ তখন তোঘরুল ও জামুখার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য। অবশেষে সদ্য গর্ভবতী বোর্টেকে সফলভাবে উদ্ধার করেন তাঁরা। এরপর একেরপর এক উপজাতিকে নিজের ছত্রছায়ায় আনতে শুরু করেন চেঙ্গিজ।
১১৯৬ সালের গ্রীষ্মের শুরুতে তিনি তাতারদের বিরুদ্ধে জিনদের সাথে একটি যৌথ অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জিনরা তাঁকে সম্মানসূচক চা-উত কুরি উপাধি প্রদান করে । প্রায় একই সময়ে চেঙ্গিজ কেরিয়েতের আধিপত্য পুনরুদ্ধার করতে তোঘরুলকে সহায়তা করেন। চেঙ্গিজ অবাধ্য জুরকিন উপজাতিকেও দমন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১২০৬ সাল নাগাদ বিভিন্ন কূটনৈতিক চেষ্টার দ্বারা মেরকিট, নাইমান, মোঙ্গল, উইঘুর, কেরাইত, তাতার সহ বিভিন্ন উপজাতিদের একত্রিত করতে সক্ষম হন চেঙ্গিজ। এদের নিয়ে গঠন করেন কুরুলতাই যা আসলে মঙ্গোলীয় পরিষদ। চেঙ্গিজ ক্রমে এই অধুনা একত্রিত উপজাতিদের ‘খান’ অর্থাৎ ‘প্রধান’ হিসাবে স্বীকৃত হন এবং চেঙ্গিজ খান উপাধি গ্রহণ করেন। এই মোঙ্গল গোষ্ঠী নিয়ে এরপর শুরু হয় চেঙ্গিজ খানের বিশ্বজয়ের জন্য যাত্রা।
১২০৬ সালে চেঙ্গিস খানের সাম্রাজ্য পশ্চিমে পশ্চিম জিয়া রাজবংশের সীমানা অবধি ছিল। এর পূর্ব এবং দক্ষিণে ছিল জিন রাজবংশ, যারা সেই সময়ে মোঙ্গলীয় উপজাতিদের ঐতিহ্যবাহী অধিপতি হওয়ার পাশাপাশি উত্তর চীন শাসন করছিল। চেঙ্গিজ তাঁর জনগণ এবং রাজ্যকে পশ্চিম জিয়া বা শি জিয়ার সাথে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করার জন্য সংগঠিত করেছিলেন। ১২০৯ সাল নাগাদ সেখানকার সম্রাট চেঙ্গিজকে প্রভু হিসেবে স্বীকার করে।
১২১১ সালে চেঙ্গিজ নুজেনকে (জিন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা) সম্পূর্ণরূপে তাঁর আধিপত্যের অধীনে আনার জন্য প্রস্তুত হন। যুদ্ধে জিন সেনাপতির একটি ভুলের ফলশ্রুতিতে মোঙ্গলরা হাজার হাজার জিন সৈন্যকে হত্যা করে। মোঙ্গল সেনাবাহিনী ১২১৩ সালে চীনের মহাপ্রাচীর অতিক্রম করে এবং ১২১৫ সালে চেঙ্গিজ জিন রাজধানী ইয়ানজিং (পরে বেইজিং নামে পরিচিত) অবরোধ করে। কারা-খিতান বিজয়ের পরে, ১২১৮ সাল নাগাদ মোঙ্গল সাম্রাজ্য পশ্চিমে বলখাশ হ্রদ পর্যন্ত প্রসারিত হয় এবং এটি খাওয়ারেজমিয়া সাম্রাজ্যকে অধিগ্রহণ করে। এই খাওয়ারেজমিয়া একটি মুসলিম রাষ্ট্র যা পশ্চিমে কাস্পিয়ান সাগর এবং দক্ষিণে পারস্য উপসাগর ও আরব সাগর পর্যন্ত পৌঁছেছিল। খাওয়ারেজমিয়ার সাথে আনুষ্ঠানিকভাবে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি পাঁচশো দূত সমন্বিত একটি দল পাঠান চেঙ্গিজ। কিন্তু সেই দলকে খাওয়ারেজমিয়ার শাসক চেঙ্গিজের একটি ষড়যন্ত্র সন্দেহে আক্রমণ করে এবং সেই দলের সকল সদস্যদের হত্যাও করে। পরে চেঙ্গিজ দ্বিতীয় একটি দূতের দল পাঠান সরাসরি শাহের সঙ্গে দেখা করতে। শাহও একজন ছাড়া সকলের শিরশ্ছেদ করলে চেঙ্গিজ পাল্টা আক্রমণ করেন। শেষ পর্যন্ত শাহ পালিয়ে যান এবং ১২২০ সালের মধ্যে খাওয়ারেজমিয়া সাম্রাজ্য নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
খাওয়ারেজমিয়া জয়ের পর মোঙ্গল বাহিনী দুটি দলে ভাগ হয়ে যায়। চেঙ্গিজ নিজে আফগানিস্তান এবং উত্তর ভারতের মধ্য দিয়ে অভিযানে একটি বিভাগের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। অন্যদল ককেশাস ও রাশিয়ার মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়। চেঙ্গিজ খান পারস্য এবং আর্মেনিয়ায় তাঁর বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। মোঙ্গলরা এরপর জর্জিয়া ধ্বংস করে এবং ১২২৩ সালে কালকা নদীর যুদ্ধে বৃহত্তর কিভান বাহিনীকেও পরাজিত করে।
এরপর চেঙ্গিজের বাহিনী কাস্পিয়ান সাগর ঘিরে থাকা তাঁদের শত্রুদের পরাজিত করে এবং আধুনিক আফগানিস্তান, হাঙ্গেরি এবং ইউরোপের বেশিরভাগ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এটি মোঙ্গলীয় সাম্রাজ্যের ইতিহাসে একটি অতুলনীয় বিজয় হয়ে ওঠে।
অন্যদিকে যখন চেঙ্গিজ পারস্য অভিযানে ব্যস্ত ছিল তখন টাঙ্গুত (পশ্চিম জিয়া) এবং জিন মোঙ্গলদের বিরুদ্ধে পুনরায় জোট গঠন করে। ১২২৬ সালে চেঙ্গিজ টাঙ্গুত আক্রমণ করেন। ১২২৭ সালে চেঙ্গিজ নিং হিয়ার টাঙ্গুত রাজধানী আক্রমকরে ধ্বংস করেন এবং ফেব্রুয়ারিতে লিন্টিয়াও-ফু, মার্চ মাসে জিনিং প্রদেশ ও জিন্দু-ফু এবং এপ্রিলে দেশুন প্রদেশ দখল করে অগ্রসর হয়। টাঙ্গুতরা ১২২৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। চেঙ্গিজ খানের মৃত্যুর সময় মোঙ্গল সাম্রাজ্য ক্যাস্পিয়ান সাগর থেকে জাপান সাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
মোঙ্গল সাম্রাজ্য চেঙ্গিজ খানের তৈরি ইয়াসা কোড নামক একটি সামরিক ও বেসামরিক কোড দ্বারা শাসিত ছিল। চেঙ্গিজ খান মহান ইয়াসার অধীনে এমন একটি নাগরিক রাষ্ট্র তৈরি করার চেষ্টা করেছিলেন যা নারীসহ সকল ব্যক্তির আইনি সমতা প্রতিষ্ঠা করবে।চেঙ্গিজ কঠোরভাবে শৃঙ্খলা বজায় রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর শাসনে ছোটখাটো নিয়ম লঙ্ঘনের জন্যও কঠিন শাস্তি মিলত। চেঙ্গিজ খান তাঁর সেনাপতিদের কাছ থেকে অটল আনুগত্য আশা করেছিলেন এবং সেনা প্রধানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করেছিলেন। চেঙ্গিজ খানের সামরিক সংগঠনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল যোগাযোগ ও সরবরাহ পথ বা ইয়াম, যা পূর্ববর্তী চীনা মডেল থেকে নেওয়া হয়েছিল। চেঙ্গিজ খান সামরিক গোয়েন্দাদের তথ্য সংগ্রহ এবং যোগাযোগকে ত্বরান্বিত করার জন্য এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির ওপর বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন।
ঐতিহাসিকেরা মনে করেন, ১২২৭ সালের ২৫ আগস্ট টাঙ্গুতদের পশ্চিম জিয়া সাম্রাজ্য আক্রমণের সময় চেঙ্গিজ খানের মৃত্যু হয়। আবার অনেকে তাঁর মৃত্যুর তারিখ হিসেবে ১৮ আগস্ট মনে করেন। তবে মৃত্যুর কারণ অনিশ্চিত। অনেকে অনুমান করেন যে তিনি বার্ধক্য এবং শারীরিক ক্লান্তির কারণে ঘোড়া থেকে পড়ে গিয়েছিলেন। কেউ বলেন টাঙ্গুতরাই তাঁকে হত্যা করে। আবার একটি মত অনুযায়ী এক টাঙ্গুত রাজকুমারী ধর্ষণের প্রতিরোধ করার জন্য এবং তাঁর সাম্রাজ্যবাসীর হয়ে প্রতিশোধ নিতেই এক গুপ্ত ছুরি দিয়ে আঘাত করে চেঙ্গিজকে হত্যা করেছিলেন। তাঁর মৃতদেহ সম্ভবত তাঁর নিজের জন্মভূমিতে ওনন নদীর কাছাকাছি কোথাও সমাহিত করা হয়েছিল।
=সংগৃহীত