বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
টেকনোলজি, ইন্টারনেট আর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই-এর প্রগতির নতুন দৃষ্টান্ত চ্যাটজিপিটি। এটা টেকনিক্যালি একটা এআই চ্যাটবট। তবে এতদিন চ্যাটবট বলতে আমাদের যা ধারণা ছিল এটা তার থেকে অনেক বেশি কিছু।
চ্যাটবট বলতে বোঝায় একধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম যেগুলো আমাদের সাথে মানুষের মতো চ্যাট করতে পারে, আমাদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারে এবং আমাদের কিছু কিছু সমস্যার সমাধান দিতে পারে। সাধারণত এগুলো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পপ আপ হিসাবে, ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেঞ্জার এবং ই-কমার্স বা অন্যান্য কিছু অ্যাপে বিশেষ কিছু তথ্য সরবরাহ করতে বা বেসিক কাস্টমার সার্ভিস দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে সাধারণত এগুলোর ক্ষমতা খুবই সীমিত হয় এবং বিশেষ ক্ষেত্রের বাইরে জটিল কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে এগুলো সক্ষম হয় না।
কিন্তু চ্যাটজিপিটি একদমই আলাদা। এর ক্ষমতা আর পাঁচটা সাধারণ চ্যাটবটের থেকে অনেক বেশি। গুগলে যেকোনো প্রশ্ন করলে গুগল সেই প্রশ্নের উত্তর সম্বলিত বিবিধ ওয়েব পেজের লিঙ্কের একটা তালিকা আমাদের সামনে এনে দেয়, এবং সাধারণত আমাদের যা দরকার তা সেই তালিকার ওয়েবপেজে গিয়েই পাওয়া যায়। কিন্তু এই চ্যাটজিপিটি যেকোনো প্রশ্নের উত্তর খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে সরাসরি আমাদের সামনে হাজির করে। এছাড়া সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার পাশাপাশি এর আরও অনেক গুন আছে। যেমন যেকোনো বিষয়ে প্রবন্ধ, সারসংক্ষেপ, গল্প-গান-কবিতা, কম্পিউটার কোড, গাণিতিক সমাধান, চিঠি, অনুবাদ ইত্যাদি বহুবিধ বিষয়ে লিখিত জবাব দিতে এটা বেশ পারদর্শী।
আর চ্যাটজিপিটির এসব বিবিধ ক্ষমতাকে ব্যবহার করে কিভাবে বিবিধ আয়ের রাস্তা খোলা যেতে পারে তা নিয়েই এই নিবন্ধে আলোচনা করব।
বিবিধ বিষয়ের উপর আর্টিকেল জেনারেট করে সেটাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করে আয়
চ্যাটজিপিটি একটা টেক্সট বেসড চ্যাটবট। এখানে সবকিছু রেসপন্স পাওয়া যায় লিখিত আকারে। কোনো বিষয়ের উপর এর দেওয়া বিস্তারিত উত্তর বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিখিত কনটেন্টের আধার হতে পারে। এখানে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তরে পাওয়া প্রতিক্রিয়ার ছোটোখাটো ত্রুটিগুলো ঠিক করে এবং দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করার পর সেটার উপর ভিত্তি করে খুব সহজেই নিজস্ব অনন্য আর্টিকেল বানিয়ে নেওয়া সম্ভব। অতঃপর সেই আর্টিকেল নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ব্যবহার করে আয় করা যায়।
নিজস্ব ব্লগে
যেকোনো বিষয়ের উপর নিজস্ব ব্লগে বিবিধ আর্টিকেলের ইনস্পিরেশন এখান থেকেই পাওয়া যেতে পারে। আর্টিকেলের এক একটা টপিক নির্ধারণ করে তার মধ্যে কি কি সাব-টপিক থাকা উচিত এবং তার বিবরণী কেমন হবে, এর সাহায্যে সে বিষয়ে সম্পূর্ণ একটা ধারণা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি এবং খুব সহজেই প্রচুর আর্টিকেল বানিয়ে ফেলা সম্ভব। এছাড়া আর্টিকেলকে এসইও ফ্রেন্ডলি করতেও এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। আর্টিকেল যত এসইও ফ্রেন্ডলি হয়, সার্চ রেজাল্টের তত উপরের দিকে উঠতে থাকে এবং আয় হওয়ার সম্ভাবনা তত বাড়ে।
নিজের ব্লগে আর্টিকেল লেখা ছাড়াও আর্টিকেল লেখার জন্য বিবিধ বিষয়ের আইডিয়া পেতেও এর সাহায্য নেওয়া যায়।
তৈরি আর্টিকেল ব্লগে পোস্ট করার পর সেখানে বিভিন্ন অ্যাড নেটওয়ার্কের অ্যাড দেখিয়ে আয় করা যায়।
অন্যের ব্লগে বা ওয়েবসাইটে
অনেক ব্লগ বা ওয়েবসাইট অন্য ফ্রিল্যান্সার রাইটারদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে আর্টিকেল লিখিয়ে নিজেদের ব্লগে পোস্ট করে। সেই সমস্ত ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আর্টিকেল সাবমিট করেও আয় করা যেতে পারে।
এমন ধরনেরই একটা ওয়েবসাইট হল লিস্টভারস.কম। এখান থেকে এক একটা আর্টিকেলের জন্য ৮০০০টাকা পর্যন্ত কামানো যেতে পারে।
প্রশ্ন-উত্তরের সাইটে
কুওরা-র মতো প্রশ্ন উত্তরের সাইটে বিবিধ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য চ্যাটজিপিটি থেকে পাওয়া উত্তর কিছু পরিবর্তনের পর পোস্ট করে এবং তারপর মনেটাইজেশন অপশনে গিয়ে মনেটাইজ করে সেখান থেকেও একটা ইনকামের রাস্তা খোলা যেতে পারে।
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এ
অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং-এর জন্য মাধ্যম হিসেবে যেকোনো সোশ্যাল মিডিয়া বা নিজের ব্লগকে নির্বাচন করা যেতেই পারে। কিন্তু মাধ্যম যাই হোক, আর যাকিছু প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের জন্যই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা হোক কেন ভালোভাবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে হলে এক্ষেত্রেও লিংক শেয়ারের আগে একটা আর্টিকেল বা বিবরণীর প্রয়োজন তো আপনার পড়বেই।
আর তখনই সাহায্যের জন্য হাত বাড়িয়ে দেবে এই চ্যাটজিপিটি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রোমোশনে
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের যেকোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের প্রমোশন বা প্রচারের জন্য অ্যাড কপি বা অন্য যেকোনো কিছু লিখতে মানুষের বদলে এই চ্যাটজিপিটির সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে নতুন কাস্টমার খোঁজার মাধ্যমে আয় বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটার হিসাবে অন্যের জন্য কাজ করেও তাদেরকে চার্জ করার মাধ্যমে আয় করা যেতে পারে।
ই-বুক লিখে
আজকের দিনে অ্যামাজন কিন্ডেল ডাইরেক্ট পাবলিশিং বা অ্যামাজন কেডিপির মাধ্যমে খুব সহজেই ই-বুক পাবলিশ করে আয় করা যায়। আর যেকোনো বিষয়ে বই লেখার জন্য রিসার্চ করতে এবং পাতার পর পাতা কনটেন্ট লিখতে পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মত চ্যাটজিপিটির সাহায্য নিয়ে খুব সহজেই করা যেতে পারে।
প্রোডাক্ট বা সার্ভিসের বর্ণনা লেখার ক্ষেত্রে
অনলাইনে যে কোনো ওয়েবসাইটে কোনো প্রোডাক্ট বা সার্ভিস বিক্রি করার জন্য সেটার একটা সুন্দর তথ্যবহুল এবং এসইও অপটিমাইজড বর্ণনা দেওয়া প্রয়োজন। বর্ণনা ভালো হলে তবেই কাস্টমার সেটা সম্পর্কে ভালো করে জানতে পারে এবং সেটা কিনতে আগ্রহী হয়। এ ছাড়া সার্চ ইঞ্জিনে ভালোভাবে র্যাঙ্ক করার জন্যও এই বর্ণনাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
চ্যাটজিপিটির সাহায্যে খুব সহজে এবং খুবই কার্যকরী এ ধরনের বর্ণনা লিখে এসব ক্ষেত্রে সময় বাঁচানো এবং আয় বাড়ানো যেতে পারে।
ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ইত্যাদি প্লাটফর্মে আপলোডের জন্য ভিডিওর স্ক্রিপ্ট তৈরি করতে এই চ্যাটজিপিটি দারুন ভাবে সাহায্য করতে পারে। আর স্ক্রিপ্ট রেডি হয়ে গেলে তারপর ভিডিও বানানো টা অনেক সহজ হয়ে যায়।
আবার কোনোরকম ভিডিও রেকর্ডিং ছাড়াও সিনথেসিয়ার মত এআই ওয়েবসাইটে সেই স্ক্রিপ্ট ব্যবহার করে সরাসরি এআই ভিডিও বানিয়ে নেওয়া যেতে পারে।
ভিডিও বানানো হয়ে গেলে সেই ভিডিও ইউটিউব বা ফেসবুকে আপলোড করে এবং মনিটাইজেশন অন করে আয় করা যায়। এছাড়া তৈরি করা ভিডিও নিজের এবং অন্যের হয়ে প্রমোশনের জন্য ব্যবহার করেও আয় করা যায়।
ফ্রিল্যান্সিং-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার
ফাইবার, আপওয়ার্ক ইত্যাদি ওয়েবসাইট থেকে আজকের দিনে ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যমে অনেকেই রুজি রুটি কামাচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করে আয় করা যেতে পারে বা আয় বাড়ানো যেতে পারে। যেমন,
বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস দিয়ে
রিসার্চ নির্ভর, অনুবাদ বা লেখার কাজ করতে হয়, এমনকি কোডিং সম্পর্কিত যেকোনো গিগ বা সার্ভিস এর জন্য চ্যাটজিপিটির ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে কম সময় ব্যয় করে অনেক বেশি সার্ভিস দিয়ে অনেক বেশি ইনকাম করা সম্ভব হবে।
বেশি অর্ডার পাওয়ার জন্য বিভিন্নভাবে ব্যবহার করে
ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য এবং বেশি অর্ডার পাওয়ার জন্য সুন্দর, উপযুক্ত এবং নির্ভুল গিগ বিবরণী, ইমেইল রেসপন্স, জব বিডিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করে খুব ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।
শেয়ারবাজারে ট্রেডিং-এর স্ট্রাটেজি তৈরি করে আয়
শেয়ার বাজারে ট্রেড করে আয় করার জন্য অটোমেটেড ট্রেডিং স্ট্রাটেজি তৈরি করতে চ্যাটজিপিটি ব্যবহার করা যায়।
টুল তৈরি করে আয়
আপনার যদি আগে থেকেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এর কিছু অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলে চ্যাটজিপিটি মডেল ব্যবহার করে স্পেশালাইজড চ্যাটবট অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে সেই অ্যাপ্লিকেশন বিক্রি করার মাধ্যমে আয় করা যেতে পারে।
শেষ করার আগে…
শেষ করার আগে একটাই কথা বলতে চাইবো চ্যাটজিপিটি সাহায্যকারী হিসেবে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে দিচ্ছে মানে এই নয় যে এটাকে ব্যবহার করে আয় করাটা এতই সহজ হবে। যেকোনো সৎ পথে আয় করাই কঠিন। এখানে আলোচিত পথ গুলোতে আয় করা সম্ভব, কিন্তু সেজন্য অনেক কিছু শিখতে হবে অনেকটা ধৈর্য লাগবে এবং লেগে থাকতে হবে।